Skip to main content

বেশ কিছুদিন ফেসবুকে অনুপস্থিত ছিলাম, তার একটা কারণ অবশ্যই ব্যক্তিগত পড়াশোনা তো নিশ্চই ছিল, কিন্তু তার সাথে আরেকটাও কারণ ছিল, ছিলই বা বলছি কেন? আছে, তা হল একটা অনীহা। ফেসবুকে চোখ রাখার অনীহা। বড্ড উগ্র লাগছে ধীরে ধীরে অনেক কিছু। ধর্ম, রাজনীতি, নারীবাদ, যৌনতা ইত্যাদি বিষয়গুলো বড্ড black & white standpoint নিয়ে একটা তুমুল ধুন্ধুমার কাণ্ড বাধিয়েই চলেছে। বয়েস হচ্ছে? অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছি? হবেও বা। 

        আজ সকালে ফেসবুক খুলতেই জানলাম আমার বন্ধু তালিকাভুক্ত এক নারী রজঃস্বলা হয়েছেন গতকাল রাত থেকে। তিনি বিশেষ একটি ব্র্যাণ্ডের স্যানিটারি ন্যাপকিনের ছবিসহ সে কথা পোস্ট করেছেন। উনি যখন রজঃস্রাবে সিক্ত হচ্ছেন, পেটে ব্যাথা হচ্ছে তখন পৃথিবীর এক গোলার্ধের মানুষ নিদ্রাগত। স্বাভাবিক ভাবেই জানতে পারেনি। আমিও জানতে পারিনি। কিন্তু এমন অসামান্য একটা ঘটনা উনি গোপন করতে চাননি। এর পিছনে নিশ্চই কোনো সাংঘাতিক রকমের কোনো একটা ইজম প্রসূত প্রতিবাদ নিশ্চই আছে। আমার মফঃস্বলের, স্বল্পজ্ঞান, পুরুষোচিত বুদ্ধিতে তা কুলায়নি। তবে ওনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ যে উনি সে রজঃস্রাবের ছবি তুলে পোস্ট করেননি। সত্যি বলতে আমার গা গুলাতো। আমি সত্যিই অতটা আধুনিক, উন্নতমনা, স্রাবসচেতন, রজঃ সহানুভূতিসম্পন্ন হতে পারিনি হয়ত। তবে যতটা আমার ক্ষুদ্রজ্ঞান, মানুষের শরীরে যদ্দিন FSH, LH, ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন ইত্যাদি হরমোন থাকবে স্বাভাবিকমাত্রায়, এবং প্রাইমর্ডিয়াল ফলিকল হয়ে গ্র্যাফিয়ান ফলিকল তৈরি হবে আর তা ওভিলিউশানের পর অনিষিক্ত থেকে যাবে ফ্যালোপিয়ান টিউবের কোনো একটা স্থানে, সে নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষার পর জরায়ুর এণ্ডোমেট্রিয়াম কলাসহ বাইরে বেরোবেই। এ ঘটনা শিক্ষতা-অশিক্ষিতা, গ্রাম্য-শহুরে, প্রাচ্য-পাশ্চাত্য, আস্তিক-নাস্তিক, কম্যুনিস্ট-ফ্যাসিস্ট, হিন্দু-মুসলিম-খ্রীষ্টান-বৌদ্ধ-শিখ-জৈন ইত্যাদি সকল মনুষ্যের হয়ে এসেছে যারা সেই ধরণের জননতন্ত্রবাহী। 
        তবু বলব আমি অন্তত আপনার রজঃস্রাবের সাক্ষী বা জ্ঞাতা হতে চাই না। ফেসবুক নিশ্চই আপনাদের মত উত্তোরতর আধুনিকাদের জন্য MY PERIODS বলে কোনো অপশান অদূর ভবিষ্যতে চালু করার কথা ভাববেন, যেখানে সবাই জানতে পারবে আপনার কবে শুরু হল, কবে শেষ হল। আপনাকে হয় অভিনন্দন জানাবেন নয় সমবেদনা, কোনটা আমি এখনই সঠিক বলতে পারছি না, তবে কিছু একটা তো নিশ্চই জানাবেন আপনার ফেসবুক তালিকাভুক্ত বন্ধুরা। 
        আসলে আমি অনেক উদারমনা, উন্নতচিন্তাশীল নারীদের পড়েছি, জেনেছি, কথা বলেছি তাদের রজঃস্রাবের তিথি না জেনেই। তাদের সম্পূর্ণ জানা হয়ত আপনাদের মতে আমার কম হয়ে গেল, তবু বলব যতটা জেনেছি তাই পর্যাপ্ত মনে হয়েছে জানেন, কি পুরুষোচিত অহংকার না? সে যাক, আমার একটা সনির্বন্ধ অনুরোধ, আপনারা যারা ভবিষ্যতে এমন কিছু অসামান্য দুঃসাহসী কাজের পরিকল্পনায় আছেন সত্বর অনুগ্রহপূর্বক আমায় আনফ্রেন্ড করুন। আবারও বলছি, আমি আপনাদের রজঃস্রাবের সাক্ষী বা জ্ঞাতা হওয়ার কোনো বাসনা পোষণ করিনা মনের কোনো কোনায়। 
        আরেকটা কথা, সেই পোস্টে কোনো আরেক রমণী আগামী পশুপুরুষদের জন্য করুণা কামনা করেছেন যাদের উক্ত পোস্টটা দেখে পাশবিক প্রবৃত্তি জেগে ওঠার সম্ভাবনা উনি আশা করছেন। অবশ্যই ওনার আশা দুরাশা নয়। কারণ তসলিমা নাসরিনের টুইটার যখন ফলো করতাম তখন ঠিক এরকম একটা পোস্ট উনিও করেছিলেন। তাতে যে সব কমেন্টস এসেছিল তাতে সেরকম কমেন্টস এসেছিল তো। তাতে অবশ্য আশ্চর্য কিছু হই না খারাপ লাগলেও। মানুষের পাশবিক প্রবৃত্তি কি আর কোনোদিন নাশ হওয়ার? আমি কোনোদিন বিদেশ যাইনি। দেশেরই কিছু শহর গ্রাম ঘুরেছি। আমি কোত্থাও দেখিনি পাবলিক টয়লেটের মুখ রাস্তার দিকে করা, যাতে আপনার শ্রীঅঙ্গটি সবার চোখে পড়ে। যুক্তি অবশ্যই এক - কেন তোমার কি নাই?... তোমার কি অন্যরকম?... একে গোপন করার ইচ্ছাও অনাধুনিক, মধ্যযুগীয় বর্বরতা, অশিক্ষার পরিণাম নয়?... আসুন সবাই সবারটা দেখি... আধুনিক, উন্নতমনা হয়ে উঠি। আর কতদিন ওই বস্তাপচা শ্রীঅঙ্গঢাকা মধ্যযুগীয় সভ্যতায় পড়ে থাকব? 
       বাস্তবটা হল, সংযমে অসংযমে মিশ্রিত মানবসভ্যতা। যতই উন্নতমনা হই - বাইরে যাওয়ার আগে কি শুতে যাওয়ার আগে বাড়ির দরজায় খিল, বিয়ের সাথে সাথে উকিল ডেকে প্রেমকে আইনস্থ, এটিমের পিন থেকে ফেসবুকের পাসওয়ার্ডকে গোপন রাখার তাগিদ ইত্যাদি কিসের জন্য? অমার্জিত মানবকুলের হাত থেকে মান আর সম্পদ রক্ষার জন্যেই তো! অর্থাৎ সে তো আছেই, আর থাকবেও। না হলে আইনি জটিলতা আর পুলিশের সংখ্যা কমত এ বলা বাহুল্য। তো জেনেশুনে ন্যাকা সাজা কেন হে বাপু! সর্বোপরি মানুষ হই না কেন? নারী বলেই সব চিন্তা নারীতেই শুরু আর নারীতেই শেষ করে শেষে সব সেই কুমীর রচনাই করা কেন হে বাপু!
        হে হে, দেখছেন কেমন পুরুষোচিত দেমাক বেরিয়ে পড়ল? টেস্টোস্টেরণ না কিসের প্রভাব জানি না, তবে সব ক্ষেত্রেই অগ্রণী ভূমিকায় পুরুষের সংখ্যা অধিক হওয়ার কারণ কি শুধুই পুরুষশাসিত সমাজ, না তলে তলে সমস্যাটা আরো গভীর তা ভেবে দেখার... তবেই তো বদল আসবে।