Skip to main content

আগে মনে হত না কেউ তাকাচ্ছে। এখন মনে হয়। আমার বয়েস কত? মনে নেই। আমাদের বয়েস মনে রাখার কোনো প্রথা নেই। আমাদের পূর্বপুরুষেরা এসব নিয়ে মাথা ঘামাত না। আমিও ঘামাই না।

       এই যে আমার খাওয়া শেষ, আমি মাঠে বসে আছি, আমার গায়ে শীতের অল্প রোদ এসে পড়ছে, এ যে কি আরাম। তবে কি জানো আজকাল খেয়ে সে সুখ পাই না। সব ভেজাল, বিস্বাদ।

       তোমরাও বেশ কিছু বছর হল বড্ড বদলে যাচ্ছ। যাচ্ছ না? এই জগতের স্রষ্টা নিয়ে তোমাদের কত দলাদলি, কত নিয়ম। এক জগতের কত স্রষ্টা বানিয়েছ! আর তার কত নাকি পছন্দ অপছন্দ.... সব নাকি জেনে ফেলেছ..... হা হা হা... হাসি পায় তোমাদের মূর্খামি দেখে। জগতকেই বুঝলে না, তায় আবার জগত স্রষ্টার কথা নাকি বুঝে ফেলেছ... বোকার দল সব... আর এদিকে কথায় কথায় আমায় বোকা ঠাওরাও। এমনিতে আমাকে নিয়ে তো তোমাদের কোন্দলের অন্ত নেই। আমাদের পুরুষেরা অমন হাট্টাকাট্টা, বদমেজাজি... তবু তারাও অত জ্বালায় না যা তোমরা আমাদের জ্বালাও।

       আমি পূজ্য না খাদ্য – এ নিয়ে তোমাদের সমস্যা কোনোদিন মিটবে না। কেন বলো তো? আসলে যেটা সমস্যা সেটা মেটে। যেটা সমস্যা না, সেটা কি করে মিটবে? মিটবে না। তাই তোমাদের দেশে বারবার আমাকে নিয়ে তোমরা রাজনীতি করো। এক এক সময় আমার দুধ, আমার গোবর থেকে আমার অস্তিত্ব নিয়ে তোমরা এত মাথা ঘামিয়ে ফেল যে আমার লজ্জা লাগে। সত্যি করে বলো তো আমার বাঁচা মরায় তোমাদের কিছু আসে যায়? এখন তো আমাদের প্রজননের জন্য বাধ্যতামূলক ব্যবস্থাও করেছ। অর্থাৎ যখন দরকার আমাদের নিষিক্ত করতে তো তোমরা আমাদের ইচ্ছা অনিচ্ছার প্রশ্ন রাখো না। যখন দরকার অজানা অচেনা কোনো পুরুষের বীর্য এনে সিরিঞ্জে ভরে দিলে আমাদের গর্ভ নিষিক্ত করে। একবার জানতে চাইলে আমি সেটা চাইছিলাম কিনা? না। মিলনের সুখ পেলাম না, অথচ গর্ভের যন্ত্রণা পেয়ে গেলাম। ধন্যি জাত তোমাদের। তোমরা সময় বিশেষে বিজ্ঞানী আবার সময় বিশেষে ঠুলি আঁটা ধার্মিক।

       এখন রাস্তায় ঘাটে ঘুরতে ভালো লাগে না। তোমাদের চোখের দিকে তাকাতে ইচ্ছা করে না। তোমাদের সবার চোখে শয়তানি। তোমরা আসলে ভণ্ড। কিন্তু নিজেকে চালাক মনে করো। তোমরা আমাদের ব্যবহার করছ। আমরা জানি। কিন্তু কি করব বলো? আমাদের প্রাণীদের নিয়ে তোমাদের এ খেলা অনেক পুরোনো। কেউ আমাদের নিয়ে, কেউ বরাহ, কেউ পায়রা... হে হে হে..। অথচ কেউ তোমরা নিজেরা একে অন্যকে পবিত্র বলো না... সে বেলায় বলো এ পাপী... ও ম্লেচ্ছ... সে কাফের... হো হো হো...। কি বিদঘুটে জাত তোমরা মানুষেরা। আমার হাসি পায়। তোমরা যাকে ইট-সিমেন্টের দেবালয় বানিয়ে ডাকো, তার সাড়া পাও না, অথচ তাকে মিউজিয়ামের মমির মত বানিয়ে তার সঙ্গে কথা বলো। আর যাদের ডাকলে সাড়া পাও, তাদের কথা কানেও নাও না।

       এখন রাত হয়েছে। আমার ঘরের ফাটা ছাদের ভিতর দিয়ে চাঁদের আলো আসছে। সারা পৃথিবী ঘুমাচ্ছে। আমার ঘুম আসছে না। ভালো লাগে না কিছু। চাঁদের আলোও ঘোলাটে লাগে। কিছু দূরে আমার বাচ্চাটা ঘুমাচ্ছে। দেখো আমাদের কারোর মাথায় কোনো শয়তানি বুদ্ধি নেই। তোমরা হয় তো এখন কেউ চুরি করছ, কেউ কারোর উপর অত্যাচার করছ, কেউ কোনো অন্যায় মতলব পাকাচ্ছ মনে মনে। এই শয়তানি, অন্যায় – আসলে এগুলো দেখো সব তোমাদের মনের মধ্যেই জন্মায়। নইলে পৃথিবীতে এই শয়তানি, মতলবি বুদ্ধি - কিচ্ছু কোথাও নেই। তোমরা তা দিয়ে সারা পৃথিবীকে বিষাক্ত করে তোলো। আবার তোমরাই নাকি পবিত্র স্রষ্টার কথা শোনো, নাকি তার আদেশ অনুযায়ী চলো। কি ভণ্ড তোমরা না? তোমাদের মনে পবিত্রতা নেই বলে তোমাদের বাইরে এত নকল পবিত্রতার আয়োজন। আমাদের ওসব লাগে না। আমরা প্রকৃতির নিয়মের বাইরে যাই না, তাই প্রকৃতির দ্রোহীও হইনা। আর তোমরা...

       যাক গে... অনেক কথা বললাম... জানি তোমরা শুনতে পছন্দ করো না... তোমরা শান্তির কথা শোনো না... শুনবেও না... তোমরা খালি মিথ্যা মিথ্যা শান্তি খুঁজবে... অন্যের শান্তি ভঙ্গ করে নিজের উল্লাসের রাস্তা খুঁজবে... আর সুযোগ বুঝে আমায় জড়াবে...