মহিলাকে ক্লাবের ছেলেরা রাতে ডেকে নিয়ে যেত। ভোরে ছেড়ে দিত। উনি ভোরে আবার যে কটা বাড়ি কাজ করেন, পর পর করে বাড়ি ফিরতেন। স্বামী নেই। দুই মেয়ে, এক ছেলে। ছেলেটা বড়, কুড়ি বছর, বেকার। বড় মেয়েটা অন্যরকম। কেউ বলে পাগলী, কেউ বলে সাধিকা। তুমুল বৃষ্টির মধ্যেও বড় মেয়েটাকে প্যান্ট আর শার্ট পরে মাঠে ধ্যানে বসে থাকতে দেখেছে অনেকে। বেঁটে খাটো চেহারা, গায়ের রঙ মিশমিশে কালো, নেপালীদের মত চোখমুখ, পেটানো চেহারা, মাঠের মাঝখানে খোলা চুলের গোছা পিঠে এলিয়ে বসে আছে পদ্মাসনে। চোখ দুটো বন্ধ। বৃষ্টির মধ্যে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে সে।
ছেলেটা খুন হল। লাইনের পাশে কাটা মাথা পাওয়া গেল। শরীরটা দুদিন পরে একটা ডোবাতে পাওয়া গেল। কারা যেন ওকে তার আগের দিন রাতে ডাকতে এসেছিল। লোকে বলল, ড্রাগচক্রের সাথে জড়িয়ে গিয়েছিল। মহিলা তারপরের দিন রাতে নিজেই ক্লাবে গেলেন, কেউ ডাকতে আসার সাহস পাচ্ছিল না। ভোরে ফিরে এসে কাজের বাড়িগুলোতেও গেলেন। তার মাস খানেক পর তিনিও নিখোঁজ। কেউ বলল ওনাকে নাকি দিল্লীতে দেখেছে একটা জিন্সের প্যান্ট আর টিশার্ট পরে কুকুর নিয়ে রাস্তায় হাঁটছিলেন, কেউ বলল কাশীতে দেখা গেছে একটা বৃদ্ধাশ্রমে ঠিকে ঝির কাজ করছে। কেউ বলল বনগাঁতে পাগল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে নাকি রাস্তায় রাস্তায়।
ছোটো মেয়েটা কার সাথে পালালো। বড় মেয়েটার গান শুনতে পেলো মাঝরাতে অনেকে। কেউ বলল সে নাকি শ্যামাসঙ্গীত গায়। কেউ বলল, হিন্দী সিনেমার চটুল গান গায়। কেউ বলল ফিসফিস করে, ওর ঘরে নাকি পুরুষের কন্ঠ, মদের গন্ধের সাথে শীৎকার শোনা যায়। মেয়েটাকে কেউ কেউ রাতে ক্লাবঘরে যেতে দেখল। ভোরে ফিরে সে সেই সেই বাড়ি কাজে যেত যেখানে তার মা কাজ করত। বছর তিনেক পরে তার ‘পেট’ হল। লক্ষ্মীপূজোর দিন রাতে বমি করতে করতে মারা গেল। বাড়িতে না, হাস্পাতালে। ডাক্তার বলল বাচ্চা নষ্ট করার জন্য কি একটা বিষ খেয়েছিল। কেউ বলল ওর পেটে নাকি ছেলে ছিল, কেউ বলল না মেয়ে, কেউ বলল আরে না হিজড়া।
বস্তির ওই বড়িটায় এখন একজন বাউল থাকে। লোকে বলে সে নাকি ঈশ্বরের দর্শন পেয়েছে। তার ঘরের থেকে মাঝরাতে নাকি জ্যোতি দেখেছে কেউ কেউ। বস্তিতে মশা কমে গেল। যাদের পেটের রোগ ছিল তাদের অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা গেল। অনেক বাঁজা মহিলা মা ডাক শুনল।
তিন বছর পর ওখানে একটা বড় মন্দির হল। পাঁচ বছর পরে ওখানে একটা আশ্রম হল। সে নাকি বাউল নয়, সিদ্ধ পুরুষ। অনেকে বলে অবতার। অনেক ভিড় হয় উৎসবের দিনে। একদিন বিরাট হইচই। একটা পাগলী এসে মন্দিরের মধ্যে পায়খানা করে দিয়েছে। কেউ কেউ বলল, আরে এতো সেই... কেউ বলল, না তো... কেউ বলল, হবে হয়ত... আবার নাও হতে পারে...
পাগলীর মৃতদেহ ক্লাবের পিছনের ডোবায় পাওয়া গেল। কেউ বলল, মদ খেয়ে ডুবেছে, কেউ বলল মার্ডার, কেউ বলল প্রায়শ্চিত্ত।
এখন শুধু আশ্রম। ক্লাব। অবতার। নেতা। সাধারণ মানুষ আর ভগবান। সব পাপ ধুয়ে গেছে। তাই হয়, লোকে বলল, ঈশ্বর যুগে যুগে তাই কাউকে না কাউকে পাঠান।
সৌরভ ভট্টাচার্য
30 June 2018