তখন সন্ধ্যে। সূর্যের ঘরে ফেরার তাড়া। সেই তাড়াহুড়োয় পায়ের ধাক্কা লেগে সিঁদুরের কৌটো গেল উল্টে। সমস্ত সিঁদুর এসে পড়ল গঙ্গার বুকে। এ ঘটনা নিছকই আকস্মিক না ষড়যন্ত্র? অসীম সময়ের লীলাখেলা, আমি ক্ষুদ্র আয়ু জীব, বুঝি কি করে? সসীম অসীমের সামনে তেমন করে হাত পাতলে কি পায়? নির্বাক বিস্ময়। সেইটুকুই লাভ।
ধীরে ধীরে অন্ধকার হল। সময়ের সাথে, নদীর সাথে সব রঙ গেল হারিয়ে। আকাশে তারা উঠে গেল নিয়মমাফিক। অন্ধকার নদীর দিক থেকে আওয়াজ আসছে কুলকুল করে। কে বলবে একটু আগে এমন একটা স্বর্ণময় মুহূর্ত তৈরি হয়েছিল? প্রকৃতি কত সহজে ভুলে যায়। কত সহজে হাত ঝেড়ে উঠে পড়ে। যুগ যুগ ধরে বানানো জঙ্গল মুহূর্তের দাবানলে শেষ হয়ে যায়। প্রকৃতি আবার নতুন অঙ্কুর বোনে। কোথাও কোনো হতাশা নেই, ক্ষোভ নেই, বিষাদ নেই। সমস্ত বিষাদ, হতাশা, ক্ষোভ যেন আমার। আমার স্বাতন্ত্র্যে আমিই যেন কারাগারে অবরুদ্ধ, বিচ্ছিন্ন।
এবার ফিরতে হবে। মনের মধ্যে সন্তোষ সেনগুপ্তের গাওয়া গানটা বেজে উঠল, "অল্প লইয়া থাকি তাই মোর যাহা যায়, তাহা যায়। কণাটুকু যদি হারাই তা লয়ে প্রাণ করে হায় হায়।" কথা সুর রবীন্দ্রনাথের। হলে কি হবে, প্রাণটুকু ছুঁয়েছেন সন্তোষ সেনগুপ্ত যে!