আজ রাধাকৃষ্ণানজীর জন্মদিন। শিক্ষক দিবস। এ কথা গত বছরও এই দিনটাতে লিখেছিলাম যে, যাঁর জন্মদিনটাকে শিক্ষক দিবস হিসাবে পালন হয়, তাঁর লেখা আমাদের সিলেবাসে এত ব্রাত্য কেন?
The present crisis of faith বইটার কথা হয়তো আমি আগেও উল্লেখ করেছি, মনে পড়ছে না। বর্তমান যুগের অস্থিরতা, লক্ষ্যবিহীন তীব্র জীবনযাত্রার গতি, বিভ্রান্তির মধ্যে দাঁড়িয়ে এ বইটি আজও মহামূল্যবান রত্ন বলে মনে হয়। ধর্ম ও বিজ্ঞান, শিক্ষা ও চরিত্রগঠন, দর্শন ও সাহিত্যের চমৎকার আলোচনার সমাহার বইটা। আমি উক্তি সঞ্চয়ন করলাম না, তাতে দীর্ঘ হবে, তাছাড়া ইন্টারনেটের যুগে উক্তি সঞ্চয়ন খুব বড় সমস্যাও নয় কিছু।
শিক্ষার মূল উদ্দ্যেশ্য বারবার বলছেন চরিত্রগঠন। দুর্বল চরিত্র দ্বারা একটা জাতি কিছুতেই বড় হতে পারে না, এ কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে পৃথকভাবে দেখে, বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের অন্বেষণে আহ্বান জানাচ্ছেন।
ধর্মকে ব্রাত্য করছেন না। অন্যান্য বহু মনীষীর মতই তাঁর মতেও শুদ্ধ ধর্মের পরিভাষা, মনুষ্যত্বের গভীর উপলব্ধি। চেতনার শুদ্ধিকরণ। তখনই সে বিজ্ঞানকে প্রযুক্তির সাথে সঠিক পথে চালনা করতে পারবে। তখনই তার রাজনীতি, ধর্মনীতি সত্য অর্থে সহিষ্ণুতার সাথে সহাবস্থান করবে। সামগ্রিকভাবে একটা জাতি প্রগতির পথে এগোবে। পুরোনোকে মাড়িয়ে, ধুলিসাৎ করে না, তার সাথে সামঞ্জস্য রচনা করে। নম্রতার সাথে দৃপ্ততার সাথে এগোবার কথা বলছেন। কিছুকে বাদ দিয়ে নয়, সামগ্রিকতাতেই একটা দেশের আত্যন্তিক মঙ্গল, বিভেদীকরণে না।
তাঁর শিক্ষানীতিতেও একটা আন্তর্জাতিক মাত্রা দেখেছি। তাঁর বিশ্ববিখ্যাত বই, Indian Philosophy তে একদম শেষ অংশে বলছেন, যখনই ভারত বিশ্বের দিকে তার বাতায়ন মুক্ত করেছে, জ্ঞানের মুক্ত প্রবাহ আদান-প্রদানের সহজ গতিপথ পেয়েছে, তখনই জ্ঞানের, মননের স্বাস্থ্য বিকশিত হয়েছে, উন্মোচিত হয়েছে চেতনার অনেক অবরুদ্ধ দ্বার।
এ অতি ক্ষুদ্র পরিসরে, আর দীর্ঘ আলোচনায় না গিয়ে, ওনার একটি উপদেশেই সমাপন টানি-
"My advice to the young men and women : Mother India expects of you that your lives should be clean, noble and dedicated to selfless work"