একটা সহস্রতলা শপিংমল তৈরি করা হচ্ছিল। সবার কাজ ভাগ করে করে দেওয়া হচ্ছিল। অনেকে থাকবে বাইরে, তারা বাইরে থেকে শপিংমলের যোগানদার হবে। তাদের শপিংমলের উঁচু থেকে খাবার ছুঁড়ে দেওয়া হবে। আর বাদবাকিরা থাকবে ভিতরে। এক একজন এক এক তলায়। সামর্থ্য অনুযায়ী। সবাইকে একটাই জিনিস দিতে হবে, জীবন। আর জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে বাদবাকি যা কিছু। যেমন সততা, আনন্দ, মিলেমিশে থাকার প্রবৃত্তি। আর এ সব ছাপিয়ে সময়। জীবনের গোটা সময়টাই দিয়ে দিতে হবে প্রায় এই শপিংমলে থাকতে গেলে। তবে পাওয়া যাবে অধিকার।
সবই ঠিক হচ্ছিল। এগোচ্ছিল। শয়ে শয়ে লোক যোগও দিচ্ছিল। প্রায় সবাই ঢুকে যাচ্ছিল শপিংমলে। এমনকি এই শপিংমলের বাইরে একটা পাগলাগারদও বানানো হচ্ছিল। যেখানে এই তত্ত্বের বিরোধীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছিল।
আহা, সে শপিংমলের কি সাজ। আকাশের মত দেওয়াল, ছাদ। সমুদ্র, জঙ্গলের মত মেঝে আসবাব। কে বলবে ওসব নকল। নকলকে আসল করা আর আসলকে নকল করাই তো হল আধুনিকোত্তর যুগের শিক্ষা। এই স্লোগানে শপিংমলের মধ্যেই ইস্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় খুলে যাচ্ছিল। এমনকি ঈশ্বরকেও শপিংমলের নীরব সদস্য বানিয়ে, তাঁকে অনেক কিছু পাইয়ে দেওয়ার জন্য কিছু গুরুও বানানো হয়েছিল। সবই প্ল্যানমাফিক হয়ে যাচ্ছিল।
হঠাৎ খবর এলো ঘুণ ধরেছে। কোথায়? কোথায়? সবাই বলল এক্কেবারে ভিত নাড়িয়ে দিচ্ছে কি এক জীবাণু! ব্যস শপিংমল জুড়ে এখন শুধুই অব্যবস্থা। এই সব যেন ঠিক হল, আবার হুড়মুড় করে সব ভেঙে পড়তে শুরু করল। এ বলে তোর দোষ। সে বলে তোর দোষ। এই তুমি-আমি করতে করতে ঘুণ আরো ছড়িয়ে গেল। কিন্তু কেউ কোথায় গোলমাল হল বুঝতে পারছে না। শপিংমলের বাইরে ভিতরে শুধু মৃতদেহের সারি। জমছে তো জমছেই। এখন সে নিয়েও চলছে তর্জা। কোন তলায় জমল কত মৃতশরীর। ঘুণপোকাদের সেদিকে কান নেই। তারা শুধু কেটেই যাচ্ছে। কেটেই যাচ্ছে। কেটেই যাচ্ছে।