অনুগল্প

এ আমার একার অস্তিত্ব। অল্প অল্প ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের মত। আকাশ ধরো সময়। ধরো সব মেঘ বিছিয়ে দিলেও আকাশ শূন্য থেকে যাবে। আমি সব সময় একা। এত মানুষ এলো গেলো। এত ভালোবাসা-বাসি। এত বুকফাটা বিরহ। এ সবই হল। কিন্তু দাগ কাটল না। আমি একা। এটাই আমার পরিচয়।

তুমি যা বলছ সে অতীতের কথা। অতীতের স্মৃতিগুলো আঁকড়ে তো বেঁচে থাকা যায় না, এটা আমরা দু'জনেই বুঝতে পারছি, না কি? খারাপ দু'জনেরই লাগছে। ভবিষ্যতেও লাগবে। কিন্তু অতীতটা অতীতই, তাকে জাগিয়ে রেখে বর্তমান চলে না, এটা কি সত্যি নয়? 
 

খাস্তগীর রোজ কোনো একটা নতুন কারণে কষ্ট পায়।

    খাস্তগীর যা যা হতে পারত নিজেকে ভাবে, আর যা হয়েছে, এই দুটোর মধ্যে মিল খুঁজতে গিয়ে রোজ কষ্ট পায়। 

বাসের শেষ সিট। ফাঁকা বাস। হয় তো শেষ বাস। কন্ডাক্টর ঝিমোচ্ছে। ফাঁকা রাস্তা। ক্ষমতার চেয়ে বেশি স্পিডে ছুটছে বাসটা।

    হঠাৎ একটা ভীষণ ঝাঁকুনি দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল বাসটা। কন্ডাক্টর একবার জানলার দিকে মুখ বাড়িয়ে বলল, ধুস্ শালা, আবার!

শ্মশানে থাকে ভোলা। লোকে বলে ভোলা ক্ষ্যাপা। বউ মরে গেল। ভোলা মিস্ত্রী ভোলা ক্ষ্যাপা হল। লোকে বলত ওরকম শান্ত লোক দুটো হয় না নাকি। ভোলার বউও তাই বলত, তুমি ওর গায়ে হেগে দাও, ধুয়ে নেবে, তোমায় কিচ্ছু বলবে না, কিন্তু রাগলে চণ্ডাল।

তুমি আমি একই রুটের বাস। একই রাস্তায় শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা চলেছি। খানাখন্দ, উঁচুনীচু রাস্তা, কখনও সমান। ট্রাফিক সিগন্যালে আটকে তুমি আমি পাশাপাশি, কখনও একই দিকে যাচ্ছি, কখনও তুমি যাচ্ছ আমি আসছি, কিম্বা আমি যাচ্ছি তুমি আসছ। আমাদের চালক, কন্ডাক্টর আলাদা। যাত্রীদের মত আমাদের কর্তব্যগুলো কখনও এক, কখনও আলাদা আলাদা। কোনো কর্তব্য শেষের মাথায় আমি, তুমি তখন তোমার কর্তব্য শুরু করছ। ক

বৃদ্ধা সামনের দরজার দিকে তাকিয়ে শুয়ে আছেন। একটু আগে আয়া অল্প একটু সেদ্ধভাত আর আর উচ্ছে আলুসেদ্ধ মাখা খাইয়ে গেছে। কুলকুচোটা ভালো হয়নি। দাঁতের ফাঁকে কয়েক টুকরো উচ্ছে আটকে এখনও। তিতো তিতো লাগছে জিভ ঠেকালে। সব মিলিয়ে আটটা দাঁত টিকে আছে এখন।

"প্রভু,      আজি তোমার দক্ষিণ হাত রেখো না ঢাকি।

   এসেছি তোমারে, হে নাথ, পরাতে রাখী॥

যদি বাঁধি তোমার হাতে    পড়ব বাঁধা সবার সাথে,

    যেখানে যে আছে কেহই রবে না বাকি॥"

খবরটা দেখামাত্র উনি লাইব্রেরি ঢুকলেন। স্ত্রী, ছেলে, মা, বাবা, চাকর, বন্ধুবান্ধব --- সব্বাইকে বললেন, বিরক্ত না করতে। দরজার কাছেই খাবার রেখে আসতে। 

    উনি শুরু করলেন পড়া। প্রথমে বিশ্বসৃষ্টির রহস্য। নানা মত। সায়ানোজেন মতবাদ। ওপারেন হ্যাল্ডেনের কথা। দানিকেনের কথা। 

ধইঞ্চা গাছের ঝাড়ের নীচে চুল্লু খেয়ে টাল হয়ে পড়ে আছে শিবে।

    নক্ষত্র টলতে টলতে তার পাশে গিয়ে বসে জিজ্ঞাসা করল, বাড়ি যাবি না?

    শিবে বলল, নাহ্, মনটা বিষিয়ে গেছে....

    নক্ষত্র বলল, ক্যানো রে?