সমালোচক আর সংস্কারকের মধ্যে পার্থক্য আছে।
সমালোচককে পারফেক্ট হতে হয়। তর্ক নিপুণ হতে হয়। তথ্য জাহাজ হতে হয়।
সংস্কারকের দায় নেই পার্ফেক্ট হওয়ার। তার জিহ্বা অভিশাপমত্ত নয়। নিন্দায়, কষাঘাতে, তর্কে জিতে তার তৃপ্তি নেই।
কিন্তু সমালোচকের ছাড় অনেক বেশি। সে হিমালয়ের মেঘ ভাঙা বৃষ্টির সঙ্গে, বাড়ির ছাদ ফেটে জল পড়ার ক্ষতিকে এক অঙ্কে দেখতেই পারে, কারণ উভয়ক্ষেত্রেই জল নিন্মগামী। ক্ষতির কারণ।
সমালোচকের অহং থাকে। বুদ্ধি থাকে। শাণিত যুক্তি থাকে। হাততালির দাবী থাকে।
সংস্কারকের হৃদয় থাকে। যন্ত্রণা থাকে। দায় থাকে। বাস্তব বোধ আর বিবেকবোধের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার লড়াই থাকে।
হঠাৎ কেন বললাম? সিস্টার নিবেদিতার কথা মনে আছে? তার পাঁচখণ্ড রচনাবলী? যা প্রায় পাওয়াই যায় না। বই ছাড়ুন, যে মানুষটার উল্লেখই হয় না কোথাও আজ? সেই মানুষটাকে মনে আছে? ভারতবর্ষ নাম উচ্চারণ করতে করতে মারা গিয়েছিলেন। সারাদিন এত তর্কের মধ্যে এই নামটা খুঁজি, পাই না। সে মানুষটার আত্মদান, যে কারণে সে লোকমাতা, নিবেদিতা, সেই মানুষটি আমাদের মননে কোথায়? ভালো করে পড়ে দেখুন, এত বড় সতেজ প্রাণের স্পর্শ খুব কম পাওয়া যায়। এত তীক্ষ্ম মেধা আর এত সংবেদনশীল প্রাণ - বড় কম। কিন্তু সে নিবেদিত প্রাণ আজ বড় হেলায়। আমরা নীচু, সংকীর্ণ হওয়ার মধ্যে তুমুল বাস্তবতা পেয়েছি, মাথা তুলে দাঁড়াতে ঘাড়ে টাটায়। কাউকে দেখলাম বাড়ির সামনের নালা আর নদীর বাধাকে এক করে তর্ক জুড়েছে। তর্কের জন্যেই বাঁচা, তর্কের জন্যেই তর্ক। আসল বস্তু খোঁজার তাগিদ দেখি না যখন তখন বুঝি মাটির গন্ধের চাইতে, চায়ের ধোঁয়ায় টান বেশি।