Skip to main content

গোঁসাই বলল, তোমার বুদ্ধি খোঁজে সূত্র, চিত্ত খোঁজে আনন্দ।

জিজ্ঞাসা করলাম, কিসের সূত্র গোঁসাই?

জগতের সব সমস্যা সমাধানের। সব রহস্য উদঘাটনের। সূত্রের পর সূত্র জমিয়ে চলেছ। সে সব সূত্রকে বাঁধার জন্য আবার এক সূত্র বানাচ্ছ। এই সূত্র খোঁজায় মেতে আছ। ভালো। কিন্তু আনন্দও তো দরকার।

জিজ্ঞাসা করলাম, আনন্দের সূত্র হয় না?

গোঁসাই বলল না গো, সেখানে কোনো সূত্র নেই। সব সুতো না ছাড়লে সে দরজায় পৌঁছানো যায় কই? জগতের রহস্যের-সমস্যার সমাধান যেমন চাও সূত্রে, তেমনই চিত্তের সমাধান আনন্দে।

পাওয়া যায় কি করে গোঁসাই?

প্রসন্ন হও। যে জ্ঞান প্রসন্ন করে চিত্ত সে জ্ঞানের অন্বেষণ করো। যা ক্ষুব্ধ করে তাকে দূরে সরাও। বারবার অভ্যাস করো। একান্তে অভ্যাস করো। প্রসন্নময়ীর পাশে এসে বসো। তোমার চিত্তের মধ্যে এক মা আছেন। প্রসন্নময়ী। সে বারণ করে, শাসন করে। আমাদের তার কথা না শোনা অভ্যাস হয়ে যায়। লোভে। কু-অভ্যাস। ছাড়ো ছাড়ো। মাথার মধ্যে লক্ষ সূত্রের জাল জড়িয়ে। ভাবছ জগত উদ্ধার করবে। আগে নিজেকে উদ্ধার করো। প্রসন্নময়ীর পাশে বসো। শীতল বাতাস লাগুক প্রাণে। শীতল হও। তার কাছে বসা অভ্যাস করো। এসো। এসো।

এত ব্যস্ত যে গোঁসাই। আশ্রম ছাড়লেই সব ভুলে যাই। নিজেকে ভালো রাখাও যেন বালাই তখন, দৌড় আর দৌড়। কথা আর কথা।

গোঁসাই বলল, বিচারের সত্য আর অভিজ্ঞতার সত্য। দুই-ই আছে। অভিজ্ঞতার পারে যাও। বিচার করো। বিচারের সাজসরঞ্জাম সব ভিতরে আছে। যা তোমাকে ক্ষুব্ধ করে তাকে দূরে রাখো। যা তোমাকে প্রসন্ন করে তাকে কাছে রাখো। বিচার করে দেখো প্রাণ কি প্রাণিত হয়, না পেলে প্রসন্নময়ীর ছোঁয়া? ক্ষুব্ধ চিত্তে, সূত্রের অহংকারে মানুষকে ঠকাতে পারো। নিজেকে? পারো না। তাই সময় থাকতে আঁকড়াও। পাকড়াও নিজেকে। সময় চলে যাচ্ছে! সু অভ্যাস করো। সু অভ্যাসই ভেলা। সু-অভ্যাসের সু-ইচ্ছাই কৃপা। নিজের উপর রাখো। নিজেকে কৃপা বঞ্চিত কোরো না।

নিজেকে কৃপা বঞ্চিত কোরো না। স্টেশানে বসে। ফেরার পালা। গোঁসাই সব্জী কাটতে কাটতে কথাগুলো বলে গেল। হাত কাটল না। রক্ত বেরোল না। তার মধ্যেই আশ্রমের আরো কত মানুষ এলো গেলো। কত পরামর্শ, আলোচনা হল অন্যের সঙ্গে। কথার খেই হারালো না। আনাজপাতি কাটা হল। উনুনে আঁচ চড়ল। সব কি করে এমন সামঞ্জস্য রেখে হয় গোঁসাই?

গোঁসাই কার্তিকের শীতল বাতাস হয়ে কানে কানে এসে বলল, সু-অভ্যাস রে ভাই… সু-অভ্যাস…