যে খবরটা নিয়ে খবরের কাগজগুলো তোলপাড় হচ্ছে তা হল ডোমের চাকরির জন্যে উচ্চশিক্ষিতদের আবেদনপত্র। অনেকেরই বক্তব্য পড়লাম, ডোমের চাকরি মানে সরকারি চাকরি, মানে সুনিশ্চিত নিরাপত্তা।
সমস্যাটা সামাজিক হায়ারার্কির নীচুস্তরের পদ বনাম উচ্চশিক্ষার শংসাপত্র নয়, যেভাবে দেখানো হচ্ছে। সমস্যাটা হলো একটি অবাস্তব অপরিণত মানসিকতা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলে যে কোনোদিন চাকরি যেতে পারে, সরকারি চাকরি পেলে কোনোদিন চাকরী যাবে না। এই সিকিউরিটির সমীকরণটা সম্পূর্ণ সত্যি নয়। 'স্কিল' বা 'দক্ষতা' বলে একটা শব্দ আছে। সেই স্কিল বাড়ানোর অনেক উপায়ও বর্তমানে আছে। আমার মনে হয় না বর্তমান সময়ের যুবক-যুবতীরা এই সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল নয়। গত দশ-পনেরো বছরে তাদের মানসিকতার অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে। শপিং মলে, ডেলিভারি বয় হিসাবে ইত্যাদি নানা কাজে আগের মতো হীনমন্যতা বোধটা কাটিয়ে উঠতে দেখছি আমরা। সুতরাং যে ছবিটা আমরা দেখছি বা দেখানো হচ্ছে, আমার বিশ্বাস তা বৃহদংশে বাংলার যুব সমাজের মানসিকতা নয়। সাধারণ একটা ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজ থেকে পাশ করে সাধারণ একটি কোম্পানিতে মোটামুটি মাইনের চাকরিতে যুক্ত হয়ে কেরিয়ার শুরু করে দিচ্ছে বহু ছেলে-মেয়ে আজকাল। ক্রমশ উন্নতির পথে এগিয়েছে এ উদাহরণ দুর্লভ নয়। এছাড়াও ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করে জীবন শুরু করার তাগিদ আগের থেকে অনেক বেশি বেড়ে গেছে। আর এইসব পরিবর্তনগুলোই ভীষণ সদর্থক।
কিছু মানুষ অবশ্যই 'সুনিশ্চিত সরকারি চাকরি'-র আশায় যে কোন মূল্য দিতে রাজী, এর অভাব নেই কিন্তু আমার বিশ্বাস তাদের সংখ্যা আগের থেকে অনেক কম। খবরের কাগজে এধরনের খবর যেমন, পি.এইচ.ডি. করে রিক্সা চালাচ্ছে, এম.এ. পাস করে লেবারের কাজ করছে, কনস্টেবলের চাকরির জন্যে আবেদন করছে ইত্যাদি ইত্যাদি পড়েই আসছি। সমস্যাটা হচ্ছে এগুলো অবাস্তব তা বলছি না। সমস্যাটা হচ্ছে যে অতিরঞ্জিত গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে এবং একটি প্রচ্ছন্ন নঙর্থক মানসিকতার যে জেনারালাইজেশান করা হচ্ছে, আমার তাতে আপত্তি। যে সমস্ত ছেলে-মেয়েরা লড়াই করছে, স্বপ্ন দেখছে এবং যাদের লড়াইয়ের ফসল হিসাবে সমাজটায় বেশ কিছু সদর্থক পরিবর্তন এসেছে, সে সবকিছুকে গুরুত্ব না দিয়ে, অভিনন্দিত না করে শুধুমাত্র কয়েকটি এ ধরনের ঘটনাকে এত গুরুত্ব দেওয়া আমার মনে হয় না স্বাস্থ্যকর।