সৌরভ ভট্টাচার্য
25 February 2018
একটা ছবি বেশ কয়েকবার দেখছি ফেসবুকে। ছবিটা শেয়ার করলাম না। একটা শিশু বন্দুকের নলের সামনে, ট্রিগার চেপার অপেক্ষায়। তারপর নাকি ট্রিগার দাবানো হয়েছিল।
ভীষণ দুর্বলচিত্ত মানুষ তো, এরকম কিছু হলে, দেখলেই একজন সর্বমঙ্গলময়, করুণাময় ঈশ্বরকে খুঁজি। যে সব কিছু ঠিক করে দেবে। দুষ্টুলোকগুলোকে ভ্যানিশ করে দেবে।
রাস্তায় চায়ের দোকানে চা নিতে এসেছে মাঝবয়েসী সুঠাম দেহ একজন লোক। বারবার বলছে, "মা রে চীনারা ঢুকে গেছে। আমি পুলিশ নিয়ে আসছি। মা গো তোর যে গয়না চুরি করেছে তাকে ধরেছি রে মা... কাঁদিস না"... বলতে বলতে তার চোখ ভিজছে। কে তার মা, জানি না। কি তার চুরি গেছে তাও জানি না। শুধু জানি মানুষটা পাগল হয়ে গেছে।
একজন ঈশ্বরকে ভীষণ খুঁজি এই সময়। ভীষণ। একা ছাদে আকাশের দিকে তাকিয়ে। সমুদ্রের অনন্ত জলরাশির দিকে তাকিয়ে। ভোরের সূর্যোদয়ে লাল আকাশের দিকে তাকিয়ে। বিছানায় একা শুয়ে নিজের মাথা-বুক খুঁড়ে। পাই না।
চারদিকে সমাজের পরিশ্রমী মানুষের অর্থপুষ্ট ঈশ্বরবিলাসীর দল। কেউ প্রকাশ্যে বিভেদের কথা বলছে, কেউ কৌশলে গোপনে ভেদের পাঁচিলে ইঙ্গিত করছে। ওরা-আমরা। ওদের ঈশ্বর-আমাদের ঈশ্বর/গড/আল্লাহ্ ইত্যাদি।
তবে আশা কি এক্কেবারে নেই? শুধু যে ধর্মের বিভেদ সেই তো নয়। রঙের বিভেদ। জাতির বিভেদ। দেশের বিভেদ। আরো কত কত...
দুর্বল হই। সব যুক্তি, শিক্ষা খড়কুটোর মতো ভেসে যায়। সর্বশক্তিমান, পরমকরুণাময়ের হদিস কই? নেই... নেই... নেই.... বুদ্ধিপ্রমাণ হাতড়িয়ে বলে। ইতিহাসের দলিল মুখের উপর ছুঁড়ে মেরে বলে, ওই নামে কেউ বেঁচে নেই।
হৃদয়? সে কখনও বিষণ্ণতার অতল গহ্বরে তলিয়ে, কখনও উদ্দীপনায় ভরপুর। পাগল হয়ে যাচ্ছে সে। সে যেন এইমাত্র গভীরের গভীরতম প্রদেশে কিছু পেয়েছে, লাফিয়ে উঠেছে। পরক্ষণেই হারিয়ে বালিতে মুখ গুঁজে পড়ে থেকেছে।
সংসারে সমুদ্রই যেন শেষ কথা তবে। নোনতা জলের অসীম সাগর। যত গভীরেই যাই নোনতা নোনতা আর নোনতা। আমার রক্ত আর অশ্রুর স্বাদের মত। ঈশ্বর যেন নোনতা সাগরের ঢেউ। নুনের ঢিপি। ঈশ্বর যেন নোনতা সাগরের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া সাদা একখণ্ড মেঘ। ঈশ্বর যেন নোনতা সাগরের বুকে দোলা অসীম নীল আকাশের প্রতিচ্ছবি। এই ক্ষণে মূর্ত, পরক্ষণেই লয়প্রাপ্ত।
বুদ্ধ জন্মেছিলেন। মারা গেছেন। বুদ্ধত্ব জন্মায় না। মারা যায় না। কিন্তু সে বুদ্ধত্ব অনুকম্পায়, না নির্বাণে? প্রথমটাকে শূন্য করে পরেরটার কি মূল্য?
অহিংসা - প্রভাতের সূর্য, না ধ্রুবতারা, না ধূমকেতু?
উত্তর দিতে আসবে আমার নোনতা ঈশ্বর