Skip to main content

কলকাতায় কিছু বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ, কবি ইত্যাদিরা জমায়েত হয়ে গোমাংস ভক্ষণ করে প্রতিবাদ জানালেন - খাবারে কোনো ফতোয়া মানছি না। 
অবশ্যই এঁরা উদারচেতা। তা প্রমাণ করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতার চেয়ে নিরাপদ স্থানও নেই, এও তাঁরা ভালভাবেই জানেন। 

গোমাংস নিয়ে রাজনীতি অন্যায়। স্বীকার করি। কে কি খাবে তা সরকার স্থির করতে পারেন না তাও মানি। কথা হল প্রতিবাদের কি আর কোনো পথ নেই?


হিন্দুধর্মে শিবসেনা, আর এস এস শেষ কথা বলে কি? যে ধর্মটা হাজার হাজার বছর ধরে সংস্করণের পথে হেঁটে হেঁটে, নিজেকে অজস্রবার পরিবর্তন, পরিমার্জনের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে চলেছে, তার আবেগকে আঘাত করা এত সহজ কেন আপনাদের কাছে? সেখানে প্রতিবাদটা কম বলে? প্রাণ সংশয়টা কম বলে? আপনারা এতই যদি উদারচেতা আমার প্রশ্ন হল একটা বিশেষ ধর্মের গোঁড়ামির বলিদান পার্শ্ববর্তী দেশে যখন একজনের পর একজনকে দিতে হচ্ছে, আপনারা এত নীরব কেন? কলম ধরছেন না কেন? ব্লগ লিখছেন না কেন? সরাসরি আক্রমণে পিছিয়ে আসছেন কেন যা অন্ধকার তার বিরুদ্ধে? তা অন্যদেশের সমস্যা বলে? শুধু ঘটনাটার "তীব্র নিন্দা" সেরেই হাত গুটাচ্ছেন কেন? 

আজ যে ধর্ম আমায় বিশ্ববাসীকে নিজের বলতে শিখিয়েছে, কবীর, দাদু, নানক, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, মহাত্মাজীর মত মানবতাবাদীর জন্ম দিয়ে এসেছে - তার পরিচয় ক'টা রাজনৈতিক দলের ঔদ্ধত্য হতে পারে না। কোনোদিন হবে না। সে নিয়ে আমার সংশয় নেই। আমার লজ্জা আপনাদের নির্লজ্জতা, ঔদ্ধত্য দেখে। এক পক্ষকে সমর্থন জানাতে হলে অন্য পক্ষের আবেগকে উপেক্ষা করা যেতে পারে, এ অত্যন্ত দুর্বল মননের পরিচয়। 

সামাজিক অবদানের দিকে খুব তুচ্ছভাবে চেয়ে দেখুন, অধুনা হিন্দুধর্মের দ্বারা অনুপ্রাণিত হাসপাতাল, স্কুল, কলেজে ধর্মের রঙ দেখে চিকিৎসার বা শিক্ষার হেরফের করা হয় কি? বেলুড়মঠে এখনো বিজ্ঞানের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়, তাঁরা গোমাংস না খেয়েই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে দাঁড়ান। জানি এগুলো খুব তুচ্ছ কথা। তবু এই তুচ্ছ কথাগুলোই আপনারা ভুলে যান বলে আশ্চর্য লাগে। আপনাদের তাতিয়ে দেওয়া যদি এত সহজ হয়, তা হলে সাধারণ মানুষের কি হবে? 

প্রতিবাদের অন্য পথ ভাবুন। ভয় হয়, কাল যদি এ সরকার বয়স্ক মহিলাদের শাড়ি পরা বাধ্যতামূলক করেন আপনারা কি আপনাদের বাড়ির বয়স্ক মহিলাদের মিনি স্কার্ট পরিয়ে এসপ্ল্যানেডে প্যারেড করাবেন? মাফ করবেন কথাটা একটু রুঢ় হয়ে গেল। তবু একবার একটু অন্যভাবে ভেবে দেখতে অনুরোধ করি। হাজার হোক, বাঙালী তো, তাই অতীতের কিছু ধীর স্থির মুখ বড় খোঁচা দেয়, বিরক্ত করে।