Skip to main content
তুলসীমঞ্চ

 


পরাশরবাবুর শরীর ভাল যাচ্ছে না। বয়স হয়েছে তা প্রায় পঁচাত্তর তো হল। স্ত্রী গত হয়েছেন বছর দশেক হল। তারপর থেকেই বেঁচে থাকাটা কেমন নিয়ম মাফিক হয়ে পড়েছে। সুগার, প্রেসার তো আছেই, তার সাথে হৃৎযন্ত্রটাও জবাব দেবে দেবে করছে।
আজ দুপুরবেলা থেকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে। বাড়ির সামনে একটা তুলসী মঞ্চ তৈরী করাচ্ছেন। বিমলার ইচ্ছা ছিল। বাড়ীটার কাজ শেষ করতে করতে আর মনে ছিল না। সে যে এত তাড়াতাড়ি ফাঁকি দেবে কে জানত।
কদিন ধরে যা বৃষ্টি এই সামান্য কাজটাই করে ওঠা হচ্ছে না। সুকান্তকে বলেছেন, বৌমাকে বলেছেন, বাবা মায়ের এই ছোট্ট সাধটা পূর্ণ কর বাবা। আজ করছি, কাল করছি বলে সে আর হয়ে উঠল না। তারা দুজনেই চাকরী করে। মাইনেও ভালই। তাও.. ছেলেকে পড়াতেই নাকি অনেক খরচ। উনি বোঝেন না, চার বছরের ছেলেকে পড়াতে আর কত খরচ! তিনি সারা জীবন একটা প্রাইভেট ফার্মে স্টোর কিপারের কাজ করে এসেছেন। রিট্যায়ারের পর কি বা সম্বল ছিল তার। বিমলা সারা জীবন তাকে কোনো দিন অসুবিধায় ফেলে নি। মারা গিয়েও না। খাওয়ার পর হঠাৎ তার খুব বুকে ব্যাথা শুরু হল। ডাক্তার ডাকতে ডাকতেই সব শেষ।
আজ ভাবেন, ভাগ্যিস সে কোনো কঠিন অসুখে ভোগেনি। কি করে চিকিৎসা করাতেন? দিন যত যাচ্ছে ছেলে আর বৌমাকে তত অচেনা লাগছে। যাক গে। ওদের জীবন ওরাই বুঝুক। তার নিজের আর কতদিন।
তাড়াতাড়ি কর বাবা! দুদিন বৃষ্টি যা একটু ধরেছে, পরাশরবাবু উদ্বিগ্নতার সাথে মিস্ত্রীকে বললেন। 
তুলসী মঞ্চ তৈরী হল। তিনি পাশের পাড়ায় তুলসীর চারা আনতে গেলেন বন্ধুর বাড়ি। আর ফেরা হল না। রাস্তাতেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন। সব শেষ।
ওনাকে শুইয়ে রাখা হয়েছিল তুলসী মঞ্চের পাশেই। সুকান্ত দাহ করে ফিরে আসার পরেই রণিতা বলল, শোনো। 
বাড়ি ভর্তি আত্মীয়। সুকান্ত শোয়ার ঘরে ঢুকতেই রণিতা বলল, তুমি কালকেই ওই তুলসী মঞ্চ ভাঙতে মিস্ত্রী ঠিক করো। গ্যারেজটাতে তাড়াতাড়ি হাত দিতে হবে বুঝলে, আমি আজই একটা দারুণ গাড়ির মডেল দেখেছি নেটে তোমরা যখন শ্মশানে গিয়েছিলে। বাজেটের মধ্যেই।
ওদের ছেলে বাবলু শুয়ে ছিল খাটেই। সে চীৎকার করে বলল, না ওটা ভাঙলে আমি ওখানে ক্রিকেট খেলব বন্ধুদের সাথে, গ্যারেজ হবে না।

(ছবিঃ সুমন দাস)