Skip to main content

- বলো তো শালিখের ঠোঁট হলুদ কেন হয়?

- কেন?

- গু খায় বলে...

- তোকে বলেছে

- আরে সত্যি... আমি জানি...

- কে বলেছে?

- আমি এমনি এমনিই জানি...

- বুঝলাম... কিন্তু ভুল জানিস... শালিখের ঠোঁট এমনিই হলুদ...

- আচ্ছা তবে কাকের ঠোঁট কালো কেন হয়?

- তারও কি কিছু কারণ আছে নাকি?

- আছে তো...

- কি?

- কারণ কাকের গায়ের রঙ কালো... তাই ম্যাচ করে ও ওর ঠোঁটটা কালো করেছে...

- কি খাসা বুদ্ধি রে তোর...

- কেন তুমি মাকে দেখোনি... কেমন শাড়ির রঙের সঙ্গে ম্যাচ করে ঠোঁটে লিপস্টিক দেয়...

তাই কাকও দেয়?

-হুম... কিন্তু কাক তো শাড়ি পরতে পায় না বলো... তাই অমনি ওর গায়ের মত রঙ করে ঠোঁটটা ম্যাচিং করে নিয়েছে...

- আচ্ছা টিয়াপাখির ঠোঁট লাল কেন তবে?

- দাঁড়াও এটা ভাবিনি... ভেবে বলছি... তার আগে তুমি বলো কালি ঠাকুরের ভুরূ কেন লাল হয়?

- হুম... এটাও ভাবার কথা... আগে টিয়াটা ভেবে বল...

- টিয়াপাখি তো রক্ত খায় না... কালী ঠাকুর খায়...

- আচ্ছা কালী ঠাকুর রক্ত কেন খায়... কালী ঠাকুরের ভিটামিন কম বলে?... করোনার জন্য..?

- আবার কি সব বলে... উফ্... কালী ঠাকুর রক্ত কেন খায় আমি জানি না... কিন্তু করোনার জন্যে হবে কেন... কালী ঠাকুর তো কত পুরোনো... তখন করোনা ছিল নাকি...

- তবে? কালী ঠাকুরকে কেউ বারণ করেনি কেন?

- এখন আর অত খায় না...

- তোমায় বলেছে... আমার মামাবাড়ির পুজোতে এখনও বলি হয়... কি রক্ত... আমার ভাল্লাগে না... তোমার ভালো লাগে?

- না, ওকি কারোর ভালো লাগে?

- আমার ছোটোমামার তো লাগে... মামা রাত জেগে দেখে এসে দিদুনকে গল্প বলছিল যে... জানো মা... কি রক্ত... কি রক্ত... সে যেন নদীর মত...

- তুই কি করছিলি?

- আমি দিদুনের কোলে শুয়ে ছিলাম... দিদুন ভেবেছিল আমি বুঝি ঘুমিয়ে পড়েছি... কিন্তু আমি তো ঘুমাই নি... আমার শুনে কি ভয় করছিল... আমার কালী ঠাকুর দেখলেই ভয় করে...

- হুম... অন্য কথা বল... কেন তবে টিয়াপাখির ঠোঁটের রঙ লাল হল... লাল লঙ্কা খায় বলে?

- হে... হে... হো... হো... এ তো তুমি আমার মত কথা বলছ এখন... আমি তো তাই বললাম... কেন শালিখের ঠোঁট হলুদ... ওইসব খায় বলেই তো... হা হা হা... হো হো...

- বেশ বেশ... এটা তবে ঠিক কারণ হল না... তবে কেন বল তো?

- আমার মনে হ... আমার মনে হয়... ওটার কোনো কারণ নেই... এমনি এমনি... এই যেমন তুমি কালো... আমি ফর্সা... সে তো এমনি এমনিই বলো...

- ঠিক এমনি এমনি না... এর জন্য একটা বিজ্ঞান আছে সে পরে বুঝবি... তবে এটা ঠিক যে মানুষের গায়ের রঙ...খাবার পছন্দ... জামার রঙের পছন্দ... নানারকম খেলার পছন্দ... সব আলাদা আলাদা হয়... সেগুলোর কিন্তু কোনো কারণ নেই জানিস... সব এমনি এমনিই...

- জানি...আমার যেমন ধরো ঝাল ভালো লাগে... কিন্তু টুবু'র আবার মিষ্টি...

- টুবু?

- সোনাই আন্টির মেয়ে... আমার সঙ্গেই পড়ে...

- আচ্ছা

- আবার ধরো আমার যেমন খেলা অত ভালো লাগে না... প্রসূনের আবার খেলা খুব প্রিয়...

- প্রসূন? তোর বয়ফ্রেণ্ড?

- উফ্... চুপ করো...

- আচ্ছা বেশ... হুম... এগুলো কিন্তু সব এমনি এমনিই... এর মানে এই নয় যে তোর পছন্দটাকে কেউ খারাপ বলছে... আসলে এই যে গাছপালা... পশুপাখি.. এত এত রকম যে এরা সবই... সবই এমনি এমনিই... যদিও এগুলো কেন হল বলা যায়... তবে কিসের জন্য হল বলা যায় না...

- মানে?

- মানে যেমন ধর... তুই তো ঝাল ঝাল ঘুগনি খেতে ভালোবাসিস... সেই ঘুগনি কি করে বানাতে হয় সেটা বলা যায়... কি করে ঝাল হল তাও বলা যায়... কিন্তু কেন তোর ঝালটাই ভালো লাগে সেটা বলা যায় না... আমাদের তাই উচিৎ সবার ভালোলাগা, অন্যরকম হওয়াটাকে নিয়ে মজা না করা... বা রাগ না করা... বা এরকম ভাবাও ঠিক নয় যে ওরা আমাদের ভালো লাগাটাকে পছন্দ করছে না বলেই ওরা অন্যরকম হচ্ছে... আসলে এ সবই এমনি এমনিই... বুঝলি?

- বুঝলাম... তুমি কি আজই চলে যাবে?

- কেন রে?

- না, মা হয় তো কেক বানাতে পারে... বড়দিনের জন্য... থাকবে?

- দেখি থাকা যায় কিনা...

- আচ্ছা বড়দিন মানে তো যীশুর জন্মদিন... মানে ওরা খ্রীষ্টান... আমরা হিন্দু... ফরজানারা মুসলমান... এগুলোও কি এমনি এমনিই..?

- ঠিক তেমন না... তবে যে যে ফ্যামিলিতে জন্মেছে... সে সেই ধর্মই মানে...

- কিন্তু আমার তো যীশুর গল্প শুনতে ভালো লাগে...

- আমারও তো লাগে...

- তার মানে কি তুমি আর আমি খ্রীষ্টান?...

- না, খ্রীষ্টান হতে গেলে অনেক নিয়ম মানতে হয়... ওরা যেগুলো মানে...

- হুম... আমাদের যেমন অনেক নিয়ম আছে... এই নিয়মগুলো কে বানিয়েছে? আর সবাই কি করে জেনে যায় তাকে এগুলো এগুলো করতে হবে?

- কে বানিয়েছে সে জানি না আমরা... তবে অনেক শতাব্দী ধরে চলে আসছে... তাই সবাই জেনে যায়...

- যীশু রক্ত খায় না, না?

- না, যেমন কৃষ্ণ, রামের পুজোয় বলি হয় না...

- হুম... ওরা কীর্তন করে... প্রদীপের ঠাকুর্দা একবার আমার কপালে চন্দনের তিলক এঁকে দিয়েছিল... আমায় ডাকে রাধারাণী বলে... মা বলে, ওরা নাকি বৈষ্ণব... আচ্ছা বৈষ্ণব খ্রীষ্টান হয়?

- হো হো হো... ধুর... তাই হয় নাকি?...

- হেসো না... আচ্ছা তুমি কি?

- আমি কিছু না...

- মানে... কেন কিছু না?

- এমনি এমনিই...

- সেও হয় নাকি?

- হ্যাঁ সেও হয়... যেমন ধর, আমরা যদি বাড়িতে সবাই মিলে একে অন্যের সঙ্গে রাতদিন ঝগড়া করি... তবে দিদু দাদুর ভালো লাগবে?

- না...একবার ছোটোমামা বড়মামার সঙ্গে ঝগড়া করেছিল বলে দিদুন কি কাঁদছিল না? বারবার বলছিল আমায় কাশী রেখে চলে আয়... আর আমার এ সংসার ভালো লাগছে না... আমিও দিদুনের সঙ্গে কেঁদেছিলাম জানো...

- হুম... কত কষ্টের না?

- হুম তো...

- তবেই ভাব... যদি এই পৃথিবীর কেউ একজন দিদুন বা দাদু থাকে... বা বাবা-মা থাকে... তবে রাতদিন আমরা যদি ঝগড়া করি... এর ওর নিন্দা করি... সেকি ভালো?

- না তো...

- তাই সব চাইতে বড় কথা হল... অন্যের নিন্দা না করা... সে তুই বৈষ্ণব হোস... কি খ্রীষ্টান হোস... কি মুসলমান হোস... কি বৌদ্ধ হোস... যা খুশী হ না কেন... মূল কথা হল নিন্দা করলেই পৃথিবীর দিদুন কাঁদে... কষ্ট পায়...

- হুম... ওই দেখো...

- কি?

- কেন্নো... আচ্ছা কেন্নো বেশি লাল না টিয়ার ঠোঁট বেশি লাল বলো তো?

- টিয়া...

- আমারও তাই মনে হয়... তবে লালও কতরকম বলো... সব এমনি এমনিই...।