ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়ছে। শীতটা জাঁকিয়ে। আলোটা অফ করে বাথরুমের লাইটটা অন রেখেই বিছানায় এলাম। নতুন জায়গা। একটু অস্বস্তি হচ্ছেই। কৃষ্ণনগরের এই দিকটা প্রত্যন্ত গ্রাম। চারদিক বেশ ফাঁকা ফাঁকা। মাসিদের নতুন বাড়ি এটা। ওরা দুদিন পর আসবে। পুরী গেছে।
খাটের তলায় কিসের আওয়াজ? আলো জ্বেলে শোয়া অভ্যাস নেই। ঘুম আসে না। বাথরুমের আলোটা বারান্দায় এসে পড়েছে। কিছুটা আমার ঘরের পর্দার তলা দিয়ে ঘরে এসে পড়েছে।
ঘুণপোকা। মাসি বলেছিল মাকে, সারারাত কড়কড় করে আওয়াজ হতে থাকে খাটের নীচে। এটা সেই আওয়াজ। জল তেষ্টা পাচ্ছে। খিচুড়ি বানিয়েছিলাম। খিচুড়িটা বেশি খাওয়া হয়ে গেছে। টয়লেটেও যেতে হবে মনে হচ্ছে।
উঠতে গিয়েই মনে হল পর্দার ওপাশে কে যেন দাঁড়িয়ে। হিমের স্রোত সারা শরীর দিয়ে নেমে গেল। কে? ছায়া? কিসের? হঠাৎ মনে হল আমার কোলের উপর রাখা কম্বলটা কেউ যেন টানছে। না টানছে না, চেপে বসে যাচ্ছে কোলের সাথে। আমি উঠতে পারছি না। পর্দার ওদিকে সেই ছায়াটা স্থির দাঁড়িয়ে। কি হচ্ছে? মাথার ভিতরটা পুরো ব্ল্যাঙ্ক! কিচ্ছু অনুভব করতে পারছি না। রাম নাম করব? করলাম। কিচ্ছু হচ্ছে না। খুব মেকানিক্যাল শোনাচ্ছে।
হঠাৎ সামনে রাখা আমার মোবাইলটা অন হয়ে গেল আপনা থেকেই। প্যাটার্নটা কেউ খুলে ফেলল। ওয়াটস অ্যাপটা খুলল। কনট্যাক্টস থেকে প্রত্যুষ নামটায় থামল। ভিডিও কলিং? কিন্তু কেন? ও তো গত মাসে পাখার সাথে গলায় দড়ি...
ওই তো প্রত্যুষের ঘরের সাদা পাখা। প্রত্যুষ টুল এনে খাটের উপর রাখল। স্ক্রীণটা কাছে এনে ফ্রন্ট ক্যামেরায় চোখ রাখল, আমার স্ক্রীণ জুড়ে প্রত্যুষ তাকিয়ে। হিম শীতল, মৃত মানুষের চোখ... টুলে উঠছে... ওই তো কাকিমার সেই সবুজ ওড়নাটা… না প্রত্যুষ না... না... না.....
প্রত্যুষ ঝুলে আছে মোবাইল স্ক্রীণে। সামনে পর্দার পিছনে কেউ নেই। আমার বাঁদিকে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে, প্রত্যুষ। মাথার উপর ফ্যানটা ঘুরছে। কে চালালো... কখন চলল… আমার শীত করছে না…
কানের কাছে ফিসফিসে গলা… টুল আনছি... ওঠ... ওঠ... আয়… আমার একা লাগছে... আয় আয়... আয়....