ক্যাডবেরি…
না… দুটো এমনি চক্লেট….
না, একটা ক্যাডবেরি.. একটা এমনি চক্লেট…
আমি একটা পাপোল….
শেষ কথাটা যে বলল, তার বয়েস দুয়ের বেশি নয়। শুরুর কথাটা যে বলছিল, বাবার পাশে হাওয়াই চটি ফটাফট ছুঁড়তে ছুঁড়তে যে যায়… পিঠের উপর একটা সরু হেলে সাপের মত বিনুনি… চোখে একদিকে মোটা, আরেকদিকে সরু কাজল…. তার বয়েস আটের নীচে…
যার উদ্দেশ্য এত কথা, তার নীল জামা, কালো প্যাণ্টের নীচে ফিতে আলগা ক্ষয়ে আসা বিধ্বস্ত এক চটি।
সন্ধ্যে সাতটার ঘর পেরিয়ে ঘড়ির কাঁটা আটের ঘর ছুঁচ্ছে। বাজার রমরম করছে। আজই ফিরেছে সে কলকাতা থেকে কাজ সেরে, আবার সোমবার যাবে। হপ্তায় টাকা দেয়, নিয়ে আসে। শনিবার সন্ধ্যেবেলা বাজারের সময়। সেদিন তার দাড়ি ভর্তি কালো মুখ আনন্দে লাল… চোখের কোলে রাজার তৃপ্তি…. এত সুন্দর তার ছেলেমেয়ে… এত সুন্দর… দিন দিন হচ্ছে আরো সুন্দর…
======
পরের শনিবার শুধু মেয়ে এলো। তার বায়না নেই। মুখটা শুকনো। ভাইয়ের জ্বর। সর্দিকাশি। ডাক্তার বলেছে না কমলে হাস্পাতালে নিয়ে যেতে।
তবু বাবা মেয়ে বাজারে ঘুরল। জিলিপি, চপ, সিঙ্গাড়া, মিষ্টি… ক্যাডবেরি…. চোখ পড়ল… কিন্তু মন রাজী নেই…. পাশের বাড়ির ভাইটা বাড়ি ফেরেনি আর… ওর বাবা মা বিহারে চলে গেছে… আন্টিটা এত কাঁদছিল… তার বাবাও ইটের উপর ইট গাঁথে… বাড়ি বানায়…
=====
দু-সপ্তাহ পর বাজারে বাবার কোলে মাথা রেখে বাচ্চাটা এলো। সঙ্গে দিদি। ছেলেটা এত রোগা হয়েছে, এত দুর্বল হয়েছে যে মাথা তুলে তাকাতে পারছে না। যমে মানুষে টানাটানি চলেছে আটদিন।
দিদি ভাইয়ের মুখের দিকে তাকাচ্ছে হাঁটতে হাঁটতে। ভাই ঘুমিয়ে পড়েছে বাবার কোলে।
মেয়েকে বাবা জিজ্ঞাসা করল, কি খাবি রে?
মেয়েটা বাবাকে বলল, চা।
বাবা চোখ বড় করে বলল, শুধু চা….
মেয়েটা জেদের গলায় বলল, আমি ভাইকে কোলে নিয়ে বসছি… এই বেঞ্চে…. তুমি চা আনো…..
বাবা চা আনতে গেল। মেয়েটা ঘুমন্ত ভাইকে কোলে নিয়ে বাজারে থিকথিক লোক দেখছে। এরা কেউ নয় তার, যদি ভাইয়ের কিছু হত… যদি বাবা মা…. কোথাও আর কেউ নেই তার… কিচ্ছু নেই…
বাবা-মা এই ক’দিন শুধু চা খেত… এমনকি রাতেও চা খেয়ে শুয়েছে…. সঙ্গে মুড়ি… তার জন্য থালার কোনায় সাজিয়েছে অল্প একটু ভাত, উঁচু করে… যাতে অনেকটা দেখায়…. চা না থাকলে ভাইকে বাঁচানো যেত না….. মা মাঝে মাঝে বলতো…. মুখে টানার ওষুধের যা দাম! একমাত্র চা ছিল বলে বেঁচে গেছে…. তারা সবাই….