সৌরভ ভট্টাচার্য
1 October 2014
১
-----
শিমুল গাছটা রাস্তার ধারে একাই ছিল
তার পাশে ছিল একটা মাঠ
আর চারদিক ঘিরে উঁচু উঁচু ফ্ল্যাট।
সে দিন মাঠে বসল একটা ইয়াব্বড়ো
মোবাইল টাওয়ার।
শিমুল ডালপালা মেলে দেখল
কিন্তু বুঝতে পারল না, কে এটা?
মোবাইল টাওয়ারের উপর বসা কাক
শিমুলের উপরেও এসে বসে।
সে তাদের জানতে চায়-
" হ্যাঁ রে ও কথা বলে? খায় দায়?
দোলে? গান গায়?"
কাকেরা সমস্বরে বলে,
"না গো না, না না...."
বসন্তকাল। একদিন বিকালে শিমুল কিছু
তুলো উড়িয়ে দিল টাওয়ারের দিকে।
টাওয়ার তাকালো শিমুলের দিকে
আকাশের থেকে চোখ নামিয়ে।
শিমুল বলল, "সারাদিন কি দেখো চেয়ে
আকাশের দিকে?"
টাওয়ার বলল,"তরঙ্গ।তুমি কি করো সারাদিন?"
শিমুল বলল,"কিছু না, বেঁচে থাকি"
টাওয়ার বলল,"সে কিরকম? কাজ করো না?"
শিমুল বলল, "করিতো, মুল থেকে জল তুলি, খাবার বানাই, বাঁচার অক্সিজেন দিই,
পাখিদের সাথে খেলি, হাওয়ার সাথে নাচি, ভ্রমরের সাথে গান গাই.. আরো কত কি!"
টাওয়ারের মুখটা ম্লান হল।
সে বলল, "আমি শুধু তরঙ্গ খুঁজি। তুমি এগুলো কি পাঠালে আমার গায়ে?"
শিমুল হেসে বলল, "তুলোয় ভরে তরঙ্গ, বন্ধুত্বের!"
টাওয়ারের মুখটা উজ্জ্বল হল।
এভাবে বন্ধুত্ব হল দুজনের।
কাক শালিক দোয়েল ফিঙে
সবার সাথে বন্ধুত্ব হল টাওয়ারের,
তারা কখনো গাছে বসে
আবার কখনো টাওয়ারে।
আনন্দে ভরে উঠল দিনগুলো।
২
-----
বর্ষা কাল। মাঝরাত
তুমুল ঝড় বাজ বৃষ্টি
হঠাৎ একটা বাজ আছড়ে পড়ল শিমুলের উপর।
টাওয়ার কিছু বুঝলনা।
পরেরদিন সকালে টাওয়ার দেখল
শিমুলের পাতা গুলো ঝলসানো হলুদ
তার গায়ের রঙ হয়েছে কালো।
সে ডাকল অনেকবার,
শিমুল সাড়া দিল না।
সে আবার ডাকল,
দুদিন, তিন দিন ধরে ডাকল।
শিমুল নিরুত্তর।
সে কাককে জিজ্ঞাসা করল
" কি হল ওর? সাড়া দিচ্ছে না কেন?"
কাক বলল, "ও মারা গেছে যে!"
টাওয়ার বলল, "মারা গেছে? সেটা কি?
ও আর সাড়া দেবে না?"
কাক বলল, "না, ও আর খাবে না, নড়বে না, গান
গাইবে না, দুলবে না.."
বলতে বলতে কাকটা উড়ে গেল।
টাওয়ার তাকিয়ে থাকল
কিছুক্ষণ মৃত শিমুলের দিকে।
বছর গেল।
টাওয়ারের পরিদর্শকেরা এসে দেখল
টাওয়ারের গোড়ায় ধরেছে জং।
(ছবিঃ সুমন দাস)