যখন টুকরো টুকরো হয়ে গেলাম। চুরচুর হয়ে গেলাম ভেঙে, একবার মনে হয়েছিল, আর হয় তো ফিরব না। হয় তো সব গেল, একেবারেই গেল। তখন মধ্যরাত।
সারা ঘরময় ছড়ানো আমি। স্বপ্ন, বিশ্বাস, আস্থা, ভরসা, ভালোবাসা... আরো কত কি... ছড়িয়ে ছটিয়ে সব।
চুপ করে বসে আছি। বিষণ্ণ হৃদয় বিষণ্ণতার প্রান্তসীমা ছুঁয়ে। তিরতির করে কাঁপছে। যেন এখনই অসীম অন্ধকারে চিরকালের জন্য যাবে ডুবে। হারিয়ে। এমন সময়, সেই গভীর রাতে বাইরের বাগান থেকে ডেকে উঠল পাখি। চমকে উঠলাম। রাত্রির শেষ প্রহর তখন।
হঠাৎ মনে হল, এই যে শতটুকরো আমি, এতদিন এরা কোন সূত্রে ছিল বাঁধা? শূন্য তো বাঁধতে পারে না! নিজেকে এত বছর ধরে যে যে অনুভবে, যে বিশ্বাসে, যে ভালোবাসায়, সুখে-দু:খে গড়ে তুলেছি, সে সবকে গ্রহণ করেছিল কে? কে এতদিন ধরে সাজিয়ে রেখেছিল আমার আমিকে এমন করে? সে তো শূন্য হতে পারে না!
তার দিকে তাকালাম। বোধ এক। তার উৎস জানি না। এক গভীর বোধ, এক গভীর আমি। যাকে তৈরি করা যায় না, যে তৈরি হয়েই এসেছে। যে চিরকাল একা। স্থির। শান্ত। অরঞ্জিত। তার আকার নেই। নাম নেই। কিন্তু সে আছে বলেই আমার এই ভঙ্গুর আমি এতদিন ধরে আছে। তার জোরেই আছে। তাকে হারানো যায় না। সে নিজেই নিজের অস্তিত্বের প্রমাণ। আকাশের মত টুকরো টুকরো মেঘে সাজিয়ে রেখেছে যে নিজেকে।
ভোর হল। প্রথম আলো এসে পড়ল জানলা দিয়ে। এই প্রথম মনে হল আলোকে আলো হিসাবে দেখলাম, সে শুধুই অন্যকে প্রকাশ করে না। সে নিজেই স্বপ্রকাশ।
(ছবি: Aniket Ghosh)