রাজা মশায়ের কাছে খবর আছে, কারা যেন বেশি বেশি খায়। রাজা মশায় পাত্র-মিত্র-সভাসদ আদি সক্কলরে ডাকেন আর প্রশ্ন করেন - তোমরা জানো কে কে বেশি খায়? পাত্র-মিত্র-সভাসদ আদি কেউ বলল, হ্যাঁ, কেউ বলল, না। রাজা বললেন, তা তোমরা তাদের আটকাতে পারো না?
সব্বাই সাথে সাথে রে রে করে চীৎকার করে উঠে বলল, পারি না...পারি না...পারি না...
রাজার ভুরু কুঁচকালো...বললেন কেন পারো না? সব্বাই আবার হাউমাউ করে উঠে বলল, ওরা নিতান্তই চালাক, দুষ্ট, কূটকৌশলী মহারাজ! আর আমরা নিতান্তই সাদাসিধা, সরল, সৎ চিন্তক, ওদের গুপ্ত গতিবিধির খবর রাখি এমন চতুরতা কি আমাদের সাজে?!
রাজা আবার ভুরু কুঁচকালেন, জিভ কামড়ালেন, বললেন, তবে উপায়?
সব্বাই এ ওর মুখ চাওয়াচায়ি করতে লাগল, সত্যিই তো উপায় কি হবে? আরে চোরে চুরি করবে, ডাকাতে ডাকাতি করবে, ঠগবাজ লোক ঠকাবে, ঘুষখোর ঘুষ খাবে, কালোবাজারী দুনম্বরি করবে...এই তো চিরটাকাল শুনে আসছি...এর আবার কোন উপায় হয় নাকি?...না হতে হয়?!
তবু সভা বসল। রাতারাতি ঠিক হয়ে গেল উপায়। মধ্যরাত্রে ঘোষণা হল...
শোনো শোনো শোনো নগরবাসী...এখন থেকে তোমরা দুদিন আহারাদি করবে না...আর পঞ্চাশদিন অর্ধাহারে থাকবে...তা হলেই যারা বেশি খেয়ে শরীরে বেশি মেদ জমিয়েছে তারা পটপট করে ধরা পড়ে যাবে...
নগরে হুলুস্থুল পড়ে গেল। রাজা বলে কি? যারা বেশি খেয়ে মেদ জমিয়েছে তারা না হয় ধরা পড়ে গেল...যারা খায়নি?! হ্যাঁ গো তারা তো দুর্বল হয়ে শয্যা নেবে! আর যারা এমনিতেই খেতে পায় না...তারা তো মৃত্যু শয্যা নেবে গো!
নগরে ছিল কিছু অনেক উঁচুতে বসা জ্ঞানীর দল, যারা সব নগরেই থাকে সব সময়। যাদের পায়ে ধুলোবালি লাগে না। আর তারা এত উঁচুতে থাকে বলে এত দূরের জিনিস দেখতে পায় যা ইতর সাধারণ লোকে দেখতে পায় না।
তো তারা চোখ রাঙিয়ে, মাথায় ঘাড়ে হাত বুলিয়ে বলল, বাছারা ত্যাগ কর। সাহসের সাথে দাঁড়াও রাজার পাশে। বেশি খাওয়া লোকগুলোকে বের করতে দাও...
তখন এক পাগলা অঙ্কের মাষ্টার ক্ষেপে গিয়ে বলল, ক্যানো রে পোড়ারমুখো, হাড় হাভাতের দল...আমরা প্রত্যেক মাসে কর দিই না...যাতে করে দেশের সুরক্ষা, আইন, তদন্ত, গোয়েন্দা, শুল্ক ইত্যাদি বিভাগের লোকেরা মাইনে পেয়ে তাদের কাজগুলো ঠিকঠাক করতে পারে? তাতো তোরা পারলি না...এখন নিজেদের সেই ব্যর্থতার বোঝা আমাদের ঘাড়ে চাপাতে চাস কেন?
তা সেই অঙ্কের মাষ্টারের কথা কে আর শুনবে? কেউ শুনল না। না জনতা, না জননেতা। নগরে তখন প্রচণ্ড হুলুস্থুলু বেধে গেছে। সব্বাই বলছে আজ যতটা পারিস খেয়ে নে রে...খেয়ে নে...খেয়ে নে...খেয়ে নে...
শুধু নগরের মূর্খ, দরিদ্রলোকগুলো কিছুই বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে এরওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, এরা ছুটলে ওরাও ছুটছে, এরা থামলে ওরাও থামছে...আর মাঝে মাঝেই একে তাকে প্রশ্ন করছে...কই যামু কত্তা...কি খামু কত্তা...কদ্দিনের নিষেধ কত্তা...সব আনাজ ফেলে দিমু...
কেউ শুনছে না...সবাই বলছে সব কালো সাদা হবে...ঘরে আরো ধন হবে...
নিন্দুকেরা বলছে ভোটে ভোটে আর দিন গোনো না...দুর্বৃত্তের ছলের অভাব হয় না...
বলল, এরেই নাকি বলে, ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়....