রজত মিত্র, বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী, দিল্লীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের উপর একটা আর্টিকেল লিখেছেন আজ টাইমস অব ইণ্ডিয়ায়। একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ লাইন লিখে শেষ করছেন,
"Never make the mistake of thinking that a toxic relationship will improve, that a partner who wants control at all costs will change".
এটা যত তাড়াতাড়ি মেনে নেওয়া যায় তত মঙ্গল। শুরুটা তো একদিনে একটা ঘটনায় হয় না। যে ভিক্টিম, সে নিশ্চয়ই আগে কিছু কিছু আভাস পায়। কিন্তু "আরেকবার চেষ্টা করে দেখি" এই লুপ থেকে বেরোতে দেরি হয়ে যায়। এরকম অনেক উদাহরণ আছে।
দীর্ঘদিনের একটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ অনেক পুরুষকে বুঝতেই দেয় না সে যেটা করছে সেটা মানবতন্ত্রের নিরিখে পাপ। বিবেকবোধটা সমাজগত, জিনগত তো নয়। আজ যে টুকরো টুকরো দেহ দেখে আতঙ্কিত হচ্ছি, এরকম বহু টুকরো টুকরো আত্মসম্মান নিয়ে বহু মেয়ে সংসারে টিকে আছে শুধু বদনামের ভয়ে, পরিবারে আর সমাজের কাছে। এগুলো গা সওয়া হয়ে যায়। ভয়টা সেখানেই। ধীরে ধীরে অনেক কিছু গা সওয়া হয়ে যাচ্ছে আমাদের। একটা 'সব চলতা হ্যায়' টাইপের ছদ্ম, সিউডো স্মার্টনেসে আক্রান্ত হচ্ছি আমরা ধীরে ধীরে। আজকাল প্রতিবাদটাও যতটা না নীতিবোধজাত, তার থেকে বেশি মিডিয়ায় বিজ্ঞাপিত হওয়ার লোভজাত। এও ভয়ংকর।
ইন্টারনেট অনেক শিক্ষা দিচ্ছে। খুন করে কুচি কুচি করে কাটার প্রেরণাও দিচ্ছে। আরো অনেক অনেক ঘৃণ্য কাজের প্রেরণা আসছে নেটে প্রচারিত নানা ওয়েবসিরিজ, সিনেমা ইত্যাদি থেকে। হয় তো এই জন্যেই সেন্সরশিপের একটা নূন্যতম দরকার আছে সমাজে। বাইক কি গাড়ি কেনার টাকা থাকলেই যেমন সে সব কিনে নিয়ে রাস্তায় নেমে যাওয়া যায় না, তার জন্য একটা পরীক্ষা পাস করে লাইসেন্স নিতে হয়, তেমনই। সমাজের কত শতাংশ মানুষের এইসব ঘৃণ্য অপরাধের এত ডিটেলিং এ সাজানো ওয়েবসিরিজ দেখার মানসিক যোগ্যতা আছে? কে বিচার করবে এর? কেউ না। বিনা লাইসেন্স পরীক্ষায় বিদ্যুৎ বেগে গাড়ি দৌড়াচ্ছে। আমাদের এর মধ্যেই চলাফেরা অভ্যাস করে নিতে হবে। আমাদের এই যে নানা কুৎসিত, বিকৃত মানসিকতার, শিরদাঁড়ায় শিহরণ জাগানো নাটক দেখার লোভ, আমাদের কোন অল্টার ইগোকে সামনে আনছে ভাবতে হবে। এর থেকে ত্রাণের উপায় নেই। কারণ এটা ব্যবসা দিচ্ছে। যা-ই ব্যবসা দেয় তাই আমাদের কাছে গ্রাহ্য এখন।
এর মধ্যেই রাস্তা খুঁজতে হবে। এর বিপরীত কি উপায় আছে ভাবতে হবে। সমাজবিজ্ঞানীদের উপর সে দায়িত্ব। সচেতন, সজাগ নাগরিকদের সে দায়িত্ব কখন রেড ফ্ল্যাগটা তুলতে হবে সন্দেহজনক কিছু দেখলেই।
সর্বোপরি কোনো টক্সিক সম্পর্ক যে মধুরেণসমাপয়েৎ এ হয় না, সে যত আন্তরিক, যত্নশীল চেষ্টাই করা যাক না কেন, এ সত্যকে মেনে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজেকে সরিয়ে আনতেই হবে। যে আমাকে চায়, সে আমার ভালোলাগা, রুচি, ইচ্ছা সবকে মর্যাদা দেয়। আর যে নিজেকে চায়, সে আমার মধ্যেই নিজের ক্লোন বানাতে চায়, আমার সব কিছুকে তার ধাঁচে ঢেলে। এ ভালোবাসা নয়, এ অতিযত্ন অসুস্থতা। এ অতিমনোযোগ অস্বাস্থ্যকর। এটা বুঝতে হবে।