ছোটোবেলায় ঠাকুমার সঙ্গে ভাগবতপাঠ শুনতে যেতাম। তো সেখানে একটা গপ্পো আমার খুব মনে ধরেছিল। কৃষ্ণ নাকি কখনও কারো দোষবর্ণন করতেন না।
তো একবার উদ্ধব আর তিনি বেড়াতে বেরিয়েছেন। রাস্তায় পড়ল এক অতি কদর্য, বীভৎস সারমেয়। উদ্ধব ভাবলেন, এই সুযোগ, দেখি এর কি গুণ বর্ণনা করেন কৃষ্ণ। উদ্ধব বললেন, সখা এই যে সারমেয়, এর কি কোনো গুণ তোমার চোখে পড়ছে? এর সারা গায়ে ঘা, কানে, চোখে ঘা, পাগুলোয় ঘা, সারা শরীর জুড়ে পোকা ঘুরে বেড়াচ্ছে। কি এর মধ্যে ভালো তুমি দেখছ?
কৃষ্ণ সারমেয়টার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, উদ্ধব, তুমি ওর দাঁতগুলো দেখছ না, কি সাদা আর কি চমৎকার!
রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, নরকেও সৌন্দর্য আছে কিন্তু নরকবাসীর তা চোখে পড়ে না, এই তাদের অভিশাপ।
তো গুরুবাক্য, ব্যাসবাক্য ইত্যাদি অ্যাদ্দিন শুনে আসছিলাম, কিন্তু চাক্ষুষ করার সুযোগ এই অ্যাদ্দিনে হল।
সেই গুহাচিত্র থেকে আধুনিককালের পিকাসো, নন্দলাল অবধি কত কত শিল্পীর ছবি আমরা দেখলাম। কিন্তু জগতে টিকটিকির বাহ্যের যে কি সৌন্দর্য, মাধুর্য এঁদের কারোর চোখে পড়েছে?
তো আমায় শিল্পী নিজে দেখিয়ে বললেন, এই হল টিকটিকি আর এই হল গিয়ে টিকটিকির গু!
আমি তো থ! টিকটিকির গু মারাত্মক বিষাক্ত, ক্ষতিকর এই জেনে এসেছি, এবং সে সত্যও বটে। কিন্তু কি একপেশে সে জানা! তার মধ্যে যে এমন নান্দনিক দিক লুকিয়ে, আহা! চোখে পড়ল না আমার! অমন কৃষ্ণবর্ণের পরেই যে এক বিন্দু শ্বেতশুভ্র বিন্দু টিকটিকি আপন দেহ হতে নিষ্কাশন করে থাকে, তার এমন একটি গভীর ব্যঞ্জনা আমার বোধে ধরা পড়েনি? জগত তো সাদায় কালোয় মিশে!
অহো, ধন্য আয়ুষ্মান! কি গভীর জ্ঞান, দর্শনের তুমি এই অধম মামার চিত্তে প্রকাশ ঘটালে। জগদম্বার পায়ে এই প্রার্থনা অতিসাধারণ হয়ে জীবন অতিবাহিত করার অধিকার থেকে তিনি যেন আমায় বঞ্চিত না করেন। টিকটিকির গু কে অগ্রাহ্য করে এই যে আকাশ পাতাল দার্শনিক চিন্তা, এর কোনো মানে হয়?! যেখানে দেওয়ালে, মেঝেতে রাতদিন টিকটিকি আমাদের বুঝিয়ে চলেছে জীবন মানেই সাদাকালো.. বুঝো মানব বুঝো....
শিল্পীর নিবাস আড়ংঘাটা। পিতামাতা হলেন, Amiya ও Smrity Sil Biswas,আমার পরম আত্মীয়স্বরূপ।