Skip to main content

সরস্বতী পূজো-জন্মাষ্টমী-দোল-কালীপূজো ইত্যাদি স্কুল ছুটি; ঈদ মহরম স্কুল ছুটি; পঁচিশে ডিসেম্বর স্কুল ছুটি; বুদ্ধ পূর্ণিমা স্কুল ছুটি। 

        প্রতিটা কারণ ধর্মীয়। তালিকা আরো দীর্ঘ করা যায়, করলাম না। কারণ পয়েন্টটা ধরা গেছে নিশ্চই। 
        আচ্ছা যদি বলি, নিউটন অমুক সালে 'গন উইথ দ্যা উইন্ড' লিখে সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন; কিম্বা বলি আইনস্টাইন প্রথম হিমালয় অভিযানে যান; কিম্বা বলি অশোক গ্রীনিচ মিন টাইম ঠিক করতে মেসোপটেমিয়া গিয়েছিলেন; কিম্বা যদি বলি কলম্বাস আর পীথাগোরাস বঙ্কিমবাবুর সাথে গলফ খেলতেন ইডেনে ইত্যাদি ইত্যাদি... যে কোনো মাধ্যমিক কি এইট পাশ করা মানুষ আমার মানসিক সুস্থতা নিয়ে সন্দেহহীন হবেন। কারণ? ওগুলো আমরা পড়েছি। স্কুলে পড়ানো হয়েছে। 
        কিন্তু আপনার যদি ব্যক্তিগত আগ্রহ না থাকে আপনি বলতে পারবেন না গীতার মোদ্দা কথাটা কি... কোরাণের মূল চরিত্রগঠনের নীতিগুলো কি কি... বুদ্ধধর্মে কোন কোন অনুশীলনটা প্রধান... গুরুগ্রন্থসাহেবের মধ্যে সারা ভারতের কত সন্ত-মহাত্মার বাণী লিপিবদ্ধ করা আছে...
        কারণ? কারণ আপনাকে আমাকে পড়ানো হয়নি। আচ্ছা আপনাকে আমাকে যখন কবিতা পড়ানো হচ্ছে ক্লাস টুয়েলভ অবধি, কেউ কি মনে করছেন... 'আমরা তো কবি নই?'... 'আমাদের তো ভবিষ্যতে কবি হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই'... না, বলছেন না। কারণ সুস্থ বেঁচে থাকার জন্য ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য ইত্যাদির প্রাথমিক জ্ঞানটা থাকা বাঞ্ছনীয়। চলতে কাজে লাগে। 
        ধর্মটা? আপনাকে ধর্মের বই পড়তে গেলে কি আধ্যাত্মিক জ্ঞানপিপাসু হতেই হবে? ঈশ্বরে বিশ্বাসী হতেই হবে? না। কোনো দরকার নেই। ঠিক যেমন কবিতা, বিজ্ঞান ইত্যাদি পড়বার সময় সেই সেই বিষয়ের সর্বজ্ঞ হওয়ার কোনো দায় নেই আমার। সেটা আমার জীবনশৈলী সমৃদ্ধ করতে তথা আশপাশটা বুঝতে সাহায্য করে মাত্র। ধর্মের ক্ষেত্রেও ঠিক সেই কাজটা করা আশু প্রয়োজন বলে মনে হয়। মহাত্মা বারবার বলেছিলেন, বিদ্যালয়ে সব ধর্মের বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞানটা হোক সবার। মানুষ বুঝুক শৈশব থেকেই যে মোদ্দা কথাটা সব ক্ষেত্রেই এক। ভালো হও। উন্নত হও। স্বার্থহীন হও। সে যে ভাবেই তা উপস্থাপন করুক না কেন, সেটা তার বাহ্যিক দিক। গৌণ দিক। 
        পদার্থবিদ্যা, জীবনবিজ্ঞান, রসায়ন, ভূগোল, ইতিহাস, সাহিত্য সীমাহীন সাগরের মত গভীর আর প্রসারিত। তবু তার মধ্যে থেকেই বিজ্ঞজনেরা কিঞ্চিৎমাত্র সংগ্রহ করে প্রাথমিক ধারণাটা করিয়ে দেন আমাদের বোধের সাথে। আমাদের বোধের রাজ্যে তাদের একটা পরিচয় ঘটে। সেই পরিচয় পরবর্তীকালে আমার রুচির সাথে বৃদ্ধি পেয়ে আরো গভীরতা আর প্রসারতা লাভ করে। আমার চেতনায় জ্ঞানের উন্মেষ ঘটে। 
        ধর্মে এই কাজটা হল না কেন? কেউ কারোর ধর্ম সম্বন্ধে প্রাথমিক ধারণা না নিয়েই বড় হচ্ছি, তাও ভারতের মত দেশে, যেখানে ধর্মের বিষয়ে মানুষ এত সচেতন, স্পর্শকাতর, এত সিরিয়াস। যে যা খুশী প্রচার করছে, আমরা বিশ্বাস করছি। গৌণটা মুখ্য হয়ে যাচ্ছে। কোনো কথা তার প্রেক্ষাপট ছাড়া তুলে ধরলে বিভীষিকা সৃষ্টি করতে পারে। আজ হচ্ছে। কারণ মূলটা আমরা জানি না। 
        কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক হলেও বলি, ঠিক এই জিনিসটা আমাদের যৌন বিজ্ঞান নিয়েও ছিল। এখন পুরো অন্ধকারটা না কাটলেও কিছুটা কেটেছে। আমি বায়োলজি পড়াই। মেয়েরা তাদের মায়ের কাছ থেকে মোটামুটি যৌন জীবন সম্বন্ধে একটা প্রাথমিক ধারণা তবু পায় দেখেছি, যদিও তাও অনেক ভুলভ্রান্তিতে ভরা, কিন্তু ছেলেদের অবস্থা শোচনীয়। না বলতে পারে বাবাকে, আর মাকে তো প্রশ্নই উঠছে না। সম্বল সবজান্তা বন্ধুরা, আর অধুনা নেট। 'হস্তমৈথুন করলে কি অন্ধ হয়ে যায়?... বাচ্চা হয় না পরে?... লিঙ্গ খসে পড়ে যায়?... ক্ষয়ে যায়?'... আজব সব প্রশ্ন। কারণ স্কুলে পড়ানো হয় না। ও তো basic instinct, ঠিক শিখে যাবে।
        ধর্মও তো ব্যক্তিগত basic instinct, অগত্যা ওসব পড়িয়ো না। সেক্যুলার হও। এদিকে সব পার্বণে ছুটি। মোচ্ছব। কারণ ওটা social matter. আরে ভাই সমাজের বাইরে মানুষের কি অবশিষ্ট থাকে? ধর্ম আর সমাজ আলাদা করা অনেকটা শিখা থেকে আলো পৃথক করার ন্যায় অসম্ভব কথা। অভিধানে দুটো আলাদা শব্দ হলেও যে একই সাথে বেড়ে ওঠে দুটো, একি অস্বীকার করা যায়? আমি চূড়ান্ত নাস্তিক হই না, তাতে কি এসে গেল, সব ধর্মের প্রাথমিক ধারণাটা থাকবে না আমার? বাধ্যতামূলকভাবে এই সমাজের ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে থাকা চিন্তার প্রকাশের ভিন্নতাগুলো বুঝব না? মূল কথাটা যে একই সেটা জ্ঞানী-বিদগ্ধজনেরা একত্রিত হয়ে একটা সিলেবাসের মধ্যে আনতে পারবেন না? শুভবুদ্ধিযুক্ত মানুষের কি এতই অভাব, আকাল পড়েছে দেশে? সমালোচনা নয়, উৎখাত নয়, অস্বীকার নয়, সমস্যার উপর উপর সমাধানের কপট চেষ্টা নয় - গভীরে গিয়ে এর জড়টা ধরে টান মারতে হবে। আর তা হবে জ্ঞানের মাধ্যমে। একে অন্যকে সঠিকভাবে জানার মাধ্যমে। এ যত শীঘ্র হয় তত মঙ্গল। নইলে সত্যিই সামনে বড় দুর্দিন।