সৌরভ ভট্টাচার্য
26 October 2014
তাঁর বয়স হবে পঁচাত্তরের ওপর। আমার সাথে কথা বলতে আসতেন যে সূত্রে সে প্রয়োজন ফুরিয়েছিল অনেকদিন। তবু আসতেন। কথা বলতে ভালবাসতেন। উনি ছিলেন প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক। বাংলাদেশের থেকে এ দেশে এসে বহু লড়াই করে, দুটো ছেলে আর মেয়েকে মানুষ করেন। তারা সবাই এখন প্রতিষ্ঠিত মোটামুটি।ওনার স্ত্রী গত হয়েছেন প্রায় ১২ বছর হল।
সব সময়েই যে ওঁনার কথা শুনতে ভাল লাগত, তা না। অনেক সময় কাজের মাঝখানে উনি এসে পড়ায় বিরক্তও হয়েছি মনে মনে। কথা শুনেছি অন্যমনস্কভাবে। সে সব ভাবলে একটু অপরাধবোধই লাগে আজ।
একদিন এসে বললেন, "সামনের কয়েকদিন আসব না বুঝলেন।"
বললুম, "কেন?"
"বাড়ির সবাই পুরী যাচ্ছে। তাই বাড়ি পাহারা দেব" - বলে হাসলেন অমায়িক।
আমি বললাম,"তা আপনিও তো গেলে পারতেন?"
মনে মনে ভাবছিলাম হয়তো ছেলেদের সাথে সে সম্পর্ক নেই। যেমন হয়ে থাকে আর কি।
ওনার মুখের ওপর হঠাৎ মেঘের ছায়া ঘনিয়ে এল। চোখ সজল। মনে মনে ভাবছি, ছিঃ ছিঃ প্রশ্নটা না করলেই হত, এখনি হয়তো সংসারের কাদাগুলো উগরাতে হবে ওনাকে আমার কাছে।
উনি বলতে শুরু করলেন, "কি জানেন তো, বড় কষ্টে, অভাবে কেটেছে আমার দিনগুলো। সামান্য কটা টাকা মাইনে, তার সাথে কটা টিউশানি। কত আর হত তাতে! তাতেই বাবা মা, দুটো ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে লড়াই করে সংসার চালিয়েছি আমি আর আমার গিন্নী। বড় ভাল মানুষ ছিলেন জানেন আমার গিন্নী। কোনোদিন, বুঝলেন কি না, একদিনের জন্যও ওর মুখ বেজার দেখিনি। হাসিমুখে সামলেছে সব। ওর মনে একটাই সাধ ছিল জানেন, পুরীতে গিয়ে জগন্নাথ দর্শন করবে। পারলাম না। সে আর হল না। সংসারের জোয়াল ঠেলতে ঠেলতে অর্থ আর সময় কোনোটাই বাগে আনতে পারলাম না। পরে যখন সময় হল, তখন ওকে ধরল মারণ রোগে। চলে গেল।
তাই আমার বড় ছেলেকে বললাম, তোরাই ঘুরে আয় বাবা। আমি কি করে এ চোখে পুরী দেখি বলুন, সেটা অন্যায় হয় না? আপনিই বলুন, হয় তো? সে হয় তো কিছু বলবে না, আমি জানি, তবু তার কোথাও তো বাজবে বলুন?"
আমি হতভম্ব হয়ে ওঁর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ওঁর চোখের জল ততক্ষণে চোখের কোল ছাপিয়েছে।
আমার গলার কাছটা আটকে আসছিল, নাকটা টাটাচ্ছিল।
উনি চলে যাওয়ার পর বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকলাম ফাঁকা ঘরটায় খাটের ওপর। ভাবছিলাম ওনার সাথে এক উচ্চতায় বসার যোগ্যতা কি সত্যিই আমার আছে? ওনার থেকে বই পড়েছি অনেক বেশি, সে নিয়ে সন্দেহ নেই। ব্যস অতটূকুই। কিন্তু এ ভাবে ভালবাসতে পারার ক্ষমতা কি আমার তিলার্ধও আছে? যে ভালবাসার কাছে মৃত্যুও এক সামান্য আড়াল ছাড়া আর কিছু না?
সব সময়েই যে ওঁনার কথা শুনতে ভাল লাগত, তা না। অনেক সময় কাজের মাঝখানে উনি এসে পড়ায় বিরক্তও হয়েছি মনে মনে। কথা শুনেছি অন্যমনস্কভাবে। সে সব ভাবলে একটু অপরাধবোধই লাগে আজ।
একদিন এসে বললেন, "সামনের কয়েকদিন আসব না বুঝলেন।"
বললুম, "কেন?"
"বাড়ির সবাই পুরী যাচ্ছে। তাই বাড়ি পাহারা দেব" - বলে হাসলেন অমায়িক।
আমি বললাম,"তা আপনিও তো গেলে পারতেন?"
মনে মনে ভাবছিলাম হয়তো ছেলেদের সাথে সে সম্পর্ক নেই। যেমন হয়ে থাকে আর কি।
ওনার মুখের ওপর হঠাৎ মেঘের ছায়া ঘনিয়ে এল। চোখ সজল। মনে মনে ভাবছি, ছিঃ ছিঃ প্রশ্নটা না করলেই হত, এখনি হয়তো সংসারের কাদাগুলো উগরাতে হবে ওনাকে আমার কাছে।
উনি বলতে শুরু করলেন, "কি জানেন তো, বড় কষ্টে, অভাবে কেটেছে আমার দিনগুলো। সামান্য কটা টাকা মাইনে, তার সাথে কটা টিউশানি। কত আর হত তাতে! তাতেই বাবা মা, দুটো ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে লড়াই করে সংসার চালিয়েছি আমি আর আমার গিন্নী। বড় ভাল মানুষ ছিলেন জানেন আমার গিন্নী। কোনোদিন, বুঝলেন কি না, একদিনের জন্যও ওর মুখ বেজার দেখিনি। হাসিমুখে সামলেছে সব। ওর মনে একটাই সাধ ছিল জানেন, পুরীতে গিয়ে জগন্নাথ দর্শন করবে। পারলাম না। সে আর হল না। সংসারের জোয়াল ঠেলতে ঠেলতে অর্থ আর সময় কোনোটাই বাগে আনতে পারলাম না। পরে যখন সময় হল, তখন ওকে ধরল মারণ রোগে। চলে গেল।
তাই আমার বড় ছেলেকে বললাম, তোরাই ঘুরে আয় বাবা। আমি কি করে এ চোখে পুরী দেখি বলুন, সেটা অন্যায় হয় না? আপনিই বলুন, হয় তো? সে হয় তো কিছু বলবে না, আমি জানি, তবু তার কোথাও তো বাজবে বলুন?"
আমি হতভম্ব হয়ে ওঁর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ওঁর চোখের জল ততক্ষণে চোখের কোল ছাপিয়েছে।
আমার গলার কাছটা আটকে আসছিল, নাকটা টাটাচ্ছিল।
উনি চলে যাওয়ার পর বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকলাম ফাঁকা ঘরটায় খাটের ওপর। ভাবছিলাম ওনার সাথে এক উচ্চতায় বসার যোগ্যতা কি সত্যিই আমার আছে? ওনার থেকে বই পড়েছি অনেক বেশি, সে নিয়ে সন্দেহ নেই। ব্যস অতটূকুই। কিন্তু এ ভাবে ভালবাসতে পারার ক্ষমতা কি আমার তিলার্ধও আছে? যে ভালবাসার কাছে মৃত্যুও এক সামান্য আড়াল ছাড়া আর কিছু না?