Skip to main content

ফেসবুকে অনিয়মিত, কারণ চোখের একটা ইনফেকশন। পড়তে লিখতে বেশ অসুবিধা। ডাক্তার বলেছেন, সময় লাগবে ঠিক হতে।
       কিন্তু এ কথাটা না লিখলেও হত, আমি এমন কোনো হনু নই যে আমার অনুপস্থিতির নোটিশ টাঙিয়ে রাখতে হবে। তবু লিখলাম কারণ এমন কিছু ঘটনা ঘটে চলেছে, আমার নীরবতা লজ্জা দিচ্ছে আমায়। অপারগতা অজুহাত বোধ হচ্ছে।
       উন্নাও যা ঘটিয়েছে, একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে লজ্জা, অসহায়তা, হতাশায় বিপন্ন বোধ হচ্ছে। মনে হচ্ছে যে রাষ্ট্র সুরক্ষা দিতে জানে না, সে রাষ্ট্র অত্যাবশ্যক আগ্নেয়াস্ত্র রাখার নির্দেশ এখনও কেন দিচ্ছে না প্রতিটা মেয়েকে? কেন মার্শাল আর্ট বাধ্যতামূলক হচ্ছে না প্রতিটা স্কুলে? এসব সমাধানের পথ নয়। ঠেকিয়ে রাখার উপায় হয় তো। আমায় যদি মেনে নিতেই হয় আমি একটা বর্বর সভ্যতায় বেঁচে আছি তবে আমায় আত্মরক্ষার দায় তো নিজেকেই নিতে হবে না?
       ভারতীয় সভ্যতায় বস্ত্রহরণে নানা অজুহাতে নিশ্চুপ থাকার দৃষ্টান্ত তো আছেই। দৈব সহায় হয়েছিল সে উপাখ্যান। কিন্তু দৈব নিজেই যখন রাজতন্ত্রের মুখাপেক্ষী আজ আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য, সুদর্শন চক্র যখন সত্যিই বন্ধক দেওয়া, তখন আগ্নেয়াস্ত্র থাকুক না প্রতিটা ব্যাগে। কয়েকটা ভুল গুলিও না হয় চলুক। সেই আদিকাল থেকে সতীদাহ ইত্যাদি নানা বিধানে যখন অনেক নিরপরাধ প্রাণের হত্যায় কোনো মহাভারত দূষিত হয়নি, আজও হবে না।
       কিন্তু দোহাই, কোনোরকম এনকাউন্টারের দিকে তাকিয়ে থাকার সাধ নেই, ওতে শিয়াল মরে, বাঘ না। শিকার নিজেই নিজের ব্যবস্থা নিক বধ হওয়ার আগেই। যদি না পারে তবে না হয় কোর্ট আদালত তো রইলই। আগে আংটিতে বিষ থাকত না? থাকত তো। সে বিষে শিকারী যদি অবধ্য হয় তবে আত্মহননের পথ তো থাকলই। অন্তত অসম্মানের মৃত্যুর হাত থেকে তো বাঁচা যাবে! তাও যে ঘটেনি তা নয়? ট্রেন থেকে ঝাঁপ, বহুতল বাড়ি থেকে ঝাঁপ নিজের মান রক্ষার্থে মেয়েরা দিচ্ছে তো। আমরা পড়ে পরের খবরে যাচ্ছি কারণ আমাদের কাছে ওটা ততটা বর্বরোচিত নয় তো।
       আমাদের নানা বাণিজ্যিক সিনেমার গানে, নানা সংস্কারযুক্ত সিরিয়ালে, সব ধর্মীয় তত্ত্বে এরপরেও মেয়েদের যে অবস্থান চিত্রিত হয়, বর্ণিত হয় - এ সব আমাদের সংস্কৃতির আচ্ছাদনে ঢেকে শ্রদ্ধায় ভালোবাসায় মাথায় তুলে গড্ডালিকা প্রবাহে দিনযাপন করা তো আমাদের জন্মগত অধিকার।
       সুরক্ষা? সম্মান? সচেতনতা?
       এসব কি? আমরা হইহই করে ফুঁসতে জানি, তারপর নাক ডাকিয়ে ঘুমাতেও জানি। আমরা ভাবি না। আমরা প্রতিক্রিয়া দিই। আমরা মূলের অব্যবস্থাকে, অসাম‍্যকে সাদরে নিত্য জীবনে গ্রহণ করে হঠাৎ করে কোনো একদিন ভীষণ চেঁচামেচি শোরগোল তুলে ভাবি সব সমাধান অমন হঠাৎ করে বলিউডিও না হলিউডিও ভঙ্গীতে হয়ে যাবে।
       আমরা প্রশ্ন করব না, মেয়েটা এত কিছুর পরেও কেন অসুরক্ষিতভাবে স্টেশনে অপেক্ষা করছিল? সুরক্ষা আসলে কে দেবে? রাষ্ট্র? নীতি? দৈব? সেই তথ্যচিত্রটা যারা দেখেছেন তারাই জানেন, আসলে বিষটা কত গভীরে। কতটা গভীরে। আমি নির্ভয়ার উপর তথ্যচিত্রটার কথা বলছি। রাস্তা অনেকটা বাকি। হাঁটতে হবে। মিছিলের দিকে না তাকিয়ে বসে থেকে।