সৌরভ ভট্টাচার্য
23 June 2020
সুনীতিকুমার মহাশয়ের একটা লেখায় আছে, একবার শরৎচন্দ্র মহাশয় নরেনদেব ও রাধারাণীদেবীর সাথে অনেক রাতে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফিরছেন। হঠাৎ দেখেন একটা জটলা। এগিয়ে গিয়ে দেখেন একটা পোঁটলায় করে শিশু কেউ ফেলে গেছে। রক্ত মাখা সদ্যজাত পুরুষ শিশু।
শরৎচন্দ্র রাধারাণীদেবীকে বলেন তাড়াতাড়ি বাড়ি গিয়ে দুধ আর মধু আনতে। শরৎবাবু পাশের একটা মিষ্টির দোকান থেকে ফোন করলেন, হাস্পাতাল জানিয়ে দিল এ পুলিশ কেস, তারা আসবে না। থানাও প্রায় তেমনই জবাব দিয়েছিল, কিন্তু শরৎবাবুর পরিচয় পেয়ে আসতে রাজী হয়।
রাত অনেক গভীর হয়। বেশ রাতে পুলিশ আসে। এসেই তীব্র ভাষায় ভর্ৎসনা শুরু করেন। পুলিশের বড়বাবুর বক্তব্য হল এই নারীশিক্ষা আর নারীস্বাধীনতার ফলাফল এগুলো। এরকম আকছার কলকাতার রাস্তায় এখানে ওখানে সদ্যজাত ভ্রুণ পাওয়া যাচ্ছে। এই সব বলে পুলিশ শিশুটিকে নিয়ে চলে যায়।
পরেরদিন সুনীতিবাবু শরৎবাবুকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন, চিন্তিত। তিনি সেই আগের দিনের ফোনের পয়সা মেটাতে চান মিষ্টিওয়ালাকে। কিন্তু পুলিশের কথাগুলো ওনাকে গভীর যন্ত্রণায় ফেলেছে। তিনি সুনীতিবাবুকে জিজ্ঞাসা করেন সত্যিই কি আমরা ভুল দিকে এগোচ্ছি?
এ সংশয় অবশ্যই দীর্ঘদিন ওনার মনে ছিল না। কিন্তু আমাদের সমাজের এক বিরাট অংশ সেদিনও এরকম ভাবত, আজও যে খুব একটা বদলেছে তাও না। উদাহরণ একটু গভীরে তাকালেই পাওয়া যাবে।