আজ প্রেমোৎসব উদযাপনের দিন। যে প্রেক্ষাপটেই হোক না কেন। এর বিরোধিতা করার কোনো কারণ আমার মনে আসে না। কেউ কেউ বলেন প্রেমের আবার উদযাপন দিবস হয় নাকি? সে তো সারা বছরের রোজদিনই। খুব ঠিক কথা। তা একদিন একটু বেশি করে উদযাপিত হলে ক্ষতি কি? রোজ খাই বলে কি আর নেমন্তন্ন বাড়ি যাই নে? নাকি রোজ বাড়ির ঠাকুরকে নকুলদানা দীপ ধূপ দিই বলে বড় দূর্গোৎসবে, কি অন্য ধর্মীয় উৎসবে যোগ দিই নে? খুব দিই। রোজ পোশাক পরলেও সেদিন বিশেষ ভাবে, বিশেষ রঙের, বিশেষ কায়দার পোশাক পরি। এও সেরকমই আর কি। বিশেষ ভাবে ভালবাসার কথা ভাবা।
প্রেম যদিও ভাবের বস্তু, তবু যা চারদিকে দেখি তাতে ব্যাপারটা পুরোপুরি বায়বীয় বলে মনে হয় না। প্রেমকে বাস্তবায়িত করতে অর্থের একটা বড় রকমের দায়িত্ব আসে। আমি কাউকে ভালোবেসে তার সাথে চিরটাকাল কাটাব, তাই সেই ভাবটাকে মজবুত করতে উকিল লাগে। যতই 'যদিদং হৃদয়ং অং বং ছং' আওড়াও, ম্যারেজ সার্টিফিকেট ছাড়া ভুলছিনে বাপু, হুঁ! লোকজন ডেকে খাওয়াও, অর্থাৎ কিনা ভালবাসাটার একটা সামাজিক দড়ি চাই, সব্বাইকে জানিয়ে, সাক্ষী রেখে এই প্রতিজ্ঞে করলুম আমরা একসাথে হলুম।
তবে কি কি আসল? টাকা, আইন, সমাজ (মানে পাড়াতুতো, আত্মীয়স্বজনতুতো সমাজ) – এই তিনের বাঁধন।
এরপর আসবে লৈঙ্গিক বিধান। অর্থাৎ পুরুষ হলে প্রেমের দায় এক রকম আর স্ত্রী হলে প্রেমের দায় আরেক রকম। প্রেমের অনুভূতি যতই এক প্রকার হোক - পুং-এর ঘর, স্ত্রী ঘরণী। আমি শুয়ে শুয়ে বার্ট্রাণ্ড রাসেল পড়ব, কি বিধানসভা লোকসভা সামলাব, তুমি চা করবে। তখনই অবসর নেবে যখন আমি পুং নামক জীবটির তাতে সামাজিক, কি কারুণিক, কি অসহায়িক সম্মতি আছে। কারণ তুমি দ্বিতীয় লিঙ্গ। আমি পুং প্রথম লিঙ্গ। (আর ওরা তৃতীয় লিঙ্গ- থাক থাক আমরা বড় সামাজিক জীব, যখন তখন ওদের নাম করতে নেই, রাম রাম)।
অর্থাৎ কি না প্রেম বস্তুটির বায়বীয় দিকটার এই শর্তগুলো পুরোপুরি বা বেশিরভাগের মত পূরণ হলে টিকতে পারে। দাবি-দাওয়া, লাভ লোকসানের হিসাব তো আছেই। আর আছেন অহং ও তার পরিবার। মানে তার বাচ্চারা- ঈর্ষা, অভিমান ইত্যাদি। তা স্বল্পে মিটল তো ভাল, না হলে রাগারাগি, হাতাহাতি, কোর্টাকুর্টি।
তাই বলি ভায়া প্রেম করতে রীতিমত এলেম লাগে। তার চাইতে সে সবের থেকে প্রেমকে বাঁচিয়ে অন্তত একদিনের জন্যই সই তার বিশুদ্ধ রূপটা আস্বাদন করলে ক্ষতি কি?
আজ না হয় উল্টোটাই হোক। আজ অকারণেই বলিই না হয় – আমি ভালোবাসি, ভীষণ ভালোবাসি তোমায়। আজ ওর কিছু কাজ আমিই না হয় করি। অপটু হাতে না হয় ভুলই হল, রান্না হল নুনে পোড়া, চা হল কড়া তিতে, হোক। তবু হোক। কথা বেসামাল হোক, কতটা হতে পারে দেখাই যাক না। আমি দেখেছি, খাঁচায় বদ্ধ পাখি, বহুদিন পর উড়তে পেলে আকাশকে ভয় পায়। তার নিজের জন্মগত অধিকারের আকাশকে ভয় পায়! নিজের জন্মলব্ধ ডানাদুটোকে করে অবিশ্বাস। কয়েক পা এগিয়ে সে আবার খাঁচার আশ্রয়ই খোঁজে অনেক সময়। তবে সব পাখি না, কেউ কেউ তবু জোর করে উঠানের আমডালটায় গিয়ে বসে সাহস করে। দেখেছি তো।
দাও আজ খাঁচাটা খুলে। ভয় নেই সে এক উড়ানে আকাশটা পার হয়ে যাবে – এমন ভালবাসার শক্তি তাতে নেই, তুমিই দাওনি তাকে। তবে সম্ভাবনাও কি নেই? আছে আছে আছে। সেই সুযোগটাই আজকের। সেই পূজোর সময় যেমন খানিক ভুলভাল খাওয়াই যায়, কেউ কিচ্ছুটি মনে করে না, এমনকি চিরকেলে বাঙালী পেটও না – দেখোই না কিছুটা বেহিসাবী প্রেমে ভেসে আজ। খুব ক্ষতি হবে না। প্রমিস!