উৎসবের পিছনে এককীত্বের একটা খোঁচা থাকে। সব উৎসবের। আমরা যে প্রতিদিন বিচ্ছিন্ন থাকার অভ্যাসগুলো সযত্নে গড়ে তুলি- তার বিরুদ্ধে একটা তো কিছু করা চাই! জানছি তো সে অভ্যাস ধীরে ধীরে আমায় রুক্ষ শুষ্ক করে তুলছে। অথচ তার প্রয়োজনকে অস্বীকার করার জো নেই। তাই এ ব্যবস্থা মন্দ না। ক'দিন চলুক রোজকার অভ্যাসের বিপরীত গতি। সকালে রুটি না, লুচি। সাত তাড়াতাড়ি ওঠা না, বেলায়। নিয়মে খাওয়া না। নতুন খাওয়া, তাও অসময়ে। নতুন পোশাক, কাজের না, কিছুটা দেখাবার, কিছুটা নিজেকে অন্যভাবে দেখবার। কোনো তাড়া মানব না। আজ ওই 'অভ্যাস' দৈত্যের কোনো চোখ রাঙানী গ্রাহ্যের মধ্যেই আনব না। দিন গুনব না, সময় গুনব না (মনে মনে যদিও হিসাব চলতেই থাকে। ছুটি ফুরানোর হিসাব)। মুশকিল হয় কিছু মানুষের একাকীত্ব ঠিক এই সময়েই অত্যন্ত তীব্র হয়ে ওঠে। শারীরিকভাবে অক্ষম, বয়সের ভারে বিচ্ছিন্ন মানুষগুলোর অসহায় মুখ বড্ড বেশি অসহায় হয়ে ওঠে।
আরেকরকম একাকীত্ব দেখেছি। হীনমন্যতার একাকীত্ব। কিছুটা সে সমাজের শিকার, কিছুটা নিজের বড় হয়ে ওঠার অতি শাসন। তারা চাইলেও কিছুতেই মূল স্রোতে নিজেকে মিলিয়ে নিতে পারেন না। সব ডাক, বাইরের দরজা দিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়। বাইরের সাজসজ্জার উপর তার জমে গভীর ধিক্কার, উচ্ছ্বাসের উপর তার কঠিন আক্রোশ - এ সবই যেন তার ব্যর্থতাকে খুঁচিয়ে দিয়ে প্রকাশ করার কৌশল। তার বিদ্বেষ, তার এই অতিকঠিন আবরণকে সেই-ই পারে ছিঁড়ে ফেলে বাইরে আসতে। তার জন্য চাই একটু সহানুভূতিসম্পন্ন হাত আর তার নিজের ওপর নিজের করূণা না, নিজেকে স্বীকার করার সহজ বুদ্ধি আর সাহস।