টোটোর গায়ে শপিংমলের বিজ্ঞাপন বড় বড় বোর্ডে। মাইকে বেজে চলেছে রেকর্ড করা নারীকণ্ঠ। শাড়িতে, বাচ্চাদের জামাতে, জিন্সে.... কিসে কিসে কত ছাড়। কত টাকার জিনিস কিনলে কত টাকা ছাড়, কুপন পাওয়া যাবে। লটারি হবে… এইসব। মাঝে মাঝেই নারীকন্ঠ থেমে গিয়ে "স্পেস" দিচ্ছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে আর সুপ্রীতি ঘোষকে।
গলির মধ্যে মন্থরগতিতে এগিয়ে চলেছে শপিংমলের বিজ্ঞাপন। টোটোচালক মন্থর গতিতে চালাচ্ছে। পিছনের বাইক, অন্য টোটোওয়ালা, মায় সাইকেলওয়ালা পর্যন্ত বিরক্ত হচ্ছে। "আলোর বেণু" ছাপিয়ে বৈদ্যুতিক হর্ণ, ধাতব হর্ণে গলি মুখরিত হচ্ছে।
হঠাৎ টোটোওয়ালা ডানদিকে ঘুরে গেল। কেন? ওটা তো কানাগলি। মাত্র দশবারোটা টালির বাড়ি। তারপর ময়লা ফেলার মাঠ। সেই গলিতে গাঁক গাঁক করতে করতে কেন ঢুকল টোটোওয়ালা, এমন রাজকীয় শপিংমল, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ, সুপ্রীতিকে নিয়ে?
চারটে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে একটা বাচ্চা মেয়ে। লাল ফ্রক। আট নয় বছর বয়েস হবে। টোটোটাকে দেখেই দু’হাতে তালি দিয়ে পাশের বৃদ্ধাকে বলল, ঠাকুমা, বাবা!
টোটোওয়ালা টোটো দাঁড় করালো। সিটের পাশ থেকে একটা প্যাকেট আর দুটো প্লাস্টিকের বই হাতে নিয়ে বাচ্চাটার হাতে দিল। মাইকে তখন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ চণ্ডীপাঠ করছে। বাচ্চাটা বইদুটো ঠাকুমার হাতে দিয়ে প্যাকেটটা ছিঁড়ে লাল একটা ফ্রক বার করে বাবার দিকে তাকালো... এত্তো উজ্জ্বল হাসি নাসার সুপারমুনেও ধরা পড়েনি কোনোদিন। আমি হলফ করে বলতে পারি।
টোটোওয়ালা এবার কানাগলি থেকে বেরোবে। টোটোটা ঘোরাতে সময় লাগবে। আমি যাই।
আমার রাস্তায় যেতে যেতে মনে হল, মেয়েটার কি মা নেই? জানি না। তবু মনে হল। আশ্বিনের আকাশে শ্রাবণ জমুক, এতদিন এত প্যাণ্ডেল, এত বিজ্ঞাপন এসব কোনো কিছু দেখেই মনে হয়নি পুজো আসছে। আজ মনে হল। এইমাত্র মনে হল। পাঁজরে এসে আলতো করে বসল একটা ফড়িং যেন। স্বর্গ থেকে নেমে। সবুজ ফড়িং। বাবা গলিতে গলিতে ফিরুক। বড় রাস্তায় তো বড় গাড়ির বিজ্ঞাপন। মানুষ কি চায়? আগলে রাখতে চায়। তাই দুর্গার দশ হাত কেন, সহস্র হাতেও আমাদের আপত্তি নেই। হাত ছাড়া আগলাবে কে?
মা এসো। আগলে রাখো। বেশি তো না। অল্প কিছু সুখ আগলে রেখো, যেমন মাসের শেষে কৌটোর তলানিতে এসে পড়ে থাকে চাল, ডাল, নুন, তেল…. অতটুকুই সুখ আগলে রেখো। শুধু দেখো শূন্য না হয় যেন।