Skip to main content

ব্যামো...

তোমার চোখ সাঁতরে পাড় খুঁজছি
পা কামড়ালো তোমার হৃদি কুমীরে
তবুও পার পেতাম হয়ত তো
চুমুর ঘুর্ণী ডোবালো ঘোর তিমিরে
...

তক্ক বনাম তর্ক

কথায় বলে – বাদ-বিতণ্ডা। কথা দুটো একসাথেই উচ্চারিত হলেও তাদের অর্থের ফারাক বিস্তর। বাদ – তত্ত্ব নিরূপণের জন্য তর্ক। বিতণ্ডা – স্বমত প্রতিষ্ঠিত হোক চাই নাই হোক, পরমত খণ্ডনের জন্যেই তক্ক। তবে এইভাবে বলি, এক হল গিয়ে তর্ক আর এক হল গিয়ে তক্ক।
...

ফিরে এসো

এটা বর্ষার মেঘ নয়
                  জানি

তবু ছায়া তো আছে বলো
        শীতল ছায়া
...

অসংজ্ঞ


চেয়েছিলাম বনানী বীথিকা
হল কই?
একটা গাছের সব কটা পাতা গোনার ধৈর্য নেই
তুমি আমায় জীবনের মানে জিজ্ঞাসা করো? 
শরীর মনের স্রোতে জাল ফেলেছি মাঝে মাঝে
পাঁক উঠেছে, শূন্য খোল ঝিনুক উঠেছে
  কখনও কয়েকটা সাধারণ মুক্তোও উঠেছে হয় তো
আবার ভাসিয়ে দিয়েছি স্রোতে,

ফুল চুরি

        মাটির তলায় ঘর বেঁধে কিছু মানুষের সারা জীবন কেটে যায়। বাইরের আলো-বাতাস কিছুই সে ঘরে ঢোকে না। ওনার নাম কি? ধরে নিই লতা। দেখতে ভাল নয়। তাই কুলতা?

বলি কি করে?


এখনও সাদা জল ছাড়া তৃষ্ণা মেটে না
সাদা ভাত ছাড়া খিদে মেটে না
ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন না জাগলে ঘুম হয় না
নিজেকে সম্পূর্ণ যান্ত্রিক বলি কি করে?

এখনও খোলা মাঠের হাওয়ায় 
    শুকনো ঘাস বুনোফুলের গন্ধে চোখ মুদি
নিজেকে সম্পূর্ণ শহুরেই বা বলি কি করে?

ভালোবাসা যদি নখের মত বেড়ে যায়, মাঝেমধ্যে কেটে ফেলাই ভালো


ভালোবাসা যদি নখের মত বেড়ে যায়, মাঝেমধ্যে কেটে ফেলাই ভালো। নইলে ওতে অন্যকে তো বটেই, নিজেও ক্ষত-বিক্ষত হতে হয়। নখে রঙ করলে কি আর ধার কমে? তার চাইতে নখ-কর্তকের সাহায্যেই চলাফেরা, ভালোবাসা সামলে-সুমলে রাখা ভালো। মেসেঞ্জারের প্রেম আর সংসারের বাজেট সামলানো প্রেমের মেলা পার্থক্য, নয় কি?

দমকা হাওয়া

সেই দমকা হাওয়াটা কই? সেই দমকা হাওয়াকে চাই। তার নিজের কিছু নেই - না ভার, না দায়, না শোক, না ক্ষোভ। সে আসবে, বিনা আমন্ত্রণেই আসবে। সিংহদুয়ার খোলা না পেলে ঢুকবে খিড়কীর দরজা দিয়ে। ঘরের গুমোট হাওয়াকে বলবে, চল। দরজা জানলাগুলো কাঁপতে কাঁপতে খুলে যাবে, খুলতে না চাইলে ভেঙে যাবে। আমি হঠাৎ দেখব ভাঙা জানলার বাইরে সমুদ্র। যার গর্জন আমি আগে শুনেছি - ঘুমে। ভাঙা পাল্লাটা থরথর করে কাঁপছে ভয়ে, আত্মগ্লানিতে। আমার চোখ-মুখ নোনতা হাওয়ায় চটচটে হয়ে উঠছে। আমি দরজাটায় হাত দিতেই দরজাটা বালির মত ঝুরঝুর করে পড়ে গেল, যেন কত বাধ্য সে আজ আমার। 
...

বাস্তবিক


বাস্তবিক দেরি হয়ে যায়নি
বাস্তবিক অম্লান বদনে কুয়াশায় হাঁটি
বাস্তবিক শ্যাওলা জমা নোঙর অভ্যাস এখন
বাস্তবিক ঈর্ষা আচ্ছন্ন কাঁটাঝোপ চারদিকে
বাস্তবিক সুখে আছি 
    কবিতারা পরিযায়ী পাখি 
বাস্তবিক অবিনশ্বর আত্মা আমাদের

চেতনা

ক্ষণভঙ্গুর চেতনা অন্ধকারের তীরে
               একা
                          শ্রী-হত

Savita law

তুমি সুস্নাত অভী দীপ্ত তেজে বাইরে এসো
হও প্রাচীন বল্কলভার মুক্ত
       অনাবৃত অসংস্কৃত
নিশাত দৃষ্টিতে ছিন্ন হোক মাটি
   আকাশে অভিদ্যোতনা ঘোষণা করুক 

তুমি যদি ছুঁয়ে থাকো

তুমি যদি ছুঁয়ে থাকো
    হাতের সবকটা রেখা 
     তোমার গন্তব্যের সাথে জুড়ে দিতে পারি

নজরুল - প্রাসঙ্গিকতা - কিছুকথা

আমার ছোটোবেলায় যখন ক্যাসেটের দোকানে যেতাম তখন ক্যাসেটের সারিতে কয়েকটা নজরুলগীতির ক্যাসেট থাকত – পূরবী দত্ত, ফিরোজা বেগম, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, ইন্দ্রাণী সেন, ড: অঞ্জলি মুখোপাধ্যায় ইত্যাদি। কিন্তু আজ যখন সিডির দোকানে যাই সেই অর্থে নজরুলগীতির সিডি প্রায় চোখেই পড়ে না।

শালুক

ঈশ্বর বড় একা। সারাটা আকাশ গেরুয়া রঙ করে বসেছিলেন সূর্যাস্তের পর গঙ্গায় পা ডুবিয়ে। বাতাস পঞ্চপ্রদীপের শিখার মত ঈশ্বরকে ঘুরে ঘুরে আরতি করছিল। ঈশ্বর গম্ভীর। গঙ্গার জলের কুলকুল শব্দে ঘন্টার আওয়াজ। ঈশ্বর অন্যমনস্ক। 

প্রার্থনা


টব আছে
মাটি আছে
চারাগাছও আছে

মনে সাধ
  চারাগাছটা হোক মহীরুহ
মনে শঙ্কা
  সে মহীরুহ চিড় ধরাবে টবের
  আমার বাগান ছেড়ে হবে বনের

চারাগাছ, তুমি আমারই থেকো
মহীরুহ, আমিই তোমারই হলাম

রাত


রাত দশটা আঙুল দিয়ে বুকে আঁচড় কাটে
চিড়বিড় করে ওঠে পাঁজরগুলো

একটা আধমরা মথের মত কিছু
প্রবল আক্রোশে ডান ঝাপটায় 
   ফড়ফড় ফড়ফড় করে

গলায় জল ঢালি
  ভাবি যদি বুক অবধি নামে,
জল নামতে নামতে শুকিয়ে যায়

বিষে অমৃতের বিন্দু

        সংসারে আশ্রিত মানুষের হাতে সংসারের ভার দিলে যে কি অনর্থ হয় তা বুঝতে বিপুলের কয়েক বছর লেগে গেল। বিপুল যেদিন প্রথম চাকরিতে জয়েন করতে গেল সেদিন সারারাত ট্রেনে যেতে যেতে একটাই কথা তার মাথায় ঘুরতে লাগল, তার মায়ের মৃত্যু আর তার দূর সম্পর্কের পিসিমার কথা। সারাটা ট্রে

আকাঙ্ক্ষা

আমার আনত আকাঙ্ক্ষা
তোমার স্পর্শ-মাধুরীর মাধুকরী চেয়ে ফেরে

সে ভূমি লুণ্ঠিত স্নেহ
শুকতারার বন্দনাগানে শিশিরমথিত যে রে

(Samiranদার অনুপম দৃষ্টিকোণ, প্রণাম জানবেন দাদা।)

তুমি আমার বিদ্বিষ্ট নও


তুমি আমার বিদ্বিষ্ট নও
তুমি বজ্র বিদারিত
    ক্লিষ্ট শূন্য গহ্বর।
আমার অভীষ্টের পথ বিদ্বিষরহিত, 
অস্তমিত সূর্য 
     তোমার রুদ্ধ চেতনার ভাষান্তর

তুমি কি জানো?

আমার অবকাশযাপন নিঃসংজ্ঞ
তুমি কি জানো?

দ্বিধান্বিত ভাবনার নিঃসরণ
একলা আকাশে 
      নিঃশব্দ পদচারণ

তুমি কোথায়?
 

শব্দ

শব্দ মারা যায়
কখন মারা গেল
     কেউ টের পায় না
শূন্য শামুকের খোলকের মত পড়ে থাকে
          একা - অবদ্য

গ্রহণ

        হাতের কাছে একটা পিস্তল থাকলে হয়ত ভালো হত। মোহান্ত স্নান সেরে মেঝেতে কৃষ্ণের বিগ্রহের সামনে চোখ বন্ধ করে বসে। গঙ্গার হাওয়া জানলা দিয়ে ঘরে একটা বাচ্চা ছেলের মত এলোমেলো ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মোহান্তের পিঠের উপর এলিয়ে পড়া সাদা চুলের গুচ্ছ দুলিয়ে দুলিয়ে যাচ্ছে। সারা

তাই তোমার ধর্ম জানি না


আমি শুধু তোমার চোখের মণির দিকে তাকাই
তাই তোমার ধর্ম জানি না
আমি শুধু অন্ধ হয়ে তোমার স্পর্শে মেখে থাকি
তাই তোমার ধর্ম জানি না
আমি শুধু তোমার সুবাস লাগা বাতাসে বেঁচে আছি
তাই তোমার ধর্ম জানি না
 

মণিমার (Pratima Basu) সাথে আমার পরিচয় Sanhita র মাধ্যমে

মণিমার (Pratima Basu) সাথে আমার পরিচয় Sanhita র মাধ্যমে। সংহিতার মাইমা। সংহিতার সাথে পরিচয় ফেসবুকের মাধ্যমে। সংহিতার এক কথায় পরিচয় ভীষণ ভালো, স্নিগ্ধ একজন মানুষ। একটা দাবীহীন বন্ধুত্বের স্পর্শ সব সময় ওর কাছ থেকে পাই। বোলপুরে থাকে, খুব ভালো রবীন্দ্রনাথের গান গায়, ওর গলায় আমার খুবই ভালো লাগে। সহজ সরল গায়কী।

মার্কেজ - উত্তরণ

 বিমর্ষতা একটা কারাগার। বিষন্নতা একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। এর বাইরে একটা বোধ আছে। শারীরিক কিম্বা অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যেই মানুষ বিষন্ন বা বিমর্ষ হয় - তাও কি একটা সার্বজনীন মতবাদ বা সিদ্ধান্ত বলা চলে, তা তো নয়। সংগ্রাম আর বিষন্নতা একই সাথে চলে। কারোর ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী তাদের প্রাবল্য বদলে বদলে যায়। যে মানুষটা প্রতিদিন মৃত্যুর কথা ভাবে, সব কিছুকে নঞর্থক দৃষ্টিতে দেখে, মোটকথা অত্যন্ত বিষন্ন – সে-

তোমার ঠিকানা আছে

তোমার ঠিকানা আছে, বিশ্বাস করি না
অকারণ যন্ত্রণারা ভাষার সান্ত্বনা পায় না
অন্যমনস্কতাই জীবন
শুধু তোমার চোখেই জীবন সরাসরি তাকায় না

অবিরাম

 অনিকেতবাবু ঝাঁট দিতে দিতে শ্যামাসঙ্গীত গাইছেন। ব্যাঙ্কে ক্লার্ক ছিলেন। বয়েস আটাত্তর। শক্ত-সমর্থ চেহারা। পাড়ার কচি-কাঁচাদের সাথে বেশ বন্ধুত্ব, বলেন, আমি খাঁটি খেয়েছি তাই এ্যাদ্দিন এইভাবে চালিয়ে যাচ্ছি, তোরা পারবি নাকি?

ইছামতী

ইছামতী, তোমায় আমি আজ দেখলাম চোখের বাইরে
   ঠাকুমার চোখে দেখেছি তো সেই জ্ঞান না হতেই
         ঘর ভাঙানো কান্না গানে

দুটো মৃত্যু - মার্কেজ

দুটো মৃত্যু। একজন সম্রাট, আরেকজন (The General in His Labyrinth) এক অখ্যাত যুবক (Chronicle of a Death Foretold)। প্রথমটা স্বাভাবিক মৃত্যু, দ্বিতীয়টা হত্যা। একটা উপন্যাস, আরেকটা প্রায় উপন্যাস বা বড় গল্প। প্রথমটার রচনাকাল ১৯৮৯, আর দ্বিতীয়টার রচনাকাল ১৯৮১। একটার পটভূমিকা রাজনীতি, আরেকটার পটভূমিকা সমাজ। খানিক গল্পটা বলে নিই আগে।

চুমু

 বুড়োটা রিকশা চালিয়ে যখন রাস্তা দিয়ে যেত, মনে হত, পরের বারের প্যাডেলটা ঘুরাবার জন্য সে বুঝি আর জীবিত থাকবে না। লোকে একান্ত কাউকে না পেলে তবেই ওর রিকশায় উঠত। করুণায় নয়, সময়ের দাম আছে না? অত আস্তে চালালে হয়?

দুঃখ নিজেকে দু-টুকরো করে

দুঃখ নিজেকে দু-টুকরো করে
   এক টুকরো আমার হাতে দিয়ে বলল -
             চেখে দেখো!

আমি চাখতে চাখতে
   বাকি টুকরোটার দিকে তাকিয়ে
        ভুরু কুঁচকে, তিতো আসক্তিতে
 

আমার পৃথিবী

তোমার কপালে যে টিপ
             আমার পৃথিবী

কথাটা সত্যি নয়
আবার মিথ্যাও যে নয়

দীর্ঘশ্বাস

        লোকটা একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলবে বলে একটা বড় শ্বাস নিল। বুকটা এত্তবড় হয়ে গেল যে পাঁজরে আওয়াজ হল কট-কট-কট্টাস করে। ফুসফুসটা এত্তবড় হাঁ করল যে তার আলজিভ পর্যন্ত গীর্জার ঘন্টার মত দুলে উঠল। ট্রাকিয়া, ব্রঙ্কাস, ব্রঙ্কিওল, অ্যালভিওলাই জুড়ে হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। এত্ত জোরে বাতাস ঢুকছিল যে কয়েক যুগ অত বাতাস নেয়নি লোকটা। প্রতিটা কোষ নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিল -

একাকীত্ব

তুমি নির্মল একাকীত্ব চেয়েছিলে

পেলে

ধুলো উড়িয়ে

ধুলো উড়িয়ে, মাটি কাঁপিয়ে তো গেলে 
তোমার ক্ষমতা আছে মানলাম

কিন্তু ধুলো না উড়িয়ে, মাটি না কাঁপিয়ে
          গন্তব্যে পৌঁছাতে পারতে কি?

জানা হল না
 

বাজার

আমার মতো দেখতে কেউ একজন
বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাইরে গেল
খানিক পরে বাজারের ব্যাগ নিয়ে ফিরে এল
                          সে অন্য কেউ

ব্যাগ খুলে দেখলাম
বাজারে নানা সামগ্রীর সাথে রক্ত মাখা একটা পোশাক

তোমার শহরেও ভোর হল

ঝড়ে সব ক'টা রজনীগন্ধা ক্ষেতে শুয়ে পড়ল
এমনই প্রচণ্ড ঝড় হল
পরেরদিন, যেই না সুয্যি উঠে ফুটফুটে সকাল হল
  তারা সব্বাই ধুলো-জল ঝেড়ে 
      হুররে করে, সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ালো

গবেষণা

কোন চিকিৎসকের কাছে না গেছে লোকটা? কেউ সুরাহা দিতে পারেনি। বিদেশেও গেছে, কেউ কেউ বলে। নিন্দুকেরা বলে, উঁ! বিদেশ গেছে না ছাই... সুন্দরবনে গিয়ে সেঁধিয়ে ছিল। সে যাই হোক, লোকটা চেষ্টার অন্ত রাখেনি। তার একটাই সমস্যা – কেন কুড়িটা নখ আর তেত্রিশ হাজার উনপঞ্চাশটা মাথার চুল বেড়ে বেড়ে যাবে প্রতিদিন, প্রতিমাস, প্রতিবছর। সব চিকিৎসকের একটাই কথা – এটাই প্রকৃতির নিয়ম। তারও একটাই কথা – নিয়ম বলেই মানতে হবে?

দড়ি

        সংখ্যায় বিশ্বাসীরা, সংখ্যা বাড়াতে বাড়াতে কোথাও একটা ঠেকলেই বিরক্ত হয়। তখন গোনায় মানুষ বাধা হয়ে এসে পড়লেও সরিয়ে দিতে হয়। সংখ্যায় বিশ্বাসীরা পাগলের মত গুনে চলে, ১.. ১০০.. ১০০০০... ১০০০০০০। সামনে কাউকে সহ্য করতে পারে না। নিজের ছায়াকেও নয়। একটা গল্প বলি।

গভীর রাত

গভীর রাত। বাউল নদীর তীরে একা বসে, একতারার তারে, তর্জনীর আঘাতে ফুলকির মত সুর সৃষ্টি করছিল। 
    এক আকাশ তারা কখনো প্রজাপতির মতো কখনো জোনাকির মতো উড়ে উড়ে আকাশে অক্ষর সৃষ্টি করছিল।
...

ঘাসেরা বড্ড কাঁদে

স্বপ্নের বুনট ছিঁড়ে পড়ল
শিশিরে পা মাড়িয়ে, পা ভিজিয়ে এলো - 
                সে 

বলল, 
  ঘাসেরা বড্ড কাঁদে

ঈর্ষা

    প্রথমঃ

বাঙালির মা

        বাঙালির মা কে? কালী-দূর্গা-সরস্বতী-লক্ষ্মী। তারপর মাঝে হয়েছিল – দেশ – বন্দে মাতরম। এখন? জানে না যেন, নেকু! 

তুমি?

একপেশে মন খারাপ
বড্ড জেদি
বন্ধ দরজা
পাতা পড়ার শব্দেও কানখাড়া

তুমি?

গুনগুন

অনেকেরই রাস্তা পারাপার হতে জেব্রাক্রসিং লাগে
নিদেন পক্ষে কয়েক জোড়া ট্রাফিকপুলিশ
তারপর এর ওর তার হাত ধরে ধরে পার হয়ে যায়
     সিগন্যাল পরখ করতে করতে শ্বাস চেপে

The Autumn of Patriarch

        ঠিক কি ভাবে লিখি বলুন তো? গতকাল থেকে ভেবে চলেছি...কি ভাবে লিখি...কি ভাবে লিখি...মাঝে মাঝে মনে হয়েছে, না লিখলে হয় না? কে মাথার দিব্যি দিয়েছে যে আমায় লিখতেই হবে? আর না লিখলেই বা কি মহাভারত অশুদ্ধ হবে? তবু খচখচ করেই যাচ্ছে মনটা, এত ভালো একটা বই, বলব না সে বইয়ের কথা? অগত্যা লিখতে বসা। 

গুজব

কড়ে আঙ্গুলের থেকেও ছোট নদী। বেশ আসছিল একটা পল্লীগীতি গাইতে গাইতে। বাধা দিল একটা পাঁচিল। না বাঁদিকে যেতে দিল, না ডানদিকে। নদীটা গর্ত খুঁড়ে নীচে যেতে গেল, ভিতটা নামছে তো নামছেই। পাঁচিলটা বাদিকের ঠোঁটের কোণে উপেক্ষার হাসি হাসল। নদীটা বলল, যাব যে! পাঁচিল বলল, না। ক্রমে কড়ে আঙ্গুলের মত নদীটা বুড়ো আঙ্গুলের মত হল। ততদিনে বছরখানেক তো হয়েছেই। নদী বলল, এবার যেতে দাও। পাঁচিল বলল, না।
...

চেনো ওদের?

        জানো কিনা জানি না। আমি অনেক বাড়ি দেখেছি, যারা কেউ হাসে না। তারা যে দুঃখী তা নয়। তারা হাসার কোনো কারণ খুঁজে পায় না। চোখের উপর তাদের কোনো পর্দা নেই আর। ধুলো-বালি-খড়কুটো সব গিয়ে চোখে পড়ছে, কিন্তু তবু তাদের চোখ জ্বালা করছে না, আমি এমন দেখেছি। তাদের চোখের সামনে টিভিতে কতলোক হাসছে-কাঁদছে-গল্প করছে-নাচছে-গাইছে। তারা স্থির হয়ে টিভির সামনে বসে। কত দুর্ঘটনা

আমাকে ঘিরে রেখেছে এক অদৃশ্য আমি


আমাকে ঘিরে রেখেছে এক অদৃশ্য আমি
আমার নিঃসঙ্গতাকে চুমু দিতে চাইছে 
উড়ন্ত একটা সাদা বক
যার গায়ের রঙ আগে ছিল নীল

একটি সংবাদ পাইলাম

একটি সংবাদ পাইলাম। বিদ্যাসাগর মহাশয় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত 'মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউট' নামক বিদ্যালয় থুড়ি স্কুলটি হইতে বাঙালা ভাষা নির্বাসিত হইতেছে। কারণ বাঙালা ভাষায় শিক্ষাগ্রহণে ইচ্ছুক বাঙালী অভিভাবক তথা ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা দুই আঙুলের কয়েকটি কড়ের অধিক আর যাইতেছে না। অগত্যা ইংরাজি ও হিন্দীভাষাকেই শিক্ষার মাধ্যম করা হইবে এমন সম্ভাবনা দেখা যাইতেছে। 
...

২৫শে বৈশাখ

        আমি আজকের দিনে বুঝেছিলাম আমার ঘরের ভিতর যে আলো আসে, সে আলো এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আলোরই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটা আলো, সে বিশ্বজনীন। আমি আজকের দিনে বুঝেছিলাম, আমার বাগানে যে ফুলটা প্রতিদিন সকালে ফোটে সে বিশ্বজনীন, আন্তর্জাতিক নয়। আমি আজকের দিনে বুঝেছিলাম, আমার উঠোনে যে বাউল আসে, তার গলায় যে গান বাজে, তার একতারায় যে সুর ওঠে, তার আবেদন বিশ্বজনীন, আন্তর্জ

২৫শে বৈশাখ

২৫শে বৈশাখ। আমার পাঠশালা। আমার বিদ্যালয়। আমার মহাবিদ্যালয়। আমার বিশ্ববিদ্যালয়।
২৫শে বৈশাখ। আমার দিন। আমার মাস। আমার বছর। আমার আয়ু।
২৫ শে বৈশাখ। আমার সম্পদ। আমার মান। আমার অলঙ্কার। আমার বৈভব।
২৫শে বৈশাখ। আমার ঘর। আমার দেশ। আমার পৃথিবী। আমার ব্রহ্মাণ্ড।
...

পূর্ব গগন ভাগে

আমিও খড়কুটো জড়ো করেছিলাম। আমিও বাসা বেঁধেছিলাম বিশাল অশ্বত্থ গাছটার একটা ডালের কোণায়। আমি জানতাম অশ্বত্থ গাছের চেয়ে বড় গাছ আর কি বা হতে পারে?
        ঝড় উঠল। আমি নিশ্চিত, যতই ঝড় হোক, ভাঙবে কি অশ্বত্থ? কক্ষনো না, কক্ষনো না।
        ঝড় বাড়ল। চারদিক ধুলায় ধুলায় ঢেকে অন্ধকার করে তুলল। গাছটা মাতাল না পাগল হল? সে উদ্দাম ঝড়ের সাথে যেন তাল রাখতে পারছে না আর। আমি বুঝতে পারছি তার শিকড় থেকে আর্তনাদ ভেসে আসছে। গাছের আরো আরো পাখিগুলো ভয়ে, আতঙ্কে দিশাহারা হয়ে উড়ে বেড়াতে লাগল। ঝড়ের হাওয়ার সাথে তাদের ডানা পেরে উঠবে কেন? ঝড়ের শাসনে তারা মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়তে লাগল। গাছের ডালে ছিটকে এসে লাগল তাদের কোমল শরীর।
...

খোলা বারান্দা

খোলা বারান্দা। এক চিলতে রোদ্দুর
কখনও আড়ি, কখনও সখনও ভাব
ভালোবাসা, তোর নোনতা নোনতা স্বাদ
হৃদয় ঘিরেছে বল্মীক কারাগারে
প্রাণের ফেঁসোয় গরলামৃত ফাঁদ

তোমার কণ্ঠস্বরে


তোমার কণ্ঠস্বরে একটা খোলা মাঠ আছে
আমি মাঝখানে দাঁড়িয়ে গভীর শ্বাস নিয়ে বলি, আঃ!
তোমার কণ্ঠস্বরে একটা শীতল দীঘি আছে
আমি চোখেমুখে জল ছিটিয়ে বলি, শান্তি!
তোমার কণ্ঠস্বরে একটা তারাভরা অমাবস্যা আছে
আমি চোখ বন্ধ করে দু'হাত ছড়িয়ে ভাসতে ভাসতে বলি, এলাম।
তোমার কণ্ঠস্বরে বিষণ্ণ দুপুরে 

ক্ষুর

        গলায় ক্ষুরটা চেপে ধরল। আমি জানতাম, এটাই হবে। এদিক ওদিক দিয়ে কয়েকজন যাচ্ছে। কেউ তাকাচ্ছে না একবারও। তাদের মধ্যে চেনা পরিচিতও যে নেই, তা তো নয়। তবু সবার ভীষণ তাড়া। নিজের চিন্তার কৌটে নিজে মুখ ডুবিয়ে মাথা নীচু করে হনহন করে হেঁটে চলে গেল। অথচ এদের সাথে রাস্তায়, বাড়ির বসার ঘরে, ট্রেনের হাতলে ঝুলতে ঝুলতে কত কথা বলেছি। গল্প করেছি। পিকনিকে গেছি। কিন্তু এদ

ভালোবাসা, বড় গুমোর তোমার


ভালোবাসা, বড় গুমোর তোমার
যখন তখন ঘুঁটি সাজিয়ে ডাকো
"আসো"
ভালোবাসা, বড় গুমোর তোমার
যখন তখন গলা জলে নেমে ডাকো
"আসো"
ভালোবাসা, বড় গুমোর তোমার
হঠাৎ হঠাৎ হারিয়ে গিয়ে বলো
"খোঁজো"
ভালোবাসা, বড় গুমোর তোমার
হঠাৎ কখন ঈশ্বর হয়ে যাও, বলো
"পূজো"
ভালোবাসা, বড় গুমোর তোমার

হিন্দুতভা

        বলা হচ্ছে 'হিন্দুতভা'(Hindutva) শব্দটা প্রথম চালু করেছিলেন বিনায়ক সাভারকর ১৯২৩ সালে। যার অর্থ কম বেশি আমরা সবাই জানি, সেই নিয়ে আলোচনা করার জন্য না। আমি ঠেক খেলাম আবার 'গোরা' পড়তে আর বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের দুটো প্রবন্ধে যা একটা ১৮৯১ আর পরেরটা ১৯০১ সালে লেখা হয়েছে। খেয়াল করার মত 'হিঁদুয়ানি' শব্দটার ব্যবহার। দুটো শব্দই একটা আরেকটার উপচ্ছায়া মাড়িয়ে এ

শান্ত হব বলে


সব ক'টা তারাতেই
চন্দ্র, সূর্য- 
   এমনকি গনগনে চিতার আগুনেও
ঠোঁট ছুঁইয়ে এসেছি

পুড়িয়ে এসেছি

শুধু একবার তোমার ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াবো বলে
শান্ত হব বলে
বৃষ্টি ভেজা পালকগুলো শুকিয়ে নেব

তাই
 

ভাড়ুদত্ত তার্কিক

        সামনে একটা জবাগাছ। জবা ফুটে আছে। সেটাই স্বাভাবিক। জবাগাছে জবাই ফুটবে। দার্শনিক মশাই পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। জিজ্ঞাসা করলুম,
- বলুন তো এটা কি ফুল? (উনি জবা চেনেন না তা নয় তবু ঠাট্টার কারণে)
        উনি ফুলটার দিকে তাকিয়ে বললেন,
- রজনীগন্ধা তো নয়...
- তবে কি ফুল?
- ডালিয়াও নয়

সকাল হলেই


মালী ভোরের অপেক্ষায় বসে। গতরাতে তার বাগানে ফুটেছে গুচ্ছগুচ্ছ রজনীগন্ধা, বেলি, জুঁই।
বাজারে যাবে সকাল হলেই।
জেলে আছে ভোরের অপেক্ষায়। শেষরাতে ধরা পড়েছে রুই, কাতলা, মৃগেল। প্রচুর প্রচুর।
বাজারে যাবে সকাল হলেই।
শাক তুলে, লাউ তুলে, ডাঁটা তুলে..আরো কত কি তুলে অপেক্ষা করছে চাষী ভোরের সিমফুলের মত আকাশের।
বাজারে যাবে সকাল হলেই।
এরা কেউ জানে না

ঘাড় উঁচু করে


ঘাড় উঁচু করে হেঁটে চললে 
   ভাবলে মাথাও থাকলো উঁচু

ঘাড় নমনীয় না হলে ভাই
    মাথা কি থাকে উঁচু?

তখন আমি অনেক ছোটো


       (আজ সুমনের জন্মদিন। এই লেখাটা ওর জন্যেই, আমার ছোটোবেলার একটা টুকরো। এর থেকে বেশি নিজের আর কি দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব তাকে, আমার এই লেখালেখি যাবতীয় কিছুর মূলেই যার প্রেরণা-উৎপাত।)

প্রজাপতি


প্রজাপতি বলল, মধু কই?
ফুল বলল, মধু তো নেই
       আছে সাজ। ঠিক ওই ফুলের মত।

প্রজাপতি বলল, কিন্তু সে ফুলে যে আছে মধু
   তার আছে সে সাধন,
        তুমি তো রিক্ত। শূন্য অনুকরণ।

প্রতিবাদ হোক, বেইমানি না

        একটা দেওয়ালে হাতুড়ি মারল কয়েকজন। তারা ভেবেছিল হাতুড়ির বাড়ি পড়তেই ইটগুলো ফুল হয়ে এসে তাদের পায়ের কাছে পড়বে। কিম্বা ইটগুলো বকের মত আকাশে উড়ে মিলিয়ে যাবে। 
        হল না। ইটগুলো হুড়মুড় করে পড়ল পায়ে। পা ভাঙল। ইটের কুঁচি চোখে এসে পড়ল। চোখের সাদা হল লাল। 

নিভৃত



====
নিভৃত জীবন
         গোপনীয় নয়
                একান্ত ব্যক্তিগত


====
তোমার নিজস্ব হারিয়ে যাওয়ার ঠিকানা আছে

          আমারও আছে

তোমার প্রতিবাদ


তোমার প্রতিবাদ
   ঝোড়ো হাওয়ায় দাবানল লাগিয়ে

আমার প্রতিবাদ
  ঝোড়ো হাওয়ায় ঘরের কোণের 
                    প্রদীপ আগলিয়ে

এখন আমার অষ্টপ্রহর যন্ত্রণা


এখন আমার অষ্টপ্রহর যন্ত্রণা
ডুব সাঁতারে শামুকে কাটা পা

চাতক তৃষ্ণা
     এক পশলা তুমি
ঘুণ লেগেছে সুখের সারা গা

আজ মে'ডে

দুপুরে এখানে পাতপেড়ে খাওয়া হয়। শ্রমিকেরা খায়। শ্রমিক মানে কালো গা, ধুলো জামা, ফসিল চোখ, হাড়ের আত্মশ্লাঘাহীন পরিচয়। যারা বাতাসের মতো পাশাপাশি বাঁচে, অদৃশ্য অস্ত্বিত্বে। কুকুরটা জানে না আজ মে'ডে। কুকুরটার সকাল থেকে খাওয়া জোটেনি আজ। কুকুরটা রবিবারের হিসেব রাখে। কিন্তু আজ কিসের ছুটি?
...

তবু তুমিই


আলোকে গভীরে যেতে বলো
   আরো গভীরে
যেখানে মনের বিস্তীর্ণ আঁকিবুঁকি
বকের পায়ের মত ছাপ ফেলে
   যেখানে হেঁটে গেছে তোমার ব্যক্তিগত ইতিহাস
      শামুকের মত মহাকাল হেঁটেছে তার পিছুপিছু