Skip to main content


-হ্যালো, সায়ন্তনী?
-বলছি
-আমি কুশল
-হুঁ
-আমার খুব জ্বর
-এটা বলতেই কি ৬ মাস তেরোদিন বাদে ফোন করলি?
-তোর এতটা মনে আছে!
-ন্যাকামো না করে, কেন ফোন করেছিস বল
-আমার খুব জ্বর
-শুনলাম তো। আমি ডাক্তার নই, নার্স নই, না তো আমার বাবার ওষুধের দোকান আছে।
- জানি। আমাদের স্কুল লাইফ শেষ হতে আর দেড়মাস, দেখেছিস? উচ্চমাধ্যমিকের পর কে কোথায় চলে যাবো কোনো ঠিক আছে? তাই ভাবলাম তোর সাথে একবার যদি দেখা....
-আমি ফোন রাখছি, এসব ভাটের কথা শোনার আমার সময় নেই
-প্লিজ প্লিজ ফোন রাখিস না, দেখ আমি এই জ্বরের কদিন শুধু তোর কথাই ভেবেছি শুয়ে শুয়ে
-বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না? তোর শেষ দিনের কথাগুলো আমার সারা জীবন মনে থাকবে। আমি নাকি তোর যোগ্য নই। তোদের বাড়ির স্টেটাস আমাদের বাড়ির সাথে কোনোদিন মিলবে না। আমি কিচ্ছু ভুলিনি কুশল
-আমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আমার বাড়িতে সম্পর্কটা জেনে যাওয়ার পর হেভি ক্যাঁচাল হয়। বাবা আমাকে মাসির বাড়ি ব্যাঙ্গালোরে পাঠিয়ে দেবেন থ্রেট করেছিলেন। এমনকি মা ন-মাসির সাথে কথাও বলেছিলেন। আমায় ন-মাসির ছেলে রিটন বলল। আমরা সমবয়সী।
-এখন এ কথাগুলো বলার মানে?
-বলছি, একটু সময় দে। আমি সব বলার পর যদি মনে হয় আমি ভুল, তো আমি সারাজীবন তোকে ডিস্টার্ব করব না কথা দিলাম। শুনছিস?
-বলে যা, যদিও বলে কোনো লাভ নেই। তবে তুই না বলে ছাড়বি না এও জানি। তোর হাত থেকে চিরকালের জন্য বাঁচার এই উপায়। বকে যা। আমি শুনছি
- থ্যাংক ইউ। তো বাবার থ্রেট খেয়ে, মায়ের ওরকম মরিয়া ভাব দেখে আমি পুরো ঘেঁটে গেলাম। ভাবলাম এত বছর এই দমদমে আছি, সব ছেড়ে যেতে হবে? আর মেসোটা মাল বিশাল খড়ুস। আমার লাইফ পুরো হেল হয়ে যাবে। তখন এত চাপ খেয়ে গেলাম! মনে হল তুই লাইফ থেকে সরে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
-গিয়েছিল তো
-জানি না। তবে তারপর থেকে আমি নিজেকেই নিজে সহ্য করতে পারতাম না। টিউশানে স্যারেদের কাছ থেকে ঝাড় খেতে শুরু করলাম। রেজাল্ট খারাপ হতে লাগল। আর তুই জানিস কিনা জানি না, দুজনের সাথে ফ্লার্ট করেও...
-জানি, বীথিকা আর জুঁই। বীথিকা তাও ঠিক ছিল। তা বলে জুঁই! আর মালটাকে নিয়ে তুই আইনক্সে গিয়েছিলি সপ্তমীর দিন সন্ধ্যেতে। ওকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় যেতিস তো দেখতিস ওকে আর ফিরতে দিত না।
-সবই জানিস দেখছি।
- বীথিকাকে নিয়ে পঁচিশে ডিসেম্বর ব্যান্ডেল চার্চে গিয়ে ফিরে এসেছিলিস। আরে উজবুক আমরা যখন নাইনে পড়তাম আমি আর তুই গিয়ে কেস খেয়েছিলাম ভুলে গিয়েছিলি?
-কিন্তু বিশ্বাস কর, আমি একদিনের জন্য, কি এক মুহুর্তের জন্য ওদের ভালোবাসতে পারি নি। আমি...আমি.....
-মেয়েছেলের মত কাঁদিস না। পুরো কথাটা শেষ কর
-আমি অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়েছিলাম বেশ কয়েকদিন হল।
-তোর টাইফয়েড ধরা পড়ে। ১৯ জানুয়ারী।
-তাও জানিস! আমার ভুল আমি বুঝতে পেরেছি সায়ন্তনী। আমি ভীতু হয়ে গিয়েছিলাম। স্বার্থপরের মত নিজের দিকটাই ভাবছিলাম। কিন্তু আমি রিয়েলাইজ করেছি, তুই ছাড়া আমার কিচ্ছু হবে না। আমার তোকে পাশে চাই। তুই থাকলে আমি সব করতে পারি। তুই না থাকলে আমি সাইকেলটা পর্য্যন্ত ঠিক করে চালাতে পারি না। প্লিজ তুই ফিরে আয়, প্লিজ। আরেকটা জিনিস বলার আছে। তুই বিশ্বাস করবি কি না জানি না।
-কি?
-আমি জ্বরের ঘোরেও তোর নামই বলেছি। মা শুনে নিয়েছেন। তবে আশ্চর্য কি জানিস, বকেন নি। কাল বললেন, তোকে একবার নিয়ে আসতে। আমি তোকে ছাড়া বাঁচবনা...আমি কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইছি তুই ফিরে আয়..
আমি আর কোনোদিন রুড হবো না প্রমিস...কিরে?...সায়ন্তনী....হ্যালো....হ্যালো...তুই কাঁদছিস?
-না কাঁদতে যাব কেন তোর মত মাকড়ার জন্য। আমার ঠান্ডা লেগেছে। সিজন চেঞ্জে হয় এরকম। বল
-আজ বিকালে আসতে পারবি, মায়ের সাথে দেখা করতে?
-হুঁ
-কিরে, আসবি?
-ভাবছি। রাখলাম এখন।
পনেরো মিনিট পর কুশলের মোবাইলে মেসেজ এলো, বিকাল পাঁচটায় আসছি। বিল্টুদার কাছে পড়া আছে, ওখানে যাওয়ার নাম করে বেরোবো
কুশল মেসেজ করল, আমার ফোনে একটা কুড়ি টাকার টপ আপ মেরে দিস না প্লিজ। সব গচ্চা হয়ে গেল তোকে পটাতে গিয়ে।
কুশলের মোবাইলে মেসেজ এলো, শালা, তুই আর পাল্টাবি না।


(এই লেখাটা আমার কিশোর-কিশোরী বন্ধুদের জন্য নব বসন্তের উপহার স্বরূপ দিলাম। তোমাদের ভাল লাগলে খুশী হব )