Skip to main content

 
 

----
বাড়িটাতে অনেকগুলো পাত পড়ত
গমগম করত দেওয়াল ছাদ উঠোন।
বাচ্চাদের চীৎকার, মেয়ে বউদের হাসির কলতান,
ছেলেদের তর্ক, উনি সব দেখতেন
একটা আরাম কেদারায় বসে, সকৌতুকে
গভীর তৃপ্তিতে।
মাঝে মাঝে চোখ বুঝে ভাবতেন, কতটা পথ পার হলেন,
লড়াই করে, হিসাব করে, ভালবেসে।
পাখার হাওয়া ওঁনার পাকাচুলে হাত বুলিয়ে খেলে যেত,
বাগানের ফুলের গন্ধ ওঁনার স্মৃতির অলিন্দে প্রদীপ জ্বালাত,
উনি আবেশে চোখ বুজে থাকতেন।


----
তারপর কি যেন হল।
খুব তাড়াতড়ি কিছু কণ্ঠস্বর থেমে গেল
মৃত্যুর শীতল আলিঙ্গনে।
কিছু সুতো মাঝপথে ছিঁড়ে টুকরো হল
ছড়িয়ে গেল সুখের পুঁথিগুলো এখানে সেখানে
উঠানের কিছু কিছু কোণে বিনা ভিতেই উঠল
পাঁচিল
ঘরের ভিতর অন্ধকার বাড়ল আগের থেকে বেশি, যথেষ্ট বেশি।

প্রথমটায় উনি বিভ্রান্ত হলেন
তারপর কাঁদলেন, খুব কাঁদলেন
তারপর রাগলেন অযথাই সবার ওপর-
খাটের ওপর পাতা চাদরের ওপর, সাদা ধুতির ওপর,
ইলিশের ওপর, নিজের নীরোগ শরীরের ওপর,
নিজের এখনো বেঁচে থাকতে না চেয়েও বেঁচে থাকার ওপর।
 
অবশেষে শান্ত হলেন, হিমবাহের মত শীতল।


----
এখন বাড়িতে মধ্যরাতের বাজারের মত স্তব্ধতা,
দেওয়ালে দেওয়ালে অকাল বৈধব্যের মত কান্না,
মেঝেতে ধুলোর সাথে ধুলোর দেখা
উঠোন জুড়ে আগাছার ঝাড়।


 
আর উনি?
উনি আজও বসে সেই আরাম কেদারায়।
পাখার হাওয়া আজ ওঁর সাদা চুলের সাথে খেলে
না, ওঁনার সাথেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে গোপনে নীরবে।
বাগানের থেকে বুনোফুলের গন্ধ সমস্ত স্মৃতির আগল খুলে পালাবার পথ খোঁজে।
উনি বিস্ফারিত চোখে দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে গেয়েই চলেন-
টুইঙ্কেল টুইঙ্কেল লিটল স্টার...
চোখের কোণের থেকে জল গাল গড়িয়ে
আরাম কেদারায় বসে ওঁনার পাশে।

সারাবাড়ি জুড়ে একসুর
টুইঙ্কেল টুইঙ্কেল লিটল স্টার....
ঘুরেই চলে, খুঁজেই চলে, কেঁদেই চলে।

 


(ছবিঃ সুমন দাস)