Skip to main content
ঈশ্বর কে? আত্মা কি? শাস্ত্র কি?
এ সবই কি ভয়ের বিকার? শুদ্ধ বিকার? ভবিষ্যতের চাইতে অন্ধকার তো আর কিছুই নেই। জানি না কি হবে। সেই অজানার আতঙ্ক, আশঙ্কাই কি ঈশ্বরের জন্মকারণ?
প্রতি শনিবার বারের ঠাকুরের পূজা দেখি। সে পূজার পিছনে একটাই আকুতি - বাবা বাঁশ দিও না। এই রইল আমার ভক্তি। দাঁড়াও, ভক্তি কি? এখানে ভক্তি মানে স্বেচ্ছায় উদ্ধত মস্তিস্কের অবনমন। তাতে লাভ? কিঞ্চিৎ সামাজিক লাভ। চিরকোন্দলরতা দুই বিরুদ্ধাস্বভাবা রমনীকে পাশাপাশি আঁচল জড়িয়ে চোখ বুজে ঈশ্বরতুষ্টি যজ্ঞে বসতে দেখেছি। অর্থাৎ স্বেচ্ছায় ভয়ের তাগিদে হলেও অহং-এর কিঞ্চিৎ বিলোপে সামাজিক সহবাস। এই কি ঈশ্বরের মহিমা? সামাজিক উৎসবগুলোর বেশিরভাগই ধর্মকেন্দ্রিক। সেই অর্থে ঈশ্বরকেন্দ্রিক। যেকোনোভাবেই হোক মানুষের সাথে মানুষের মিলনের আনন্দের পথ তৈরী করা।
সে না হয় হল। বর্তমানে উৎসব করতে সেই বুড়ো ঈশ্বরের তেমন একটা দরকার নেই। যদিও একটা প্যাণ্ডেলে বসিয়ে রাখলে অসুবিধা নেই। নমো নমো করে তাকে চাট্টি শুদ্ধ তৈলমর্দন করলেই হল।
তবে এই কি ঈশ্বর? এই কি ধর্ম। তবে এর আর কি দরকার? গেলেই হয়। অবশ্যি একরকম গিয়েই আছে। তবে যেটুকু ভয় বেঁচে আছে সেটুকুতেই রাজত্ব করে যাচ্ছে।
সব চাইতে বড় ভয় তো মৃত্যু। তারপর এলো দারিদ্রতা। না বোধহয়, দারিদ্রতার ভয় মৃত্যুভয়ের থেকেও বড়ই হবে। তারপর রোগশোকের ভয় তো আছেই। অগত্যা আনো দেবদেবী। লাগাও পূজা।
ভয় আর জ্ঞান, আলো আর অন্ধকারের মত। জ্ঞান হল তো ভয় কমল। কিন্তু ভবিষ্যতের অন্ধকারের বুক চিরবে কোন জ্ঞান? আমি ভারতীয়দের গড় আয়ুর হিসাব করতে পারি। রামবাবু কদ্দিন বাঁচবেন কি আর বলতে পারি? কাল জোয়ার ক'টায় বলতে পারি, বর্ষা আসতে কদ্দিন হিসাব কষতে পারি। কিন্তু কাল আমার কি হবে বলতে পারি? কাল আমার ছেলেটা, কি মেয়েটা স্কুল থেকে সুস্থ নিরাপদে বাড়ি ফিরবেই কিনা বলতে পারি? না পারি না। তাই ভবিষ্যতের ভয় আমার পিছু ছাড়ে না।
অনেকে অবশ্য এর থেকে বেরোবার দুটো পথ দেন। কেউ রাখেন উদ্ধত অভিমানের উপেক্ষা। কেউ রাখেন উদাসীনতার বৈরাগ্য। তবে দুটোই কার্যক্ষেত্রে দুর্বল হতেই দেখেছি। অভিনয়ে খুব পারদর্শী না হলে অনেক সময়ই মহত্বের আসনে নিজেকে রাখা দায়।
সেও না হয় হল। এই কি তবে শেষ কথা বলবে? এইরকম পাড়ার দাদা গোছের ঈশ্বরের তোলা দিতে দিতেই জীবন যাবে? এমনকি তোলা নিয়ে কাজ না করলেও তার বিরুদ্ধে মামলা করার কোনো আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া যাবে না? এ তো খুব গণ্ডগোলের ব্যাপার তা হলে!
আসলে ধর্ম যতক্ষণ বাইরের ততক্ষণ এর বেশি সে এগোতে পারে না। এ যেকোনো জ্ঞানের ক্ষেত্রেই। আমি আপেলটা কেন মাটিতে পড়ল যখন জানতে চাইলাম, তখন নিজের ভিতরে তাকালাম। উত্তর পেলাম। তাকে বললাম, বিজ্ঞান। সে জানার ইচ্ছা ভিতর থেকেই এসে ভিতরকেই সমৃদ্ধ করল। কিন্তু যেদিন বাইরের সুখের জগতে বিজ্ঞানকে ডাকলাম। তার পরিণতি আসল গ্লোবাল ওয়ার্মিং থেকে শুরু করে দূষণের লাগামছাড়া মাত্রায়। সে জ্ঞান সুখ দিল যেমন অনেক, তেমন বহুপ্রাণীকে, উদ্ভিদকে অবলুপ্তির পথে পাঠিয়ে আজ সে আমারই দিকে তার করাল মুখ নিয়ে এগিয়ে আসছে। স্বর্গীয় নানান দেবতাও তাই। হয়তো কিছু সুখের বরাদ্দ তাদের জিম্মায় আছে। তবে মানুষকে ভয় দেখিয়ে যেখানেই কিছু মানাতে হয়েছে, সেখানেই নানান নিষ্ঠুর বিধিনিষেধ থেকে শুরু করে উগ্রপন্থী অবধি তৈরীর পথ হয়েছে। মানুষ শোষিত হয়েছে।
ঈশ্বরের কথা এখানেই শেষ হত যদি, তবে আমাদের চলা, বন্দীর শিকল পরে বধ্যভূমিতে চলার সেই বিখ্যাত উপমার চাইতে বেশি কিছু হত না। তবে তা তো নয়! 
মরমী সাধক ইঙ্গিত করলেন, ভিতরে এসো। বললাম, কি ভাবে আসব? সে বলল, ভালোবাসো। মানুষ বাইরে থেকে ভালোবাসতে পারে না। যে ভালোবাসা বাইরে টানে, সেটা কাম। প্রেমের ছদ্মবেশেই আসে। সময় তার ছদ্মবেশ খুলে দেয়। সে তখন উত্যক্ত, ক্ষিপ্র, অতৃপ্ত যন্ত্রণা ছাড়া কিছুই নয়।
যে টান ভিতরে একটার পর একটা দরজা খুলে নিয়ে আসে - সেই প্রেম। তার আসার পথ তৈরী করো। দুঃখকে মাথা পেতে স্বীকার করো, সে যাওয়ার আগে তোমায় সোনা করে যাবে। দুঃখ থেকে বাঁচতে গিয়ে যত গোল করেছ। পালাবার রাস্তাটাই বাড়িয়েছ, পালাতে পারোনি। সুখ ফাঁকি দিয়েছে যত, তুমি দুর্বল হয়েছ তত। 
তবে ঈশ্বর? আরে বাবা খালি ঈশ্বর ঈশ্বর করো কেন? আগে চোখটা পরিস্কার হোক দেখবে, যাকে অ্যাদ্দিন খুঁজে বেড়িয়েছো, চিরটাকাল তারই বুকের ওপর বসে রয়েছো। শুধু নাড়ির যোগটা টের পাওনি। কারণ ভিতরে আসোনি।