Skip to main content

দোষ নেই? প্রচুর দোষ আছে।

নাতবৌ আর নাতি ফুচকা খাচ্ছে। শালটা গায়ে জড়িয়ে, মোজাটাও শালের মধ্যে ভরে মন্দিরের চাতালে বসে ঠাকুমা। মেলা হচ্ছে। বেলা এগারোটা হবে। খানিকবাদে ভোগের ঘন্টা দেবে। খিচুড়ি।

নাতি?

হ্যাঁ।

খুব ভালোবাসে, না?

ঠাকুমা হাসল। বলল, আপনি?

একাই। কেউ নেই। হাঁটু ব্যথা। বেরোতে পারি না। তবু এই খিচুড়ির লোভে আসি।

ঠাকুমা সিঁথির দিকে তাকালো। বলল, উনি?

বিছানায়। আজ তিন বছর হল।

নাতি এসে বলল, ঠাম্মা, আমরা একটু পুকুরের দিকটা ঘুরে আসি। ওকে নিয়ে। নৌকা চড়বে বলছে। তুমি আমাদের সঙ্গে বসবে, নাকি আগে নিয়ে নেবে প্রসাদ?

ঠাকুমা বলল, নিয়ে নেব দাদুভাই, তোমরা ঘুরে এসো।

নাতি চলে গেল। পাশেরজন বলল, আপনার স্বামী কি অনেকদিন হল…..

ঠাকুমা হেসে বলল, অনেকদিন ভাই।

======

ঘন্টা পড়ল। লাইন পড়ল। ঠাকুমা তাকালো। ঠেলাঠেলি হচ্ছে। ঠাকুমার পাশেরজন বলল, দিদি উঠবেন?

দুজনে দুজনকে ধরে উঠল। লাইনে দাঁড়ালো। কোথা থেকে একটা ছেলে দৌড়ে দুটো থালায় খিচুড়ি নিয়ে এসে বলল, তোমরা এদিকে এসো…. ওদিকটায় ফাঁকায় বসে খাও।

তারা বসল মুখোমুখি। পাশেরজন বলল, ছেলেটা আমাদের পাড়ার। আপনি বামুন?

ঠাকুমা বলল, কেন ভাই?

না, এমনি মনে হল… আপনাকে দেখে মনে হল।

ঠাকুমা হাসল। বলল, শুরু করুন ভাই। বলে, চোখ বন্ধ করে দুটো হাত কপালে ঠেকিয়ে বলল, জয় নিতাই গৌর আমার।

পাশেরজন বলল, হরি হরি।

ঠাকুমা বলল, প্রসাদ মানে কি জানেন ভাই? প্রসন্নতা। ঈশ্বরের প্রসন্নতা। মন ভালো থাকলেই সব ভালো লাগে।

পাশেরজন এখন সামনের জন। পা'টা ছড়িয়ে বসে। বলল, মন ভালো থাকে না দিদি।

ঠাকুমা বলল, ওইটুকুই চেও। ঠাকুর আমার মন ভালো রাখো। ভালো মন মানেই শুদ্ধ মন। ভালো মন মানেই গৌর-নিতাইয়ের প্রসন্নতা। আর কি চাইবে ভাই? সব যাবে। শুধু চাও, ঠাকুর আমার মন ভালো রেখো। মন ভালো হলে আশেপাশে সব ভালো লাগে। তাই না?

সামনের জন বলল, চাইলেই কি দেবেন দিদি? তুমি পুণ্যাত্মা। তোমার মুখ দেখলেই বোঝা যায়। আমাদের মনে হাজার প্যাঁচ দিদি। মন তিনি ভালো রাখলেই আমি রাখতে দেব কেন?

এই বলে সামনের জন হো হো করে হেসে উঠল। ঠাকুমাও হাসতে হাসতে বলল, চাটনিটা কি ঝাল, দেখুন তো দিদি?

সামনের জন বলল, অল্প। পায়েসটা কি বানায় গো দিদি। আমার মন তো এই পায়েসটাতেই ভালো হয়ে গেল। আহা!

একজন এসে বলল, সঞ্জীবদা বলল, আপনি বাড়ি চলে যেতে পারবেন তো? ওরা ওদিকে রেস্টুরেন্টে খেয়ে নেবে। না হলে আমি পৌঁছে দেব আপনাকে। ওই যে আমার টোটো।

ঠাকুমা বলল, তুমি প্রসাদ পেয়েছ ভাই?

সে থতমত বলল, না ঠাকুমা…. এই নেব। আগে ছেড়ে আসি…

ঠাকুমা বলল, যাও, আগে প্রসাদ পাও…. নাম কি তোমার?

সে বলল, মনতোষ।

ঠাকুমা বলল, যাও ভাই, প্রসাদ নিয়ে এসো। আমার সময় লাগবে তারপর যাচ্ছি।

সামনের জন হাঁ করে তাকিয়ে।

ঠাকুমা বলল, হিসাব মেলাতে যাবেন না ভাই। সুতোয় টান পড়লে সুতো ছেড়ে দেবেন।

সামনের জন্য বলল, লাটাই খালি হবে যে শেষে।

ঠাকুমা বলল, খালি কিছুই থাকে না ভাই। কেউ না কেউ আসবেই। আপনিই আসবে। এই বিশ্বাসেই তো এতগুলো বছর কাটিয়ে এলাম। চড়ায় ঠেকালেন যিনি, চড়া থেকে খুলেও দিলেন তিনি।

নাতি….. এরকমই না…. সামনের জন বলল।।

ঠাকুমা বলল, এই খাবার ওদের রুচবে দিদি? যাক না। মেলা দেখেছে। এবার নিজের মত খাক। এই যে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এই বা কম কি? সব কি নিজের হিসাবে হয়?

টোটোতে দুজনেই উঠল। মনতোষ বলল, ধীরে চালাব, ঝাঁকুনি বুঝবেই না……

ঠাকুমা হাসল। পাশের জন বলল, ভাড়াটা দুজনেই দিই।

ঠাকুমা বলল, আগে তো পৌঁছাই।

পাশেরজন বলল, পায়েসের স্বাদটা এখনও জিভে লেগে…..

ঠাকুমা বলল, তাই যেন থাকে।