তবে দাঁড়ালোটা কি? ওমিক্রনে ভয় পাওয়ার যোগ্যতা আমার আছে কি নেই?
সেখানের ডাক্তারেরা বলছেন, ভয় পাবেন না, আপাতত রোগের প্রকোপ তেমন কিছু না। হু বলছে, প্যানিক করবেন না, সাবধানে থাকবেন, এই বলেই তেদ্রোস কাকা আবার চশমাটা উপরে ঠেলে গম্ভীর মুখে বলল, সামনে পৃথিবীর খুব দুর্দিন। হে হে, সে বলতে কি আর তেদ্রোসকে লাগে? কথা হচ্ছে ব্যাটা কেমন জানি একটা ইনফরমেশান আতঙ্কবাদী হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা বলে তার যেন দুটো মানে হয়, এ যেন রায়গুণাকর ভরতচন্দ্রের কবিতা। "কোন গুণ নাই তার কপালে আগুন"। দুটো মানে হয় না? আমাদের বাংলার স্যারেরা ধরে ধরে বুঝিয়েছিলেন তো। কাব্য চর্চা থাক। ভাইরাস চর্চায় আসা যাক।
তো মোদ্দা কথাটা হল আপাতত যা জানা গেছে, তা হল ---
ক) ওমিক্রন যত ছড়ায়, তত মারে না।
খ) কোন ভ্যাক্সিনে আটকায় তা আপাতত বলা যাচ্ছে না।
এই পয়েন্টে আমার আবার কেমন গোলমাল ঠেকল। তা তোমাদের ওমিক্রন ছাড়া আগের গোত্রের বাকি ভাইরাসও তো বাপু ভ্যাক্সিন ডিঙিয়ে শরীরে সেঁধুলো। এমন উদাহরণ কত দেখলুম তো। সার্টিফিকেটে ছবি দেখিয়ে কত করে মানুষ বলল, ওরে বিজ্ঞানের মান না রাখিস রাখিস, এই যে ছবিটা আছে এঁর মান রেখে অন্তত ঢুকিস না। তা কে কার কথা শোনে। ভাইরাস আর কবে ধর্মকথা শুনল? তবে এটা ঠিক আগের বারের মত চিত্তির দেখায়নি। খানিক ভুগিয়ে নিস্তার দিয়েছে অনেককেই।
তো ওমিক্রন ভ্যাক্সিনের কথা শুনল কি না শুনল এই নিয়ে আর বসে থেকে লাভ কি বাছা! খালি লকডাউনটা আর না হলেই বাঁচা যায়।
গ) রায়গুণাকর তেদ্রোস আবার অভিমান করে বসল। সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকাও। তা করবে না? যেই না সরল মনে, সততার সঙ্গে ওরা নিজেদের দেশের মাটিতে ঘটা ভাইরাসের এই গোত্রান্তরের খবর দিল, অমনি তোরা ওদের ধোপা-নাপিত বন্ধ করে দিলি? তেদ্রোস বলল, এ আবেগী সিদ্ধান্ত।
নিন, এই মানুষটার যদি কথার কোনো মানে থাকে। শুরুতে বলেছিল, কোনো ভ্যাক্সিন হয় তো কাজ করবে না। তারপর বলল, করবে। তারপর বলল তোমরা গরীব দেশগুলোকে কেন ভ্যাক্সিন দিচ্ছ না, এই বলে ফাউচি আর মডার্নাকে হেব্বি বকাবকি করল। এখন আবার একদিকে বলে সব খুলে দাও, আবার বলে সামনে ভীষণ দুর্দিন।
তথ্য দিয়ে আতঙ্কিত করাকে কি বলা যায়? তথ্যাতঙ্কবাদী? বলা যায় না? ভাই রে, একটু মিষ্টি করে বল। এমনিতে তো তোদের কথা কেউ শোনে না। না বিশ্বকে মাস্ক পরাতে উদ্বুদ্ধ করতে পারলি ঠিকঠাক, না দূরত্ব মানার জন্য ঠিক বোঝাতে পারলি, সে তোদের সাদা চামড়া হোক, কি কালো, খয়েরী চামড়া। ঘিলুতে তো কারোই ঢোকাতে পারলি না বাছাধনেরা আমার। মায় ভ্যাক্সিন নিতেও কনভিন্স করতে পারলি না। ইউরোপে নাকি সুইজারল্যান্ডে সব চাইতে কম লোক ভ্যাক্সিন নিয়েছে। আমি অবশ্য গুণে দেখিনি, টাইমস অব ইন্ডিয়া যা লিখেছে সেটাকেই মান্যতা দিয়ে বললাম।
তো তেদ্রোস চাচা, যখন এমন প্রাথমিক শর্তগুলোতেই তথাকথিত শিক্ষিত মানুষদের বুঝিয়ে উঠতে পারলে না, তখন এই সব তথ্যাতঙ্ক ছড়িয়ে লাভটা কি? নাকি আমাদের এখানে যেমন কেউ কেউ অভিমান করে বলে, মানুষ আমাদের পাশে না থাকলেও আমরা মানুষের পাশে আছি মার্কা ডায়লগ দেবেন। আরে মশায়, আমাদের দেশে তো তাও বকেঝকে, ভয়টয় দেখিয়ে কাজটা করিয়ে নেওয়া যায়। জগত হয় আদর্শে চলে, নয় রুল বা নিয়মে বা রুলের বাড়িতে। আমাদের দেশে ওই রুল আর রুলের বাড়িতে কাজ হয় বেশি। কিন্তু তাও বলতে নেই মেলা লোক গিয়ে ভ্যাক্সিন নিয়েছে। বেশ লক্ষ্মীছেলেমেয়ের মতই সবাই নিয়েছে। মারামারি করে, গুঁতোগুঁতি করে হলেও নিয়েছে। আমাদের আসলে লাইনের উপর একটা শ্রদ্ধা আছে। লাইন দিয়ে কিছু দিলেই আমাদের মনে একটা ভরসা জন্মায়, তবে হয় তো ভালোই হবে। মেক্সিকোতে শুনলাম নাকি, লাইন রাখতে সাত-আট হাজার টাকা লাগছে। সেও আবার নাকি সরকার বেঁধে দিয়েছে। কতটা সত্যি মিথ্যা জানি না বাপু, যা দেখি, পড়ি তাই লিখি।
তো চাচা, আপনার কাছে একটাই অনুরোধ, আপনি এই আতঙ্কিত করে আতঙ্কিত হবেন না বলাটা বন্ধ করুন। অক্সফোর্ড, চেম্বার্স ঘাঁটুন, অনেক ভালো ভালো শব্দ পাবেন। কারণ এটা তো কলঙ্ক হয়েই রইল, এতবড় একটা ঘটনা ঘটার আগে, এ ও জানানো সত্ত্বেও আপনারা কিচ্ছুটি করতে পারেননি। এই দুর্দিন আসার পিছনে আপনাদের অবদানও কিঞ্চিৎ যে নেই তা কি বলতে পারেন? আপনারা আরেকটু বাস্তববাদী হোন। টিভির চ্যানেল আছে বলেই, একে অন্যের থেকে কুড়ি হাত দূরে বসে বসে, এক ঘন্টায় সঙ্গে তেদ্রোস চালিয়ে যাবেন, পিলে চমকানো বিধান দেবেন, তা তো হয় না! একটু ভাবুন চাচা, ভাবুন!