সৌরভ ভট্টাচার্য
31 January 2020
কিছু মানুষের সাথে রাস্তার মোড়ে দেখা হঠাৎ। তখন মাঝরাত, আকাশ ভর্তি ঘন কালো মেঘ। জটলা করে দাঁড়িয়ে আছে তারা। কি যেন উচ্চৈঃস্বরে বলে যাচ্ছে। কাছে গিয়ে শুনলাম, বলছে, আহা এমন আলোর ছটা আগে দেখেছিস ভাই...
সবাই সমস্বরে বলল, না, না,না।
আমি ঘাবড়ে গিয়ে ভাবলাম, কিসের আলোর কথা বলছে রে বাবা! বাইরে তো ঘুটঘুটে অন্ধকার! তবে কি অন্তরের আলোকের কথা বলছে? যা সাধ্বী-প্রাজ্ঞীর ভিড় চারদিকে।
আরো কাছে গেলাম, উঁহু, তা না তো। এরা তো বাইরের আলোর কথাই বলছে, কিন্তু বাইরে আলো কই? এমন কি তারার আলোও তো মেঘে ঢাকা।
জিজ্ঞাসা করলাম, কিসের আলো ভাই? কোন আলোর কথা বলছেন?
তারা সমস্বরে বলল, বাহ্, কানা নাকি, এত আলো চোখে পড়ছে না?
বললাম, না। কে লাগালো এত আলো?
তারা সমস্বরে বলল, কেন রাজা?
আমি বললাম, তা তোমরা সব কথাই সমস্বরে বলো বুঝি?
তারা বলল, হ্যাঁ, এই আমাদের ধর্ম, আমাদের সাধন।
অনেকক্ষণ ধরে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করলাম। বুঝলাম ওরা সত্যিই অন্ধ। প্রত্যেকে যে উলঙ্গ শরীরে দাঁড়িয়ে সে বোধও হয় তো নেই।
বললাম, তা তোমাদের এ পোশাক কে দিলে?
তারা আবার সমস্বরে বলে উঠল, রাজা...রাজা...রাজা...
তারপর সামনের ঘুটঘুটে অন্ধকারে আঙুল দেখিয়ে বলল, কতবড় বাজার দেখোনি, ওই দেখো বিদেশ থেকে কত মালের আমদানি, দেশ থেকে কত রপ্তানি হচ্ছে, ওই দেখো ক্ষেতে ফসলের ভারে ধরিত্রী কয়েক হাত নেমে গেছে পাতালে।
তারপর সামনের ঘুটঘুটে অন্ধকারে আঙুল দেখিয়ে বলল, কতবড় বাজার দেখোনি, ওই দেখো বিদেশ থেকে কত মালের আমদানি, দেশ থেকে কত রপ্তানি হচ্ছে, ওই দেখো ক্ষেতে ফসলের ভারে ধরিত্রী কয়েক হাত নেমে গেছে পাতালে।
আমি কিচ্ছু বললাম না। শেষে ওরাই সমস্বরে বলল, তবে তুমিই প্রমাণ করো এখন চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার।
আমি বললাম, বেশ, চোখের কথা বাদ দাও, কানের দিকে এসো। রাতের অন্ধকারে কারা ডাকে?
তারা সমস্বরে বলে উঠল, শৃগাল, প্যাঁচা....
আমি বললাম, শোনো এবার কান পেতে, কাদের আওয়াজ শুনছ? কারা যেন সেদিনের তিরিশে জানুয়ারির অমানুষটাকে আজ খুঁজে পেয়ে সম্বর্ধনা জানাতে চাইছে...কাজে নাকি তাদের ভীষণ মিল....সেদিনের বন্দুকধারী আজ নাকি আবার বন্দুক নিয়ে রাস্তায় নেমেছে..
বলতে না বলতেই হইচই বেধে গেল। তারা সমস্বরে কি যেন বলে উঠল, বুঝলাম না। চলে এলাম।