প্রায়ই দেখছি নানা হাউজিং কমপ্লেক্সে বিভিন্ন সংস্থা থেকে ভ্যাক্সিনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই কাজটা আরেকটু বৃহৎ পরিসরে ভাবা যায় না? আর কদিন পরেই দুর্গাপুজোর জন্য সাজ সাজ রব উঠবে। প্রচুর প্রচুর টাকা চাঁদা তোলা হবে, প্যাণ্ডেল হবে, লাইট হবে ইত্যাদি। হোক। সে তো হবেই। কিন্তু সেই সব পুজোর আয়োজক কমিটিরা যদি সামর্থ্যহীন মানুষগুলোর জন্য ভ্যাক্সিনের ব্যবস্থা করে দেন তাহলে কেমন হয়? সরকার থেকে তো দিচ্ছেই। সে ব্যবস্থা তো চলবেই। কিন্তু সবাই যেভাবে তৃতীয় ওয়েভের কথা বলছেন সেটা যথেষ্ট আশঙ্কার। দেখুন যত বেশি সংখ্যক মানুষ ভ্যাক্সিন পেয়ে যাবেন যত তাড়াতাড়ি, আপনি আমি তত বেশি সুরক্ষিত থাকব। এটা বাস্তব। আর তৃতীয় ওয়েভ যদি সত্যিই বাচ্চাদের পক্ষে বেশি ভয়ানক হতে চলেছে তবে তো আমাদের সবার শীঘ্র ভ্যাক্সিনেটেড হওয়াটা আরো আগে দরকার।
একটা কথা মনে পড়ল। আপনাদেরও নিশ্চয় অনেকের মনে আছে। বিদ্যাসাগরকে একবার তাঁর মা বলেছিলেন যে গ্রামে যদি একটা অন্নসত্র খুলে দেওয়া যায় তবে আর দুর্গাপুজো না করলেও চলবে। বাচ্চাগুলো যেন না খেয়ে স্কুলে না যায়। সেই আসল পুজো।
কথাটা ভেবে দেখা যেতে পারে নাকি? দুর্গাপুজো প্রতি বছর হবে। কিন্তু এবার না হয় কোভিড অসুরকে মা ভ্যাক্সিন হয়ে বধ করলেন। এইবার না হয় আগমনীর সুর এই মহাযজ্ঞের মন্ত্রেই বাজুক। মাকে মাটির প্রতিমায় তো প্রতি বছর ডাকছি। এবার না হয় মা ভ্যাক্সিনরূপেণ সংস্থিতা হোন। ক্ষতি কি।
সরকার সরকারের মত কাজ করুক। আমরাও না হয় পাশাপাশি হাল ধরি। প্রাইভেট সংস্থা থেকে কিনে অন্তত প্রথম ডোজটাও যদি দিয়ে দেওয়া যায় সেই সব অসংখ্য মানুষদের যাদের প্রতিদিন রাস্তায় বেরোতে হয় অথচ তাদের ভ্যাক্সিন কিনে নেওয়ার সামর্থ্য নেই। এতে করে কি হবে পুজো কমিটিরা এগিয়ে এলে কাজটা আরো বহুগুণ বেগে এগোবে। তৃতীয় ঢেউ জন্মানোর আগেই আমরা নিজেদের রাজ্যকে অনেকটা সুরক্ষিত করে ফেলতে পারব। হয় না? একে শিবজ্ঞানে জীবসেবা ভাবা যায় না? এর থেকে বড় পুজো আর কি হতে পারে, একটু ভেবে দেখবেন প্লিজ। আমি জানি আমি অত্যন্ত নগণ্য মানুষ। আমার এ অনুরোধের শক্তিও তেমন কিছু নেই। তবু একবার ভেবে দেখুন প্লিজ, সবাই সুরক্ষিত হলেই আমি আপনি আমাদের বাড়ির বাচ্চাগুলো সুরক্ষিত। আসন্ন উৎসবে এতগুলো টাকা যখন ঢেউ তুলবেই, তখন সে ঢেউ না হয় আরেকটা ঢেউ আটকানোর জন্য কিছুটা অন্তত এগিয়ে আসুক।
(আরেকটা কথা, অযথা ভ্যাক্সিনের বিরোধী কোনো কথা লিখবেন না অনুগ্রহ করে এই লেখার সঙ্গে। কারণ আমি এই ব্যাপারে ভীষণ গোঁড়া। আমি বিজ্ঞানের সঙ্গে মরতে রাজী আছি, কিন্তু শঙ্কা বা কুসংস্কারের সঙ্গে হাত ধরে মরতে রাজী নই।)