Skip to main content
anu

তখন লকডাউনের শুরুর সময়। আমার সারাটাদিন কোনোমতে কেটে যাচ্ছে। কিন্তু রাত হলেই আতঙ্ক লাগছে। বাড়িতে দুজন বয়স্ক মানুষ, কিছু হলে কাকে ডাকব, কোথায় যাব। এ তো আছেই সঙ্গে আনুষাঙ্গিক আরো নানা দুশ্চিন্তা। ঘুম আসতে চায় না। সব মানুষ যেন এক গভীর দীর্ঘ সুড়ঙ্গে এক একটা কারাগারে আটকে। চারদিকে পাথরের দেওয়াল। ওপার থেকে মাঝে মাঝে মানুষের ফিসফিস শব্দ। বোঝা যায় না কী বলছে। ভয়, আতঙ্ক, অনিশ্চিত সব মিলিয়ে কী সময় কাটাচ্ছি।
     একদিন রাতে স্ক্রল করতে করতে চোখে পড়ল অনুত্তমার একটা ভিডিও। অনুত্তমা ব্যানার্জি। একটা ভিডিওই বার তিনচার শুনলাম। আরো ভিডিও খুঁজলাম। দেখতে দেখতে মনে হল, যেন ক্ষীণ আলো দেখতে পাচ্ছি সুড়ঙ্গের মধ্যে। একজন মানুষের ভাষা, ভাষার পিছনে গভীর জীবনবোধ, বিশ্বাস - এ সবের মধ্যে দিয়ে ওই সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে এলো খোলা বাতাস, আলো। বাঁচলাম।
     লকডাউন উঠল। করোনাকালও কাটল। নিউ-নরম্যাল ওল্ড-নরম্যালে পরিণত হল। কিন্তু আমি ভুলতে পারলাম না আমার সেই সব রাতের কথা আর দিনের পর দিন অনুত্তমার অমন সঞ্জীবনী সমান আলোচনার কথা।
     আজ বন্ধুবৃত্তে আমি অনুত্তমাকে পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি। কিন্তু এমন একজন মানুষকে যখন বন্ধুর আঙিনায় বরণ করছি, তখন যথাযথ মানটাও তো রাখতে হয়। মানুষের সব চাইতে বড় ভার ঋণের ভার। সব ঋণ শোধ করা যায় না। কিন্তু স্বীকার তো করতেই হয় সবার মাঝে দাঁড়িয়ে। নইলে কোথাও বিবেকের কাছে চৌর্যবৃত্তি হয়ে দাঁড়ায়।
     অনুত্তমা, সেই দুর্দিনে আপনার কাছে আমার মত নিশ্চয়ই আরো অনেক অনেক মানুষ ঋণী। আমি আমার কৃতজ্ঞতা স্বীকারের মাধ্যমে সে সবাইকেও স্মরণ করলাম। আপনি ভালো থাকুন। আরো আরো মানুষের জীবন আলোকিত হোক, সহজ হোক আপনার আলোকপাতে, এই প্রার্থনা করি।
     একটা কথা বলে শেষ করি। ক'মাস আগে আমার এক প্রাক্তন ছাত্রের মেয়ে হল। সে ছাত্র আর তার স্ত্রী দুজনেই আমার আত্মীয়তুল্য। তারা বলল, দাদা, তুমি বলো কী নাম রাখি মেয়ের?
     আমি বললাম, অনুত্তমা।
     তার নাম অনুত্তমাই রাখা হল। ও যখন বড় হবে, আপনাকে দেখিয়ে বলব, লকডাউনের গল্প আর বারবার আপনার কাছে ফিরে যাওয়ার গল্প। আপনার সাহস যোগানোর গল্প। আশা যোগানোর গল্প।
     “নিরাশেরে কহো আশার কাহিনী, প্রাণে নব বল দাও রে”। এই সত্য হোক, আপনার সাহচর্যে। ভালো থাকবেন।