Skip to main content
 
 
        সন্ন্যাসী, জঙ্গলের মধ্যে পাহাড়, তার মধ্যে যে গুহা, সেখানে বাহান্ন বছর হল ধ্যানরত। তিনি আত্ম-জিজ্ঞাসু। মনের মধ্যে কলের পর কল নামিয়েছেন। মনের গভীরের থেকে গভীরে ঢুকছেন তো ঢুকছেন। এ গলি সে গলি। অন্ধগলি, সোজাগলি, চোরাগলি, বাঁকাগলি। মনের মধ্যে এই আগুন তো এই ঝড়। এই মরুভূমি তো এই জঙ্গল। এই হায়না তো এই নেকড়ে। এই শেয়াল তো এই ময়ূর। শুধু কি তাই। মনের মধ্যে এই বসন্ত কি এই বর্ষা। গভীরতার পর গভীরতা বেড়েই যাচ্ছে। 
        ওদিকে হয়েছে কি গ্রামে তো খবর হয়ে আছে, অমুক জঙ্গলের তমুক গুহায় এক সন্ন্যাসী বাহান্ন বছর তপস্যা করছে। সবাই জানতে চায় তিনি কি পেলেন অবশেষে। কতলোক তো এমনিই মরে গেল অপেক্ষা করতে করতে। 
        পঞ্চান্ন বছর পর অবশেষে সন্ন্যাসী বেরোলেন। সবাই উৎসুক। গ্রামের পর গ্রাম থেকে লক্ষ যোজন দূর থেকে মানুষ এসেছে, কি জানলেন, কি জানলেন!
        সন্ন্যাসী এসে একটা ঠোঙা চাইলেন। লোকে ঘাবড়ে গেল। তারা মালা, চন্দন, নারকেল, দীপ এনেছে, ঠোঙা তো কেউ আনেনি। সন্ন্যাসীর চোখ পড়ল এক কিশোরের দিকে। সে একটা ঠোঙায় করে বাদাম ভাজা খাচ্ছে। সন্ন্যাসী তার কাছ থেকে সেই ঠোঙাটা চাইলেন। সে বাড়িয়ে দিল। সন্ন্যাসী ঠোঙা থেকে বাদামগুলো ফেলে ঠোঙার মধ্যে হাত ঢুকিয়ে উল্টে দিলেন। সবাই হাঁ করে তাকিয়ে। এর মানে কি হল?
        সন্ন্যাসী বললেন, আগে কি ছিল?
        সবাই বলল, ঠোঙা। 
        উনি ঠোঙাটা আবার উল্টে বললেন, এ বার কি হল?
        সবাই বলল, ঠোঙা। 
        সন্ন্যাসী হেসে বললেন, এই হল কথা।
        একজন বলল, আপনি তবে অ্যাদ্দিন ধরে ঠোঙা উল্টাচ্ছিলেন?
        উনি বললেন, হ্যাঁ।
        তবে আর কি হল?
        সন্ন্যাসী বললেন, কিছুই না। যদি কিছু হত তবে যে ঠোঙায় আটকে থাকতুম, দম আটকে আসত।
        একজন বলল, তবে মুক্তি কি?
        সন্ন্যাসী বললেন, উল্টো ঠোঙা দেখার ইচ্ছা থেকে বেঁচে যাওয়া।
        আর ঈশ্বর?
        সন্ন্যাসী চুপ করে রইলেন। বাচ্চাটাকে বাদাম ভর্তি ঠোঙাটা ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, এই নাও।