আজ অনেকক্ষণ আমরা মাঠে কাটালাম। সে গরু দেখে "হাম্বা" বলে ধরতে যায়। সে মাঠের উপর হাঁটতে হাঁটতে খড়ের টুকরো মুখে পুরতে চায়। সে আকাশে ওড়া প্লেন দেখে 'ট্রেন' বলে ধরতে যায়। চলতে চলতে আমাদের গল্প হয়। যদিও আমাদের ভাষায় স্বরবর্ণেরই আধিক্যই বেশি। হাসিতে, চুমুতে, আদরেই আমাদের কাজ চলে যায়।
একটা শান্ত বিকেল। দূর দূরান্ত সবুজ আর নীলে মিশে। সূর্যাস্ত হব হব করছে। কয়েকজন মহিলা বসে একজোট হয়ে গল্প করছে। বয়স্ক পুরুষেরা আরেকটু দূরে নিজেদের গল্পে মশগুল। কিছু যুবক ক্রিকেট খেলছে। সবার মধ্যে শিশুদের নিজেদের মত করে হুড়োহুড়ি চলছে নিশ্চিন্তে। এত লোক আছে ভয় কি?
অথচ এই শৈশবই কি বিপন্ন হচ্ছে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরেই। আকাশে, বাতাসে বারুদের গন্ধ। শৈশবও রক্ষা পাচ্ছে না। তাদের সংখ্যাও গোনা হচ্ছে মৃতের তালিকায়। কি অসহ্য!
এ ভয়ংকর খেলা একদিন থেমে যাবে। যারা বেঁচে যাবে জানি না কি আস্থা নিয়ে সামনের দিনে তারা তাদের সন্তানকে এ পৃথিবীতে আনবে। আস্থা ছাড়া আর কি আশায় বাঁচে মানুষ? মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ। নিশ্চয়ই পাপ। তবে তার চাইতেও আরো ঘোরতর পাপ, সে পাপের দিকে দরজা খুলে দেয় যারা। যে সময়ে, সে নীতিতে, যে কাজের জন্য একটা শিশু নিজেকে বিপন্নবোধ করে, সে সময়, সে নীতি, সে কাজ মানুষের সভ্যতার ইতিহাসে আমার মনে হয় সব চাইতে বেশি অভিশপ্ত। আগে শিশু আর তার শৈশব সুরক্ষিত হোক, বাকি যা কিছু পরে গড়ে নেওয়া যাবে। না হয় আবার প্রথম থেকেই শুরু করা যাবে সব। শুধু এটুকুই নিশ্চিত করতে হবে, কোনো শিশু যেন বিপন্নতাবোধের শিকার না হয়।
সমাজ অথবা মানুষের কাছ থেকে আর কি চাওয়ার আছে? একটু ভদ্রতা, একটু সহমর্মিতা আর খানিক চলনসই শিক্ষা। এর বেশি আর কি চাই? সেটুকু দিতে পারব না আমরা? এত লোভ আমাদের?
(ছবি তুলেছে Prosenjit, আমার কোলে Debasish এর ছেলে আলেখ্য।)