Skip to main content
 
 
"সত্যতে থাকলে ঈশ্বর লাভ হয়"....
 
"সত্যের জন্য সবকিছুকে ত্যাগ করা চলে কিন্তু, কোনো কিছুর জন্য সত্যকে ত্যাগ করা চলে না"...উক্তি দুটির প্রথমটি রামকৃষ্ণদেবের পরেরটি বিবেকানন্দের।
 
        কিন্তু রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সাহিত্যে সেই সত্যের কতটা পালন হয়েছে? সবটাই কি ইংরাজীতে যাকে fact বলে তাই, নাকি "মনের মাধুরী" না মিশলেও সুকৌশলে চিনির সাথে বালি মেশানো হয়েছিল? এরকমই বেশ কিছু বিতর্কিত বিষয় নিয়ে বইটি।
        ১) "কথামৃত" কি আদৌ একটি নির্ভুল ঐতিহাসিক দলিল? এর মধ্যে কি কোথাও কোনো প্রকারে লেখকের কথা রামকৃষ্ণের কথা হয়ে যায়নি?
        সক্রেটিসের কথা, প্লেটো ও জেনোফোন দুজনের লেখাতে মূলত পাওয়া যায়। রাসেল তার বিখ্যাত বই 'পাশ্চাত্য দর্শন ইতিহাসে' জেনোফোনের চাইতে প্লেটোকে অধিকতর মান্যতা দেন প্লেটোর গভীর মননশীলতার জন্য। যদিও এটা সর্বজনবিদিত সক্রেটিসের মুখে প্লেটো বহুবার নিজে বসেছেন।
        কিন্তু আমাদের সমস্যা হলো - ভক্তি। ভক্তির কুয়াশায় সত্য বিকৃত হয়। শ্রদ্ধা অতিশ্রদ্ধা হয়ে পরোক্ষ ভাবে শ্রদ্ধাপাত্রকে অস্তিত্ব সংকটে ফেলে।
        "কথামৃত" চারভাগ প্রকাশের পর (১৯১০ সালে) বাইশ বছর শ্রীম কিছু লেখেন নি। শুধু প্রয়াণের পূর্বে পরিশিষ্টের পঞ্চম অংশ ছাড়া। যেখানে তার কথা ছিল ৬/৭ ভাগ রচনা করার। কেন?
        "সাধু দেখিলেন ডায়েরির সওয়া পাতা হইতে শ্রীম চার পাতা সৃজন করিলেন"। লেখক লিখছেন ডায়রির সওয়া পাতা থেকে চার পাতা লেখা! "বলাই বাহুল্য শ্রীম যতবড়ই স্মৃতিধর কিংবা শ্রুতিধর হন না কেন অর্ধশতাব্দীর ব্যবধানে ডায়রিতে লেখা অন্যের কথাকে সওয়া পাতা থেকে চার পাতা করা কোনো মনুষ্য প্রতিভায় সম্ভব নয়"।
        রবীন্দ্রনাথ একটি চিঠিতে তিনি পরমহংসদেবের মুখের কথা কিছু বিদেশি সাধকদের কথা থেকে সংগৃহীত হওয়ার কথা উল্লেখ করছেন একটি পত্রে।
 
 
        ২) এর পরে আসে বিভিন্ন প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ত্বদের সাথে রামকৃষ্ণ-এর সাক্ষাৎ-এ রামকৃষ্ণ সাহিত্যে উল্লিখিত ঘটনাবলির যথার্থতা নিয়ে।
 
        দেবেন ঠাকুর থেকে শশধর তর্কচূড়ামণি অবধি, সব লেখাতেই যে একপেশে রামকৃষ্ণকে মহিমান্বিত করে দেখাবার চেষ্টা করেছে তার বিপরীত তথ্যাবলি প্রমাণ সহকারে উপস্থাপনা করা আছে।
        যেমন শশধর তর্কচূড়ামণিকে যে রামকৃষ্ণ কখনই 'চাপরাশ' এর কথা উল্লেখ করেননি যা 'কথামৃত', 'লীলাপ্রসঙ্গে' বর্ণিত আছে তা শশধর তর্কচূড়ামণি নিজে পত্র মারফত জানিয়েছেন। এরকম আরো নাড়া দেওয়ার মত তথ্যাবলী মধুসূদন, দেবেন্দ্রনাথ, কেশব সেন প্রমুখদের নিয়েও আছে।
        বইটি কল্পনাপ্রসূত নয়। প্রতিটি তথ্যের আকর গ্রন্থের উল্লেখ আছে। লেখার ভাষা অত্যন্ত সংযত ও স্বচ্ছ। বইটা পাঠকের মনে চিন্তার খোরাক জোগাবে তো নিশ্চয়ই, অনেক কিছুকে নিরপেক্ষ বিচারের স্পষ্ট আলোয় দেখতে সাহায্যও করবে। ধাক্কা দেবে।
        কোনো এক বিশেষ ভাবমূর্তিতে বিচারহীন, প্রশ্নহীন সমর্পিত থাকার মধ্যে কোনো গৌরব আছে বলে মনে হয় না। চলতে গেলে প্রশ্ন আসবেই, সংশয় জাগবেই। লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একটি বিষয় অবতারণা করার জন্য। প্রকাশককে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা লেখটি প্রকাশের সৎ সাহসের জন্য।
 
 
প্রকাশক "পত্রলেখা"
স্টল নং -৩৫৩
লেখক - Arnab Nag
 
 
 

Category