কুয়ো ঝালাতে লোক এলো। বলল, কদ্দিন পরিষ্কার করা হয় না, এত পাঁক! তাই তো এত গন্ধ!
কথাগুলো শুনতে শুনতে, গ্যাসের আঁচটা কমিয়ে দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো সে। রোদ এসে পড়েছে কুয়োতলায়। নতুন জল উঠছে কুলকুল করে। কুয়ো ভরে উঠছে। দুটো প্রজাপতি গাঁদাফুলের উপর বসে। ভাগাভাগি করে। গ্যাসের উপর ঢাকনা দেওয়া থালাটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। ছুটি চায় সে। কিসের থেকে?
ভালোবাসায় পাঁক জমেছে। চারদিক বন্ধ। মাকড়সার জালের মত স্পষ্ট, চটচটে ভালোবাসার বুনটে সব নির্জীব হয়ে যাচ্ছে। আত্মসম্মান মানে কি? কুয়োপাড়ের সকালের রোদ। এই হালকা লাগা, স্নিগ্ধ লাগা নিজেকে।
সে বলল, আমি যদি আর কোথাও না থাকি? ভালোবাসার মূল্য দিতে দিতে, সুরক্ষার মূল্য দিতে দিতে, নিশ্চিত জীবনের মূল্য দিতে দিতে যেটুকু বাকি আছে সেটুকু নিয়ে যদি বেরিয়ে যাই? কোথায়? সেটা বড় কথা নয়, বেরিয়ে যাওয়াটাই বড়। তবে?
কুয়োর কাজ করা লোকেরা টাকা চাইল। রান্নার তেল হাত ধুয়ে, টাকার ব্যাগ খুলে টাকা কটা বার করে দিতে দিতে মনে হল, বাঁচব তো?
বাঁচার দুটো মানে। সমাজে বাঁচা, নিজেতে বাঁচা। সমাজে বেঁচে থাকে শরীর, লিভিং সার্টিফিকেট, নিয়ম, প্রথা। নিজেতে? প্রাণ। উৎসাহ। শিকারস্পৃহাহীন ভালোবাসা। তুমি প্রেমিক নও, তুমি ব্যাধ। তুমি শিকারী। প্রেম বলে তো আদতে কিছু নেই। আছে অভ্যাস। অভ্যাস আর অভ্যাস। বিকিয়ে দেওয়ার। মেনে নেওয়ার। মানিয়ে নেওয়ার।
রান্নাঘরের কাজ শেষ। সে ছাদে এলো। ভেজা কাপড় শুকাচ্ছে একা একা। সময় লাগবে। আজ প্রথম মনে হল প্রেম মানে শান্তি, প্রেম মানে আনন্দ। প্রেম মানে সুখ কে শিখিয়েছিল? কত বড় ভ্রমে ছিল সে!
ভেজা কাপড় গালে ঠেকালো। কারোর বাড়ির কুকারের সিটি পড়ছে। সময় হলেই নামানো হবে আগুন থেকে।
তার মনে হল তার যেন সময় হয়েছে। অনেক পুড়েছে সে। আর নয়। এবার রাস্তা চাইবে। নাটুকে জীবন না। শান্ত জীবনে। যেখানে ঘটনার পর ঘটনা বানিয়ে রস নিংড়ে বাঁচতে চাওয়া নয়। যেখানে শান্ত প্রজাপতি ডানায় রোদ নিয়ে বসে থাকে নীরব ফুলে। নিঃশব্দ আকাশের নীলের গভীর আশ্বাসে। তার মনে হল সে রাস্তা দেখতে পাচ্ছে। কদিন পরেই হবে স্পষ্ট। মানুষ নিজেকে বাঁধে বাঁধনের মোহে। তার সে বাঁধন যেন হচ্ছে আলগা। এবার সে রঙ খুঁজে পেয়েছে, যার নাম নীল।