কী ভাবে চিনব?
চিনবে। সময় এলেই চিনবে।
কিন্তু কীভাবে?
তেষ্টায় ছাতি ফেটে যাচ্ছে। কেউ একগ্লাস জল এনে তোমার সামনে রাখল। ভাবো একটা কাঁসার গ্লাস, তার মধ্যে টলমল করছে স্বচ্ছ জল। তোমার তৃষ্ণা মেটানো জল। তোমায় তৃপ্ত করার জল। সেই জল দেখেই তোমার যে শান্তি, যে আনন্দ, যে আশ্বাস….এও তেমন।
এ হয়? এ সম্ভব? আমি তো আশা দেখছি না আর। কত রাস্তায় হাঁটলাম। কত পড়লাম, আছাড় খেলাম, হামাগুড়ি দিলাম, দৌড়ালাম। কিন্তু শেষে? মহাশূন্য। কত বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলায় দুলে দুলে কতবার কত কী যে হারালাম। আজ মনে হয় মূলধনটুকুও গচ্চা করে বসে আছি। কিন্তু কিছু সারবস্তু পেলাম কই? ক্রমে বিশ্বাসের উপর বিশ্বাস হারালাম। পথ বলে কিছু আছে, কিছু হতে পারে… এ বিশ্বাসও তো হারালাম। তুমি বলছ তৃপ্তি পাব আমি? আসবে তৃষ্ণার জল?
সবাই পায়। শেষ অবধি যে বিশ্বাস টিকিয়ে রাখতে পারে। সে-ই পায়। ঘাত-প্রতিঘাতে বিশ্বাস হারানো তো খুব সোজা। ভেঙে পড়া, হতাশায় ডুবে যাওয়া সংশয়প্রবণ হয়ে পড়া। এ সবই স্বাভাবিক। কিন্তু শেষ অবধি দাঁতে দাঁত কামড়িয়ে পড়ে থাকাই আসল।
বিশ্বাস যদি অন্ধ হয়?
যে বিশ্বাসের জন্য প্রাণ থেকে “হায় হায়” শব্দ ওঠে না সে বিশ্বাস মৃত বিশ্বাস। সে শুধুই আবর্জনা। কানাই দাস বাউলের গান শুনেছ? অনাথবন্ধু ঘোষের গান? শুনেছ? দুজনেই তো অন্ধ। মানে বাইরে অন্ধ। দুটো চোখেই জাগতিক দৃষ্টি তো অন্ধকার। কিন্তু সে মানুষ দুজনের গানে এমন আনন্দধারা বয় কী করে? চোখে জল আসে কেন? কীসের যাদুতে তারা দুজন প্রাণে প্রবেশ করে? আলোড়িত করে? ভেবেছ? ভেবে উত্তর পাবে না। দেখো। দুজন মানুষের গানের মধ্যে ঢুকে দেখো। রাস্তা আছে। রাস্তা তখনই আছে, যখন ঘর অসহ্য হয়ে ওঠে। বিশ্বাস তখনই জ্বলন্ত হয়ে ওঠে যখন বুদ্ধি বিস্ময়ের পরিধি পেরিয়ে বলে, এরপর কী? তখন সে ঝাঁপ দেয়। নৌকায় আগুন লাগলে যে নদীতে ঝাঁপ দেয় সে বিশ্বাসী বলে না, সে মরিয়া বলে। মরিয়া যে বিশ্বাস নয়, সে বিশ্বাসই নয়। সে বুদ্ধির পঙ্গুত্ব বা ভীরুতা।
মরিয়া হওয়া মানে বিশ্বাসী হওয়া?
যাকে মরিয়া হয়ে ভালোবাসো, সে ভালোবাসার মধ্যেই তাকে পাওয়ার বিশ্বাস।
যদি তাও না পাই।
সে নাই পেতে পারো। কিন্তু তাই বলে বিশ্বাস হেরে গেল না। বাস্তব উপযুক্ত ছিল না। একদিন বাস্তব উপযুক্ত হয়। সেই অপেক্ষাটুকু নিয়েই তো গোটা জীবন! হেরে যাওয়া জিতে যাওয়া বোকার মত কথা। বাস্তবের সব ওঠাপড়া সহ্য করেও, তবু অজানা, অচেনা, অদেখাকে স্পর্শ করার স্পর্ধা! সেই তো সব। জীবন বলতে যে রসটুকু আছে।
(ছবি Debasish)