Skip to main content

 

 

 

ছবিটা এতক্ষণে আমাদের অনেকেরই হয় তো স্ক্রোল করা হয়ে গেছে। হ্যাঁ, ছবিটা আনন্দবাজার পত্রিকার। তিনজন চিকিৎসকের মৃত্যুর।

      আমি ছবিটা দেখার খানিক পরই আবার এক গার্জেনের ফোন এল, "স্যার আপনি এবার অফলাইন শুরু করে দিতে পারেন। অনেকেই শুরু করে দিয়েছেন, এইভাবে পড়াশোনা হয় বলুন..?"

      এক ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করলাম, যেখানে পড়ছিস সেখানে দূরত্ব রাখছিস..মাস্ক?

      সে হাসল। বলল, তাই হয়? আর মাস্ক অনেকেই গেঞ্জির কাপড়, পাতলা কাপড়ের পরেই চলে আসছে।

      বাজারে কেউ মাস্ক না পরলে তাকে যদি একবার জিজ্ঞাসা করেন তবে কয়েকটা উত্তর হল,

১) এখন অনেকটা কমে গেছে

২) কপালে যা হওয়ার হবে

৩) ওসব নিয়ে আমি ভাবি না

৪) হোমিওপ্যাথি খাওয়া আছে

৫) জিঙ্ক খাচ্ছি..গার্গেল করছি..লেবু খাচ্ছি...প্রোটিন খাচ্ছি...ইমিউনিটি হেব্বি..কিস্যু হবে না...

৬) এই তো মাস্ক খুললাম...

      এরকম আরো আছে। আসলে যতক্ষণ আপনার রোগটা হয়নি ততক্ষণ আপনার মনে হবে, সবাই তো করছে আমি বা বাদ যাই কেন? কিন্তু রোগটা যখন হবে তখন কিন্তু আপনি সম্পূর্ণ একা। মারাত্মকভাবে নিঃসঙ্গ। আপনার কষ্টটা আপনার একার। এমনকি আপনার মৃত্যুর সম্ভাবনাটাও আর মৃত্যুটাও আপনার একার। তখন মনে হবে না এই তো সবার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, আমারও হচ্ছে, অনেকেই মারা যাচ্ছেন আমিও যাচ্ছি। মৃত্যু আর যন্ত্রণা সবার একার।

      তার চাইতে দামী কথা হল একজন সাধারণ মানুষ যখন মারা যাচ্ছেন একটা মানুষ যাচ্ছেন, কিন্তু একজন চিকিৎসক যখন মারা যাচ্ছেন তখন অসংখ্য মানুষের সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনাটাও মারা যাচ্ছে, অন্তত এইভাবে স্বার্থের দিক থেকেই না হয় ভাবুন।

      সত্যি বলতে আর কোথায় কি হচ্ছে জানি না কিন্তু কাঁচরাপাড়া, হালিশহরে মাস্কের ব্যবহার, দূরত্ববিধির নিয়ম, দিন দিন যা কমছে তা সত্যিই ভাবনার।

      এদিকের অনেকেরই একটাই যুক্তি, আরে ট্রেন তো চালু হল, মানুষ তো রাস্তায় ঘাটে মরে পড়ে থাকছে না... অতএব সব স্বাভাবিক। এই ট্রেনটা চালু যে বাধ্য হয়ে অনেক মানুষের রুটিরোজগারের দিকে তাকিয়ে করতে হয়েছে সেই কথাটা কারোর মাথায় আসছে না। ট্রেন চালানো মানে যেন সব স্বাভাবিক হয়ে গেছে এই ইঙ্গিত।

      আমি পড়ানোর সঙ্গে যুক্ত, তাই আরেকটা কথা বলেই এ প্রসঙ্গে ইতি টানি।

      শুনলাম, দুদিন জ্বর, তিনদিন গন্ধ না পাওয়া মানুষটাও কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে টিউশানে যাচ্ছে, নইলে "ওই চ্যাপ্টার‍টা স্যার বুঝিয়ে দিলে পরে কি হবে?"...

      রবীন্দ্রনাথ বলতেন, "বিজ্ঞানকে আমরা বহন করেছি, বাহন করিনি।" আজ প্রতিপদে ঠেকছি। একটা অস্বাভাবিক অবস্থায় কেন আমরা প্রাণের ঝুঁকি নেব আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না যেখানে অন্তত যাদের সাধ্যে বিকল্প পথ আছে।

      আমি আবারও বলছি, একজন চিকিৎসক মারা যাওয়া মানে বহু মানুষের সুস্থ হয়ে ওঠার আশার মৃত্যু হওয়া, অন্তত এইভাবেও যেন দেখি। বহু চিকিৎসককে আমরা হারালাম। যে কোনো মৃত্যুই দুঃখের, কিন্তু চিকিৎসকের পর চিকিৎসক যখন আমাদের নির্বোধ দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য প্রাণ দিচ্ছেন তখন অসহ্য লাগছে। ভারতবাসী আদতে অদৃষ্টবাদী, জানি, কিন্তু সেই অদৃষ্টের পথও যে ক্রমে ঢালের দিকে যাচ্ছে সে কি আমরা জ্ঞানপাপীরা বুঝেও বুঝব না? জেগে ঘুমানো আমাদের কে জাগাবে? মৃত্যুর পরিসংখ্যান না আত্মীয়ের বিয়োগ না শুভ বুদ্ধি? কে বলবে?