গুরুদেব বনে যেতেন। কাঠ কাটতেন। ফলমূল, শাকসব্জী নিয়ে আসতেন। চাষ করতেন, ধান গম নানা শস্যাদি। নিজেই রান্না করতেন। পরিবেশন করতেন নিজের হাতে।
কারণ, গুরুদেবের সব শিষ্য ছিল পঙ্গু। উনি পঙ্গুদেরকেই শিষ্য হিসাবে নিতেন। তাদের যাবতীয় দেখাশোনা ভার তিনি নিতেন। এমনকি শৌচাদিও নিজের হাতে পরিষ্কার করতেন। রাত নামলে সবাইকে নিয়ে সাধন ভজন করতেন। রাত গভীর হলে সবাইকে নিয়ে নিদ্রা যেতেন।
গুরুদেব একদিন মারা গেলেন। কিন্তু মৃত্যুর পর যা আশা করেছিলেন তা হল না। দেবলোকে না, গুরুদেবের ঠাঁই হল নরকে।
গুরুদেব যাকে বলে রেগে আগ্নেয়গিরি। উত্তপ্ত লাভার মত বাক্যবাণ ছুটছে, যে মুখ দিয়ে আগে শুধু স্তবস্তুতি আর করুণার বাণী বেরোত।
দেবদূত এলেন। গুরুদেবের সব কথা শুনে শান্ত হয়ে বললেন, আপনি একবার মর্ত্যলোকে আপনার আশ্রমে চলুন আমার সঙ্গে। সুক্ষ্মশরীরে।
আশ্রমে এসে দেখেন আশ্রম জুড়ে চিকিৎসক আর চিকিৎসক। আশ্রম জুড়ে চীৎকার চেঁচামেচি।
গুরুদেব বললেন, কে ওদের এমন অত্যাচার করছে?
দেবদূত বললেন, চিকিৎসা চলছে, ক্ষণিকের যন্ত্রণা। এরপর সবাই দেখবেন দাঁড়াচ্ছে, দেখছে, নিজের হাতে খাচ্ছে।
গুরুদেব বললেন, কিন্তু ওদের কর্মফল? আমি তো সেই জন্যেই ওদের.....
দেবদূত বললেন, আপনি ওদের মই করে দেবলোকে উঠতে চেয়েছিলেন। সমস্যাটা আপনার না। যুগে যুগে নানা রাষ্ট্রের জননেতারাও বিবেকের ঊর্ধ্বে কোনো প্রাচীন কুসংস্কারকে ধ্রুব বিশ্বাস করিয়ে জনগণের বিচারধারাকে পঙ্গু করে দেবলোকে সুখে থাকার ব্যবস্থা পাকা করেন। আরো কাছে গিয়ে শুনুন আপনার শিষ্যেরা কী বলছেন?
গুরুদেব কাছে গিয়ে শুনলেন। তারা যাবতীয় গালাগাল চীৎকার করতে করতে বলছে। সব গালাগালের আগে পিছে তার নাম।
গুরুদেব বললেন, কিন্তু আমি যে তোমাদের সেবা করেছি, সুখ দিয়েছি...ওরা তো দিচ্ছে ব্যথা.....
এক শিষ্য আপন মনে বলে উঠল....আহা! আহা! সে তো আপনার সুখের জন্য....আমাদের পঙ্গুত্বে আপনার সুখ.....নাকি? আমাদের স্বাধীনতার মান দেননি, জড়ত্বের সুখ দিয়েছেন। এর চাইতে বড় অপমান আর কী হয়?
গুরুদেব চুপ করে রইলেন।
দেবদূত বললেন, আপনি যদি পঙ্গু হন পরের জন্মে, কাকে চাইবেন? চিকিৎসক, না গুরুদেব?
গুরুদেব বললেন, স্তব না। চীৎকারই নেব।