টিপের আঠাটা নষ্ট হয়ে গেলে খুব মন খারাপ লাগে। বারবার আয়নার সামনে দাঁড়ায়। কপালে আঙুল ছুঁইয়ে দেখে, না তো আঠাটা লেগে নেই তো! টিপটা হাতে নিয়ে, টিপের পিছন দিকে আঙুল ছুঁইয়ে দেখে, খসখস করছে, আঠাটা কোথায় গেল?! প্রত্যেকবারই এমন হয়, আঠাটা খুঁজেই পায় না।
খাটে গিয়ে বসে। মোবাইলটা হাতে নেয়। লাল সুইচটায় চাপ দেয়। স্ক্রীনে আলো জ্বলে ওঠে। পুরীর সমুদ্রে সেই কাঁধে হাত রাখা ছবিটা। তিন বছর হল। ডানদিকের উপরের সুইচটায় চাপ দেয়। কন্ট্যাক্ট লিস্ট। নামের তালিকা। প্রথম নামটাই তো! বাঁ দিকের সুইচে হাত দেয়। অপশন। সেন্ড মেসেজ। কি বোর্ডে আঙুল আসে। কালো স্লেটের মত স্ক্রীণ। সামনে তাকায়। আয়নায় নিজেকে পুরোটা দেখা যাচ্ছে। নিজেকে মাপে। কপালে টিপটায় হাত দেয়। আঠা নেই। জলে ভিজিয়ে পরেছে। জানে যে কোনো সময় কপাল থেকে খসে পড়বে। বিছানায়, রান্নাঘরে, বাথরুমে, রাস্তায় কিম্বা উঠানে। অথবা উড়ে গিয়ে পড়বে স্টেশান পাড়ায় ওদের বাড়ি, যে মেয়েটা গান শেখায়।
উঠল। টিপের পাতায় অনেক নতুন টিপ। কি করবে, এটা পাল্টাবে?
খাটে এসে বসল আবার। মোবাইল অন করল। মেসেজ লিখল, "খেয়েছ"?। মোবাইল হাতে ধরে আয়নার দিকে ফিরে শুল। স্বপ্ন দেখল। কপাল থেকে টিপটা পাখির মত ডানা মেলে উড়ল। নীচে কত ছোটো ছোটো দেখাচ্ছে মানুষগুলোকে। ওই তো ওরা! পার্কের বেঞ্চে। হাতের উপর হাত। ঠোঁটের উপর ঠোঁট। হঠাৎ গুলির আওয়াজ হল। পাখিটা ছটফট করতে করতে মাটিতে পড়তে লাগল। নীচে পড়তে পড়তে দেখল হাজার লক্ষ ফাঁদ পেতে রেখেছে কে, কারা?
চমকে গিয়ে ঘুম ভাঙল। সারা গা ভিজে গেছে ঘামে। মোবাইল অন করল। নাহ, মেসেজ নেই। আয়নার দিকে তাকালে। টিপটা নেই। খাটে নেই। তবে কি বিছানার তলায় পড়ল? মোবাইলের টর্চ অন করে ঝুঁকে মেঝেতে বসল। খাটের তলাটা ঝাপসা হয়ে এল। বুক ছাপিয়ে, গাল ভাসিয়ে নামল টিপ হারানো কান্না।
সৌরভ ভট্টাচার্য
21 July 2016