Skip to main content

টিপের পাতাটা হাতে নিয়ে বলল, দাম কাল দিলে হবে?

সে বলল, হবে, আমি রোজ দুপুরে এই ড্রেনের ধারেই বসি… কারখানা ছুটি হলে… অনেকেই আসে…..

=======

লাল রঙের প্রজাপতি ক্লিপ আছে?

নেই, বিক্রি হয়ে গেল কালই…. আগামীকাল আনব….. আমি এখানেই থাকি… সকাল আটটা থেকে… বিকেল পাঁচটা… এই রেলের কারখানার পাশেই…. আমার বাবা রেলের সুইপার ছিল…. মারা গেল মদ খেয়ে খেয়ে… দাদা চাকরি পেল… আমাকে, মা-কে তাড়িয়ে দিল…. আমি গ্র‍্যাজুয়েট… চাকরি পাইনি….

আমিও গ্র‍্যাজুয়েট… এখন বাচ্চাদের পড়াই...

ক্লার্কশিপের ফর্মটা তুলেছেন… লাস্ট ডেট চলে এলো তো….

তুলেছি…. কাল আসব…. মা আর আমি… বাবাকে দেখিনি… মা সেলাই করেন… কাল আসব….

=======

খেয়ে দেখো…. মা বানিয়েছে… কাঁচা আমের আচার….

আমি আজ আলুর চোখা এনেছি…. রুটি নিয়ে… খাবে একটু?

টিপটা দেখো…. এই ক্লিপটা আজকেই পরলাম…. আজ পড়ানো নেই…. বিকেলে…

আমারও আজ বাজারে বসা নেই বিকেলে…..

ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল। কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে দু'জনে। অনেকটা কাছাকাছি। যতটা কাছাকাছি অন্য মানুষের পাশে দাঁড়ালে অস্বস্তি হয়… কিন্তু কোনো মানুষের পাশে হয় না….

তুমি মাথায় যে তেল মেখেছ… মা মাখেন...

তোমার হাতে যে উল্কি আঁকা…. আমার বাবার ছবিতে ডান হাতে আছে….

বৃষ্টির ছাঁটে কুয়াশা তৈরি করেছে। মেঘ ডাকছে। পাতা চুঁইয়ে একবিন্দু জল পড়ল টিপ ভিজিয়ে, নাকের ডান পাশ ঘেঁষে চোখের উপর দিয়ে পড়ল গালে….

ছেলেটা হাত দিয়ে মুছিয়ে বলল, ছাতা আনোনি?

মেয়েটা বলল, না। ছেলেটা হাসল। মেয়েটা হাসল। ভেজা বাতাস বলল, ভাগ্যিস আনোনি।

=======

টিফিন বক্সটা খুলে বলল, এখন থেকে বাড়ি এলে হয় না?

না গো…. দুপুরে অনেকে কিনতে আসে…তুমিও তো এসেছিলে দুপুরবেলাতেই…. মনে নেই?

সিঁথির সিঁদুরের উপর গাছের পাতার ছায়া দুলছে। সে বসে বসে টিপের পাতাগুলো গুছিয়ে রাখছে। রুটি আর আলুর তরকারি।

বিকেলে আজ বাজারে বসবে? আজ বিকেলে আমার পড়ানো নেই…. সিনেমায় যাবে?

গ্রীষ্মের রুক্ষ বাতাস। চড়া রোদ। পাতার ছায়াগুলো দুলছে…..

ছেলেটা বলল, তুমি সেদিন দুপুরে যদি না আসতে? যদি তোমার টিপের পাতা সেদিন না ফুরাত?

মেয়েটা হাসল… বলল, আমি টিকিট কেটে রাখব… বিকেলে বাজারে যেও না…. আজই সেইদিন… আমার সেদিন টিপের পাতা ফুরায়নি…. মনে হয়েছিল সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে…. তোমার কাছে আসার….

গাছের ডালপালাগুলো আচমকা ঝালরের মত দুলে উঠল। এই গ্রীষ্মেও কোকিল ডেকে উঠল একটা।

ছেলেটা বলল, চলো লস্যি খেয়ে আসি….

মেয়েটা বলল, এই রোদে অতটা হাঁটবে?

ছেলেটা বলল, সেদিনও এমনই রোদ ছিল…. তোমার গালটা লাল হয়েছিল রোদে পুড়ে….

মেয়েটা থামিয়ে বলল, চলো চলো…..

ভীষণ চড়া রোদে দু'জনে পাশাপাশি হাঁটছে। ছায়া অল্প একটুখানি। গ্রীষ্মের রুক্ষ বাতাস বলল, ছাতা আনোনি?

মেয়েটা বলল, না। ছেলেটা বলল, দরকার নেই।