Skip to main content

প্রবর্তন


"আমি যেন আমায় সহ্য করতে পারি।" বৌদ্ধ ভিক্ষু উচ্চারণ করলেন। আড়ষ্ট উচ্চারণ।


    "এর মানে কি?"

চাঁদের উদয়

গোঁসাই বলল, শরীরের পিছনে মন হাঁটে, না মনের পিছনে শরীর?

    রতন বিড়ি ফেলে বলল, ওই হল। দুই আছে। কখনও এ আগে, কখনও সে।

    গোঁসাই বলল, আজ থাকবি?

    রতন বলল, টোটো দাঁড় করিয়ে রেখে এসেছি। এই যে কমলা। প্রণাম কর।

সুরমার সংসার

সুরমার সঙ্গে এটা খুব হচ্ছে। আগে মাসে একবার কি দু'বার হয় তো হত, এখন প্রতিদিন হচ্ছে।

             আজ সকালেই, রান্নার পর গ্যাসট্যাস মুছে বসার ঘরে খবরের কাগজটা নিয়ে বসল। অতীন মিউনিসিপালিটি চলে গেছে। মেয়ে টিউশানে। এখন কেউ আসার নেই। যেই ভেবেছে খানিক বাদেই কলিংবেল বাজল, মাসতুতো দিদি আর তার বর। মানে আবার গ্যাস জ্বালো। নইলে আপ্যায়ন হবে কি করে?

শামুক

পাঁচু পাগলা জেটিতে এসে বসেছে। গ্রামে সবাই তাকে এই নামেই ডাকে। লঞ্চ আসতে দেরি আছে আরো আধঘন্টা। হঠাৎ খুব জোরে আওয়াজ শুনে ফিরে তাকালো, একটা লরি করে অনেক লোক এসেছে। বড় বড় বক্স বাজছে। হিন্দী গান হচ্ছে। কি ড্রাম পেটানো আওয়াজ। বেশি লোক দেখলে পাঁচু পাগল জড়সড় হয়ে যায়। এখনও হল। তার পিঠের ব্যাগটা পিঠ থেকে খুলে বুকের কাছে নিয়ে নিজেকে শামুকের মত গুটিয়ে বসল।

মেঘলা আকাশ

সন্ধ্যে হুস করে হয়ে গেল। আসলে মেঘলা। নইলে এই জুলাই মাসে এত তাড়াতাড়ি অন্ধকার হয়?

               ঝন্টি রাস্তার মাঝখানে বসে একটা বিড়ি ধরালো। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে। অনেকদিনের কাজ। রাস্তা চওড়া হচ্ছে। মাঝখানে খুঁড়ে একটা বড় ঢিবি মত করেছে। বাবুদা যা বলছে, তাই করছে। ঝণ্টির লেবারের কাজ। রাণাঘাটে বাড়ি। বাবা নেই। মা নেই। ভাই নেই। বোন নেই। ঠাকুমা ছিল। নেই। সে আকাশ থেকে জন্মেছে। ঠাকুমা ভিক্ষা করত। রাণাঘাট স্টেশানে। মরার সময় ছিল না ঝণ্টি। কেরলে ছিল। বাবাইদা নিয়ে গিয়েছিল কাজে। বিল্ডিং বানানোর ওখানে লেবারের কাজ ছিল। ঠাকুমা মরেছে কেউ জানায়ও নি। কেরলের খাবার সহ্য হচ্ছিল না। খালি খালি বমি পায়খানা। বাবাইদা পাঠিয়ে দিল। রিজার্ভেশন করেনি। জেনারেলে দাঁড়িয়ে বসেই চলে এলো। ভোরে হাওড়ায় যখন ট্রেন ঢুকল শরীর আর দিচ্ছে না। পায়খানা দিয়ে রক্ত পড়ছে। কোনোরকমে বাসে চড়ে শিয়ালদা, তারপর ট্রেন। ট্রেনে তো অজ্ঞানই হয়ে গেল। লোকে বলল গ্যাস। গ্যাস না, খিদে। রাণাঘাটে নামল বেলা ন'টা। দরজায় তালা দেওয়া। কেন? এত সক্কালে মাল বুড়ি ভিক্ষা করতে বেরোল নাকি?

পাঁচুর সংশয়

সমস্যা ঘোরতর হইল। পাঁচু তর্কালঙ্কারের সাধ ছিল পিতামাতার স্বর্গবাস হইলে গয়ায় গিয়া পিণ্ডদান করিবে, এবং পিতামাতার স্বর্গে সুখে দিনযাপনের একটি পাকাপাকি ব্যবস্থা করিবে। 
             পাঁচুর পিতামাতার দেহাবসান হইল। কালের নিয়মেই হইল। ঘোরতর নিন্দুকেও কহিল, পাঁচু যা সেবা করিয়াছে পিতামাতার, তাহা এই কলিকালে দৃষ্টান্ত হইয়া রহিল। গ্রামের সকলে ধন্য ধন্য করিল। পাঁচু শুধু সেবাই করিল না, সেবার নানা মুহূর্ত ইনস্টাগ্রামে বাঁধাইয়া রাখিল। যাহাতে পরপারে গিয়াও সে সকল চিত্র দেখিয়া পিতামাতা সুখী হইতে পারে।

খোঁজ

"এত দূরে গিয়ে ছাড়বি যেন আর ফিরে আসতে না পারে... এবার ফিরে এলে তোদের দুটোর পিঠে এই বাটামটা ভাঙব দেখিস”....
             একটা বস্তায় ভরে ছেড়ে এসেছিল। সাইকেলের পিছনে বস্তা ধরে বসেছিল ছোটোভাই। কথা বলছিল না, কাঁদছিল। জানে সে। প্যাডেলে চাপ দিতে বুকে লাগছিল। যেন খায়নি অনেকক্ষণ। অনেক ঘুরে ঘুরে মাঠে গিয়ে যখন ছাড়ল, তখনও বাচ্চাটা লেজ নেড়ে নেড়ে দুই ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ছিল। যেন বেড়াতে নিয়ে এসেছে। ভাই একটা বিস্কুট ছুঁড়ে দিয়ে বলেছিল, যা!..... তারপরেই ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলেছিল। বলেছিল, দাদা, আমরা ওকে রোজ দেখতে আসব, আসবি?

ঠা-দা

উনি দম আটকে এলেই জানলার দিকে চলে যান। পরনের লুঙ্গিটা হেঁচড়ে যেন খুলেই যাবে শরীর থেকে। গারদ দুটো আঁকড়ে ধরে নাকটা খোলা বাতাসে বার করে দেন। বিস্ফারিত চোখে সামনের পার্কটার দিকে তাকিয়ে বলেন, পরী... পরী..

বরবটি

(এ নিতান্ত মজার জন্য লেখা। মতামত সম্পূর্ণ ক্ষেমীর। লেখকের দায় নেই।)

লে লে, আমায় গেল

এ আমার একার অস্তিত্ব। অল্প অল্প ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের মত। আকাশ ধরো সময়। ধরো সব মেঘ বিছিয়ে দিলেও আকাশ শূন্য থেকে যাবে। আমি সব সময় একা। এত মানুষ এলো গেলো। এত ভালোবাসা-বাসি। এত বুকফাটা বিরহ। এ সবই হল। কিন্তু দাগ কাটল না। আমি একা। এটাই আমার পরিচয়।

Subscribe to অনুগল্প