এবার প্যাণ্ডেলগুলো খুলে ফেলুন প্লিজ। একটু তাড়াতাড়ি করুন। এত মাইকের আওয়াজ হচ্ছিল আপনারা শুনতে পাননি, এই বড় রাস্তাটার সামনেই যে বাঁদিক ঘেঁষে গলিটা, ওর পাঁচ নম্বর বাড়ির ভদ্রলোকের (অবশ্য ততটাও ভদ্রলোক নন, শুনেছি ক্লার্ক ছিলেন কোনো একটা প্রাইভেট স্কুলের, কত টাকাই বা মাইনে পেতেন!) হাঁপানির টান উঠেছে সপ্তমীর দিন রাত থেকে। বেশিরভাগ সময় একটা সবুজ নাইটি পরে থাকা ওনার মেয়েটা এখানে ওখানে ছুটে বেড়িয়েছে একটা অ্যাম্বুলেন্সের জন্য। এমনকি আপনাদের ক্লাবের সেক্রেটারীর কাছেও গিয়েছিল (বুকে একটা গামছা নেয় সাধারণতঃ ওড়নার মত করে, সেদিন সেটাও নেয়নি, ইচ্ছা করেই ফেলে রেখে গেছিল, ওর মা বারণও করেননি অবশ্য)।
আপনাদের সেক্রেটারী শোনেননি। প্যান্ডেলটা একদম গলির মুখ জ্যাম করে তো, সবাইকেই ঝুঁকে ঝুঁকে গলির ভিতরে ঢুকতে হচ্ছিল (আহা বিরক্ত হচ্ছেন কেন? আমি জানি এসব আপনারা জানেন, তবু হাজার একটা কাজের ভিড়ে থাকতে হয় তো... তাই মনে করাচ্ছিলাম আর কি!)। সেক্রেটারী মহাশয়, মেয়েটার বুকের দিকে তিন-চার বার দেখতে দেখতে, সোনার আঙটি পরা কড়ে আঙুল দিয়ে নাক খুঁটতে খুঁটতে মেয়েটাকে বললেন, "কত টাকার প্যাণ্ডেল জানিস... পঁচাত্তর লাখ... শালা তোর পুরো পরিবারকে বিক্রী করলেও ওই টাকা উঠবে না" ("তোর ওই সরু সরু দুটো মাই নিয়ে এখানে নখরা করিস না, ক্লাবের সব ছেলের সাথে শুলেও এই প্যাণ্ডেলের একটা বাঁশও সরাবার চাঁদা উঠবে না" - এটা সেক্রেটারীর সেক্রেটারী বলেছিল, মেয়েটার পাছায় আলতো করে হাত দিয়ে, জাস্ট একটা কেয়ারিং টাচ আর কি!)।
মেয়েটা চোখ মুছতে মুছতে ফিরে গিয়েছিল। আপনাদের মনে নেই। তখন বাইরে বিশাল স্যোশাল ফাংশান চলছিল যে।
ভালো কথাটা কি জানেন, মেয়েটার বাপ এখনো বেঁচে আছে। আপনারা প্যাণ্ডেলটা এবার খুলে দিন। এখনো যদি একটা অ্যাম্বুলেন্স ঢোকে তো মেয়েটার বাবাটাকে বাঁচানো যাবে।
আরো কত বলব। এরকম অনেক অনেক মানুষজন বাড়িতে আটকা পড়ে দাদারা। কেউ জানলা বন্ধ করেও কুমার শানু, লতা, অভিজিত, অরিজিৎ- এদের কাউকে আটকাতে পারছে না। বুকের মধ্যে হাপর পিটছে। জানি দুর্বল লোকের এনজয় করার অধিকার নেই লাইফটাকে। তবু যদি সবল লোক হয়ে আমরা একটু বোঝার চেষ্টা করি কেসটা। তাই বলছিলাম দাদা, মাইকগুলো সরিয়ে নিন। লোকে বলে সুরের আসুরিক অত্যাচার। আমি বলি না। নিশ্চই গান হবে। gun(গান)-এর অধিকার যখন পাওয়া গেছে, চলুক গান। যারই gun(গান) চালাবার অধিকার থাকে সেই চালায়, আপনিও চালাবেন, নিশ্চই চালান। তবু বলি কি, পাঁচ-ছ'দিন তো হল। এবার না হয় থামুক। মাইকের চোঙাটার দুটো বাড়ি পরেই আরেকজন কম মাইনের সিকি অংশ ভদ্রলোক থাকেন (আমার না এটা ভীষণ বদভ্যাস, কে কি পরে, খায়, কোথায় শোয় না দেখে যাকে তাকে ভদ্রলোক বলা, একটা মুদ্রাদোষ বলতে পারেন। ভীষণ সরি। আপনাদের ফিল করতে অসুবিধা হচ্ছে নিশ্চই, ভাবছেন হয় তো শালা কোথাকার একটা ফাটকা মাল, যাকেতাকে ভদ্রলোক বানাতে এসেছে। সরি দাদা, ওই যে বললাম একটা মুদ্রাদোষ!), ওনার ছেলেটা তিন বছর বেকার, একটু লেডিস টাইপের, ওনার খুব বুকে ব্যাথা করছে, আর রক্তচাপ বাড়ছে এই সুললিত গানের গান পাওডার কানে ঢুকে (একটু জোকস মারছি স্যার!)। তাই বলছিলাম কি, এবার মাইকগুলো খুলে ফেলুন না প্লিজ। লোকটা না হয় বাঁচুক আর ক'টা দিন। আপনাদেরই ভোটার তো স্যার! সুতরাং বাঁচার অধিকার তো আছেই।
কি জানেন, সেই বস্তাপচা কথাগুলো আছে না... এতটাকা দিয়ে প্যান্ডেল না করে শালা গরীবদের দিতে পারত, হাস্পাতালে দিতে পারত... এসব খিঁচাইন কথা আমার মুখ দিয়ে বেরোয় না, যতসব ভাটের কথা। আরে তোরা তোদের বোনাসের টাকা গরীবদের দিস? আর হাস্পাতালে দান করব বললে কেউ টাকা দেয়? কেউ দেয় না। পাবলিক ভয়ে মাল ছাড়ে, সে ভগবানের ভয়েই হোক আর মস্তানের ভয়েই হোক... মাল ক্যাঁচালের ভয়েই দেয়... লুচ্চার দল সব!
ফি বছর প্যাণ্ডেল হোক, আলো জ্বলুক, রোশনাই হোক, জ্যাম হোক, লোক মরুক, মাইকে শব্দভেদী প্রাণঘাতী গান বাজুক, মদ চলুক, নাচ চলুক - এসবই সুস্থ সংস্কৃতির লক্ষণ, জানি। তবু কেউ মরে গেছে, তাও আবার আপনাদের মত জনদরদী দাদা-দিদিদের একটু অবহেলায়, মেনে নিতে পারি না স্যার। তাই কিছু ইমোশনাল, সেন্টুমার্কা কথা লিখে ফেললাম। এ ভুলতে আর কতক্ষণ লাগবে আপনাদের, সামনেই তো শ্যামাপূজা স্যার... বাজির আওয়াজে যারা যারা মরবে বা মরতে পারে তাদের একটা লাইনে শুইয়ে দেব স্যার? না সুন্দরবনে চালান করে দেব... নাম লেখাতে বলে দিই সবাইকে?