Skip to main content
অশান্তিতে থাকার একটা অন্যতম মূল কারণ – শান্তিতে থাকতে চাওয়া। চাইবেন না। ওটাও একটা বিলাসিতা। আপনার চারদিক আপনাকে অস্থির করে তুলতে চাইছে, উদ্বিগ্ন করে তুলতে চাইছে, আর আপনি প্রাণপণ শান্ত থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন – এতে হিতে বিপরীত। আপনার মধ্যেই একটা সংঘর্ষ তৈরী হচ্ছে। কারণ আপনি স্থিতাবস্থা চাইছেন। তা হবার নয়। স্থির আপনাকে থাকতেই হবে, তবে শান্তি? না, কিছুতেই না।

শান্তি কোনো প্রচেষ্টার প্রত্যক্ষ ফল না। বিভিন্ন প্রচেষ্টার সুসামঞ্জস্যতাপূর্ণ অবস্থানের পরোক্ষ পরিণাম। স্বামীজী তাঁর একটা চিঠিতে তাঁর গুরুভাইদের লিখছেন – ‘সব ত্যাগ করতে পারো আর শান্তির আশা ত্যাগ করতে পারো না?’ ভাবুন। একজন সন্ন্যাসী বাকি অন্য সন্ন্যাসীদের লিখছেন শান্তির আশাও ত্যাগ করার কথা।
রবীন্দ্রনাথও তাঁর শান্তিনিকেতন প্রবন্ধে লিখছেন, কি চাই? শান্তি? উনি বলছেন, না। চাই প্রেম। সুখে দুঃখে অবিচল থাকার প্রেম।
স্বামীজীর আরেক গুরুভাই, শ্রীরামকৃষ্ণদেবের মানসপুত্র ব্রহ্মানন্দজী বলছেন, "শান্তি পেতে গেলে আগে অশান্তিটাকে খুঁচিয়ে তোল।" কি অসম্ভব সুন্দর কথা। কার্পেটের তলায় ধুলো জমিয়ে কি লাভ? মনের গভীরে কুরে কুরে খাচ্ছে অশান্তি, বাইরে শান্ত থাকার ভাণ করে কি সুখ? চাই না সুখ, চাই না শান্তি। চাই না, চাই না, চাই না। সারাটা জীবন আমি এই শান্তির মায়ামৃগর পিছনে দৌড়াব না আর। সে শুধু দুর্বলই করে আমায়।
কে শান্তিতে আছে? পাগল, শিশু আর পূর্ণ নির্বোধের কাছে ছাড়া, এ সংসারে সেই বস্তুটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। দরকার কি?
তাই বলে কি সাধ করে গরম জলে পা দিতে হবে? কখনো না। তবে গরম জলে একান্ত পা পড়ে গেলেও ফোসকা পড়বে না এমন দুরাশা করব না। আর ফোসকা পড়লে তা যন্ত্রণা দেবে না – এমন ধারা কল্পনাকেও মনে ঠাঁই দেব না।
অশান্তিকে গলবস্ত্র হয়ে ডাকব না, কিন্তু এসে পড়লে খাটের তলায় সেঁধিয়ে গিয়ে মূর্খের স্বর্গেও জুড়াতে চাইব না। আর অন্যদিকে শান্তিদেবীর পায়ে তৈলমর্দন করে শক্তি অপচয়ও করব না।
রবীন্দ্রনাথের সারা জীবনে অজস্র লেখা এই কথা বারবার শিখিয়ে গেছে আমাদের। সে উদাহরণে ভারাক্রান্ত না করে একটি গানের উল্লেখ করে প্রসঙ্গের ইতি টানি।


           তোমার কাছে শান্তি চাব না,
           থাক্-না আমার দুঃখ ভাবনা ॥
অশান্তির এই দোলার 'পরে        বোসো বোসো লীলার ভরে,
           দোলা দিব এ মোর কামনা ॥
           নেবে নিবুক প্রদীপ বাতাসে,
           ঝড়ের কেতন উড়ুক আকাশে—
বুকের কাছে ক্ষণে ক্ষণে            তোমার চরণ-পরশনে
           অন্ধকারে আমার সাধনা ॥