সৌরভ ভট্টাচার্য
5 June 2019
কথা হচ্ছে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া সিলেবাস। আমি সে বিতর্কে যাচ্ছি না। আমার খালি একটা কথাই মনে হচ্ছে, যা সিলেবাসে আছে তাই কি শিখছি আমরা? না শিখতে চাইলে শেখাচ্ছে কে? কার সাধ্যি শেখায়? সে সিলেবাসে থাকুক চাই না থাকুক। সেই একটা গল্প আছে না? একজন রাজা মুড়ি খেয়ে বেজায় খুশী। তো হল কি, সেই খুশীতে আগুপিছু না ভেবে রাজা ঘোষণা করে বসল, যে আমায় মুড়ি ভাজা শেখাবে তাকে আমি অর্ধেক রাজত্ব দিয়ে দেব। শুনে তো রাণীর মাথায় হাত, "একি বললেন মহারাজ? এ যে ভীষণ সোজা বিষয়!" সব শুনে রাজার তো মাথায় হাত, সত্যি ভীষণ কাঁচা কাজ হয়ে গেছে। অবিশ্যি এই বিমর্ষতা বেশিক্ষণ রাজাকে কাবু করে রাখতে পারল না। হাজার হোক একটু কূটবুদ্ধি না থাকলে কিসের রাজা? তো রাজা বলল, "আরে রাণী চিন্তা কোরো না, আমি না শিখতে চাইলে কার সাধ্যি আমায় মুড়িভাজা শেখায়।"
তাই হল। রাজা পরেরদিন সিংহাসনে বসলেন। এদিকে হাজার হাজার লোক লাইন করে দাঁড়িয়ে, রাজাকে মুড়ি ভাজা শেখাবে এবং অর্ধেক রাজত্ব ট্যাঁকে ভরে বাড়ি যাবে। কিন্তু গোল হল। রাজা কিছুতেই বুঝতে পারে না কি করে মুড়ি ভাজা হয়। যেই শেখায় যত যত্ন নিয়েই শেখায়, রাজা বলে, "উঁহু... বুঝলাম না।"
অগত্যা সব্বাই হার মানল। রাজার অর্ধেক রাজত্বও বাঁচল। সেই হল কথা, যতই সিলেবাসে থাকুক, পরীক্ষার খাতায় থাকুক, সার্টিফিকেট আলো করে দেওয়ালে ঝুলুক। সত্যিই কি শেখা হল? 'সদা সত্য কথা বলিবে', 'সৎ পথে চলিবে', 'অন্যের ধনে লোভ করিবে না...' ইত্যাদি ইত্যাদি বলে বলে কত মহাপুরুষের পঞ্চত্বপ্রাপ্তি হয়ে গেল, কিন্তু আমরা সেই ভেজালে তো সেইইইই ভেজালেই। ও যাই শেখাতে চাও, যাই সিলেবাসে রাখতে চাও, আমি তাবিজ পরব, জ্যোতিষীর গালে চুমু খাব, যজ্ঞ করে গর্ভাধান করব, গোত্র দেখে কুষ্ঠী মিলিয়ে বিয়ে করব, আরো কত কত কত পরাবৈজ্ঞানিক চর্চা করব সে ব্রহ্মাই জানেন।
তাই হঠাৎ করে যখন 'চাপিয়ে দেওয়া' নিয়ে শোরগোল উঠল তব হম ইয়ে শোচ মে পড় গেয়ে কি... যা চাপানো হয়নি তাতেই কি হল? আর যা চাপাতে চাওয়া হল তাতেই বা কি হতে যাচ্ছিল?
ভেবে কিছু সমাধান না পেয়ে কয়েকটা দোকানে খোঁজ করে দেখলাম তুলসীদাসী রামায়ণ, বাল্মিকী রামায়ণ ও কৃত্তিবাসী রামায়ণ আমাদের রাজ্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে না পাওয়া যাচ্ছে?
কি ভুলভাল সব লিখছি। কিসের কথা কোথায় আনছি। কথা হচ্ছে তো সিলেবাস নিয়ে। তা আমাদের শিক্ষিত করে এমন সিলেবাস বানানো যায় কিন্তু আমাদের মানুষ করে এমন সিলেবাস যদি কেউ চাপিয়ে দিত রে... বলত আজ থেকে ওইসব কুসংস্কার দেখলেই একুশ হাতা জল গেলানো হবে... কই কই... কেউ কি তখনও বলবে 'কুসংস্কার আমাদের জন্মগত অধিকার'... বলা যায় না....